শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১৬ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

এমপি পাপুল ফের রিমান্ডে

কুয়েতের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তাকে ঘুষ উপহার দিয়ে বিশেষ সুবিধা আদায় করে নিতেন

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

এমপি পাপুল ফের রিমান্ডে

অর্থ পাচার ও মানব পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার বাংলাদেশের সংসদ সদস্য কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল ও তার সহযোগীর জামিন আবেদন নাকচ করে দিয়েছে কুয়েতের আদালত। সেই সঙ্গে তাকে ফের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, সাবেক এবং বর্তমান সাত কর্মকর্তাকে ঘুষ এবং উপহার দিয়ে বিশেষ সুবিধা আদায় করে নিতেন এমপি পাপুল। এ ছাড়া সরকারের টেন্ডার কমিটি এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ দুই মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ ছিল পাপুলের। পাপুলকে তার কর্মকান্ড চালিয়ে যাওয়ার জন্য কারা সুযোগ দিয়েছেন এবং তারা কী গিফট বা কত পরিমাণ অর্থ নিয়েছেন, সে বিষয়ে জানতে তাকে আবারও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছে কুয়েত কর্তৃপক্ষ।

কুয়েতের ইংরেজি দৈনিক আরব টাইমসের এক খবরে বলা হয়েছে, মানব পাচার, ভিসা নবায়ন আর অবৈধ মুদ্রা পাচারের মামলায় আটক বাংলাদেশের নাগরিকের নতুন নতুন রহস্য উন্মোচিত হচ্ছে। তদন্ত কর্মকর্তারা ওই মামলায় কুয়েতের অন্তত সাতজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন। তাদের মধ্যে তিনজন কুয়েত সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি বিভাগের প্রধান আর কেউ কেউ অবসরে গেছেন। কুয়েতের কর্মকর্তারা সেখানকার সরকারি দরপত্র কমিটি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তারা বাংলাদেশের নাগরিকের সন্দেহজনক কর্মকান্ড পরিচালনায় ঘুষ ও উপহার নিয়েছেন বলে জানতে পেরেছেন কুয়েতের তদন্ত কর্মকর্তারা। কাজী পাপুল এরই মধ্যে কুয়েতের তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে স্বীকার করেছেন, তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে বিপুল অঙ্কের ঘুষ দিয়েছেন। কুয়েতের ওই সরকারি কর্মকর্তা তাকে কাজ পাইয়ে দিতেন এবং তার হয়ে মধ্যস্থতা করতেন। কুয়েতের তদন্ত কর্মকর্তারা বাংলাদেশি বংশো™ভূত কানাডার এক নাগরিক এবং মিসরের অন্য এক নাগরিককে চলমান তদন্তের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে আটক করেছেন। তারা কাজী পাপুলের হয়ে কুয়েতের সরকারি দফতরগুলোতে লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এর মধ্যে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক মূর্তজা মামুনকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে কানাডার সিআইডি। মূর্তজা মামুন কাজী পাপুলের ম্যানেজার হিসেবে সব অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের হিসাব-নিকাশ রাখতেন। তাই কুয়েতের পাবলিক প্রসিকিউশন তদন্ত পুরোপুরি শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী মূর্তজা মামুনকে রিমান্ডে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। বিশেষ করে ১১ জন বাংলাদেশি এমপি কাজী পাপুলের বিরুদ্ধে ভিসা বাণিজ্যের পাশাপাশি কুয়েতে ভিসা নবায়নের জন্য বিপুল অঙ্কের টাকা দেওয়ার বিষয়ে সাক্ষ্য দেন। সাক্ষ্য শোনার পর আদালত ওই নির্দেশ দিয়েছেন। সূত্রের বরাত দিয়ে আরব টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, তদন্ত কর্মকর্তারা জানতে পেরেছেন বাংলাদেশি সংসদ সদস্য সম্প্রতি ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের ব্যাংকে লাখ লাখ দিনার (১ দিনার ২৭৭ টাকার সমতুল্য) পাঠিয়েছেন কুয়েতের ব্যাংক হিসাব থেকে। কুয়েত থেকে বিভিন্ন দেশের ব্যাংকে ওই লেনদেন বেশ সন্দেহজনক বলে তারা ধারণা করছেন। কর্মকর্তারা জানতে পেরেছেন, ভিসা নবায়ন, মানব পাচার ও অবৈধ মুদ্রা পাচারে নাম এসেছে জানার পর কুয়েত থেকে নিজের ব্যবসা গোটানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন কাজী পাপুল।

এদিকে কাজী পাপুলকে বিভিন্ন অনিময়ে কুয়েতের কারা কারা সহযোগিতা করেছে তাদের নামের তালিকা প্রকাশ করার দাবি জোরালো হচ্ছে দেশটিতে। কুয়েতের সংসদ সদস্য ইউসুফ আল ফাদহালা, আবদেল ওয়াহাব আল বাবতেইন ও আবদুল করিম আল কান্ডারি তাদের টুইটে মানব পাচার ও অবৈধ মুদ্রা পাচারে জড়িত কুয়েতের সংসদ সদস্য ও কর্মকর্তাদের নাম প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে তাদের বিরুদ্ধে কুয়েত দুর্নীতি দমন কমিশনকে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।

কুয়েতে গত ৬ জুন আটক হন লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল। আটকের পরদিন ৭ জুন তার জামিন আবেদন নাকচ করে আদালত তাকে মানব পাচার ও অবৈধ মুদ্রা পাচারের অভিযোগে সিআইডির রিমান্ডে পাঠায়। তার প্রথম রিমান্ডের মেয়াদকাল গত রবিবার শেষ হয়। এরই মধ্যে সিআইডি সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পর্কে ১১ জনের সাক্ষ্য নিয়েছে। ওই ১১ জনের সবাই কাজী পাপুলের বিরুদ্ধে মানব পাচারের অভিযোগ আনার পাশাপাশি প্রতিবছর ভিসা নবায়নের জন্য বাড়তি টাকা নেওয়ার অভিযোগ এনেছেন। বাংলাদেশের ১১ জন নাগরিক তার সহযোগী মূর্তজা মামুনের নাম উল্লেখ করেন। আদালত সংসদ সদস্যের এই সহযোগীকে আটকের নির্দেশ দেন। গত বুধবার মূর্তজা মামুনকে আটকের পর তাকে সিআইডির দফতরে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে বাংলাদেশের আটক সংসদ সদস্যের বিষয়ে আরও কিছু তথ্য পান গোয়েন্দারা। ওই দিনই আদালত মূতর্জা মামুনকে সিআইডির রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন মঞ্জুর করেন। পরদিন অর্থাৎ গত বৃহস্পতিবার সিআইডির কর্মকর্তারা সংসদ সদস্য কাজী শহীদকে নিয়ে মুশরিক এলাকায় অবস্থিত তার বাসার কার পার্কিংয়ে যান। সেখানে সংসদ সদস্যের একটি গাড়ি থেকে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের চেকবই উদ্ধার করা হয়। ওই চেকবইগুলো থেকে গত তিন মাসে কুয়েতের পাশাপাশি বাংলাদেশ ও কানাডায় বিপুল পরিমাণ আর্থিক লেনদেনের তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। কুয়েতের বাংলাদেশ দূতাবাসের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, এমপি মোহাম্মদ শহীদ ইসলাম পাপুলের গ্রেফতারের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে কুয়েতের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে সেই চিঠির জবাব এখনো আসেনি।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর