মঙ্গলবার, ১৬ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

কঠিনতম সময়ে প্রশাসন

নিজামুল হক বিপুল

কঠিনতম সময়ে প্রশাসন

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে মাঠে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সরকারের যারা কাজ করছেন তার মধ্যে মাঠ প্রশাসন বা তৃণমূল প্রশাসন অন্যতম। গত প্রায় তিন মাসে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলিয়ে অন্তত ১৫৯ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৬৩ জন। তারা ইতিমধ্যে কাজেও যোগ দিয়েছেন। একজন কর্মচারী মারা গেছেন। মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, করোনার ভয় ও আতঙ্ক নিয়েই তারা কাজ করছেন। তবে যেসব কর্মকর্তা করোনা যুদ্ধে জয়ী হয়ে আবারও মাঠের কাজে ফিরে এসেছেন সেই কর্মকর্তারা এখন অন্য কর্মকর্তাদের সাহস দিচ্ছেন। তাই আতঙ্কের মধ্যে থাকা কর্মকর্তাদের কাছে করোনা যুদ্ধে জয়ী কর্মকর্তারা অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করছেন। অপরদিকে করোনা জয় করে আসা কর্মকর্তাদের ডাটাবেজও তৈরি করা হচ্ছে যাতে অন্য কেউ আক্রান্ত হলে প্লাজমা দিয়ে সহযোগিতা করা যায়।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার গত ২৬ মার্চ সারাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। এই ছুটি চলে টানা ৬৬ দিন। এই ছুটিকালীন মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কর্মস্থলে থেকেই কাজ করতে হয়েছে। মানুষকে ঘরে থাকতে নানামুখী পদক্ষেপ নিতে হয়েছে মাঠ প্রশাসনকে। যা এখনো অব্যাহত আছে। এজন্য প্রতিদিনই মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা চষে বেড়িয়েছেন জেলা-উপজেলায় গ্রামগঞ্জের হাটবাজারে। কিছু দিন যেতে না যেতেই করোনায় আক্রান্ত হতে শুরু করেন মাঠের কর্মকর্তারা। নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, হবিগঞ্জ, গাজীপুর, কক্সবাজার, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা করোনা আক্রান্ত হলে কিছুটা ভীতি ছড়িয়ে পড়ে মাঠের কর্মকর্তাদের মধ্যে। তার পরও নানান প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে মাঠে নিয়মিতই কাজ করে যাচ্ছেন তৃণমূলের কর্মকর্তারা।

গত ৩০ মে থেকে সাধারণ ছুটি না বাড়িয়ে সরকার সবকিছু সীমিত আকারে চালু করে দেয়। ফলে কাজ আরও বেড়ে যায় মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের। কিন্তু এখন আর করোনাকে খুব একটা ভয় পাচ্ছেন না মাঠের কর্মকর্তারা।           করোনার চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করেই তারা কাজ করে যাচ্ছেন অব্যাহতভাবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও ঢাকার বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর গত ২৬ মার্চ থেকে গতকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঠ প্রশাসনের ৮৮ জন কর্মকর্তা আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে আটজন বর্তমানে হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ৩৭ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন বাসায় থেকে। আর সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৪৩ জন। এসব কর্মকর্তার মধ্যে জেলা প্রশাসক (ডিসি), এডিসি, ইউএনও, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ এই পর্যায়ের কর্মকর্তা রয়েছেন। ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার মো. মোস্তাফিজুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মাঠ প্রশাসনে আমাদের যেসব কর্মকর্তা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বা হচ্ছেন তাদের কোয়ারেন্টাইন ও চিকিৎসার জন্য আমরা একটা কুইক রেসপন্স টিম গঠন করেছি। তারা নিয়মিত আক্রান্তদের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করছেন। আমরা তাদের ডাটাবেজও তৈরি করছি। তিনি জানান, ইতোমধ্যে যারা সুস্থ হয়ে উঠেছেন তারা প্রায় প্রত্যেকে মাঠে কাজে ফিরে গেছেন এবং দ্বিগুণ উৎসাহ ও সাহস নিয়ে কাজ করছেন। তারা মাঠে কর্মরতদেরও সাহস দিচ্ছেন। বিভাগীয় কমিশনার বলেন, শুরুর দিকে মাঠের কর্মকর্তাদের মধ্যে যে ভয়ভীতি ও আতঙ্ক ছিল সেটা এখন কিছুটা কমেছে। সবাই ঝুঁকি নিয়েই সতর্কতার সঙ্গে কাজ করছে। কেউ কাজে কোনো শৈথিল্য দেখাচ্ছে না। তিনি জানান, যারা সুস্থ হয়ে উঠেছেন তাদেরও ডাটাবেজ আমরা তৈরি করছি। যাতে আমাদের অন্য কেউ আক্রান্ত হলে তাদের প্লাজমা দিয়ে সহযোগিতা করতে পারি। ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঝুঁকি তো অবশ্যই আছে। এর মধ্যেই কাজ করতে হচ্ছে। কোনো অজুহাতেই মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ঘরে বসে থাকার কোনো সুযোগ নেই। তিনি জানান, তার জেলায় প্রতিদিন গড়ে ১০টি মোবাইল টিম মাঠে কাজ করছে। যতটা সাবধানতা অবলম্বন করে ও নিজেদের নিরাপদ রেখে কাজ করা যায় সেটাই তারা করছেন বলে জানান। ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছি। মানুষকে ঘরে রাখার চেষ্টা করছি। সচেতনতা তৈরি করার চেষ্টা করছি। এ কাজে মানুষের সহযোগিতাটাও খুব বেশি দরকার। খুলনা বিভাগের অপর একটি জেলার জেলা প্রশাসক নাম প্রকশ না করার শর্তে গতকাল বলেন, মানুষের মধ্যে আইন না মানার প্রবণতা খুব বেশি। আমরা দিনভর মানুষকে বুঝালাম। কিন্তু দিন শেষে সেই মানুষই নিজেদের মতো করে চলাফেরা করে। এটাই বড় সমস্যা। এদিকে মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা প্রশাসনে কর্মরত কর্মচারীরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মাঠ পর্যায়ে এ পর্যন্ত ৭১ জন কর্মচারী আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে একজন মারা গেছেন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ২০ জন। আর ঢাকায় সচিবালয়, বিভিন্ন দফতর ও সিটি করপোরেশনে কর্মরত কর্মকর্তা এবং পিআরএল ও অবসরে যাওয়া কর্মকর্তা মিলিয়ে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন এখন পর্যন্ত ৬১ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৩ জন। মারা গেছেন ১০ জন। এই ১০ জনের মধ্যে তিনজন ছিলেন সরকারের বিভিন্ন দফতরে কর্মরত। এদের একজন অতিরিক্ত সচিব ও অন্য ২ জন উপ-সচিব। বাকি ৭ জনের মধ্যে সদ্য পিআরএলে যাওযা একজন ও অন্য ৬ জন হচ্ছেন প্রশাসন ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। 

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর