মঙ্গলবার, ১৬ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

থামছেই না সাধারণ রোগীদের ছোটাছুটি

ভোগান্তি বেশি হচ্ছে শিশুদের

গোলাম রাব্বানী

থামছেই না সাধারণ রোগীদের ছোটাছুটি

অ্যাম্বুলেন্স মেলেনি। সিএনজি অটোরিকশায় যেতে হচ্ছে রোগীকে -বাংলাদেশ প্রতিদিন

গাছ থেকে পড়ে মাথায় আঘাত পান কুমিল্লার মেজবাহ উদ্দিন। মাথার ব্যথায় কাতরাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু কুমিল্লার বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরেও ভর্তি হতে পারেননি। চিকিৎসা পাওয়ার আশায় অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় আসেন তার স্ত্রী। চিকিৎসার জন্য যান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু সেই ঢাকা মেডিকেলে এসেও কোনো লাভ হয়নি। তাকে ভর্তি করাতে পারেননি স্ত্রী। মেলেনি চিকিৎসাও। পরে অন্য কোনো হাসপাতালে আর চেষ্টা না করে অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে আবারও ফিরে গেছেন নিজ বাড়ি কুমিল্লায়। ছোট শিশু জান্নাতুল ফেরদৌসের টিউমার হয়েছে। এ অবস্থায় তাকে কয়েকদিন আগে ঢাকা শিশু হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু তারা ডাক্তার পাননি। মাঝে মাঝে নার্স এলেও তারা তেমন সেবা দিতেন না। ক্যানোলা লাগাতেও ঘুরতে হয়েছে নার্সদের পিছে পিছে। কিন্তু টিউমারের চিকিৎসা শেষ না হতেই এই শিশু ওখানেই করোনায় আক্রান্ত হন। গত রবিবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ঢাকা মেডিকেলে স্থানান্তরের কথা বলে। এই শিশুর বাবা আবারও তাকে নিয়ে ভর্তির জন্য ছোটাছুটি করতে থাকেন। পরে অনেক কষ্টে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করেন। গতকাল জান্নাতুল ফেরদৌসের বাবা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে আমার মেয়েকে ভর্তি করেও কোনো লাভ হয়নি। চিকিৎসা নেই বললেই চলে। ডাক্তার তো নেই। একটা ক্যানোলা লাগানোর জন্য নার্সদের পিছে পিছে ঘুরতে হয়েছে। তিনি বলেন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ৮০ ভাগ শিশুই চিকিৎসা পাচ্ছে না। গত রবিবার চিকিৎসা না পেয়ে অ্যাম্বুলেন্সে প্রাণ হারিয়েছেন ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য সিরাজুল ইসলাম মল্লিক (৪৮)। গত ৮/৯ দিন জ্বরে ভুগছিলেন তিনি। থাকতেন রাজধানীর মিরপুরে। শনিবার রাতে হঠাৎ তার পেটে সমস্যা দেখা দিলে তাকে মিরপুরের বিভিন্ন  বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তির চেষ্টা করেও সফল হয়নি পরিবার। পরে রবিবার ভোর ৬টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সেই মৃত্যু হয় এই আইনজীবীর। শুধু মেজবাহ উদ্দিন, সিরাজুল ইসলাম নয়, করোনাকালে অসংখ্য রোগী প্রতিদিন সাধারণ চিকিৎসার জন্য ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরছেন। কিন্তু কোথাও চিকিৎসা পাচ্ছেন না। আবার অনেক হাসপাতাল রোগী ভর্তির আগে চাইছেন কভিড-১৯ পরীক্ষার রিপোর্ট। কিন্তু চাইলেই কি কভিড-১৯ পরীক্ষা করানো সম্ভব? আবার পরীক্ষার পরে রিপোর্ট নেগেটিভ হলেও যে ভর্তি হতে পারবেন তারও নিশ্চয়তা নেই। দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরু থেকেই চিকিৎসাসেবা নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছেন সাধারণ মানুষ। করোনা আক্রান্ত এবং সাধারণ  রোগী সবাইকেই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে। পজিটিভ সার্টিফিকেট হাতে না থাকায় করোনা আক্রান্তরা যেমন করোনার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালে ভর্তি হতে পারছেন না, তেমনি করোনা আক্রান্ত নন, এমন রোগীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ঘুরে রোগীরা ভর্তি হতে পারছেন না, এমনকি ঘুরে ঘুরে অ্যাম্বুলেন্সে মৃত্যু হচ্ছে অনেকের। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ রোগীকে চিকিৎসা দিতে অনীহা দেখালে এবং এতে রোগীর মৃত্যু হলে তা ‘অবহেলাজনিত মৃত্যু’ অর্থাৎ ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করতে বলেছে হাই কোর্ট। অন্যদিকে সবাইকে চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নির্দেশনাও দিয়েছে। তবুও কোনো কাজ হচ্ছে না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক নির্দেশনায় বলা হয়, সব বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে সন্দেহভাজন কভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্য পৃথক ব্যবস্থা থাকতে হবে। জরুরি চিকিৎসার জন্য আসা কোনো  রোগীকে ফেরত দেওয়া যাবে না। দেশের কোনো সরকারি বা  বেসরকারি হাসপাতালে উল্লিখিত নির্দেশনা অমান্য করলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রচলিত বিধান অনুসারে লাইসেন্স বাতিলসহ প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে এই নির্দেশনাও কেউ মানছে না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর