মঙ্গলবার, ১৬ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যু ফৌজদারি অপরাধ : হাই কোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ রোগীকে চিকিৎসা দিতে অনীহা দেখালে এবং এতে রোগীর মৃত্যু হলে তা ‘অবহেলাজনিত মৃত্যু’ অর্থাৎ ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করতে বলেছে হাই কোর্ট। এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার নির্দেশও দিয়েছে আদালত।

গতকাল বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ রিকুইজিশন এবং ‘সেন্ট্রাল বেড ব্যুরো’ স্থাপন, ৫০ শয্যা বা তার বেশি শয্যার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে কভিড ও সাধারণ রোগীদের জন্য আলাদা চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু এবং রাজধানী ঢাকায় দুই সপ্তাহের জন্য লকডাউন ঘোষণার নির্দেশনা চেয়ে করা তিনটি রিটের শুনানির পর কিছু নির্দেশনা ও অভিমত দিয়ে এ আদেশ দিয়েছে আদালত। আদালতে রিটগুলোর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ, আইনজীবী ইয়াদিয়া জামান, আইনজীবী জামিউল হক ফয়সাল ও মেহেদী হাসান। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অবন্তী নূরুল। আইসিইউতে চিকিৎসাধীন কভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক যেন মাত্রাতিরিক্ত বা অযৌক্তিক ফি আদায় করতে না পারে- সে জন্য নজরদারির ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে আদেশে। এছাড়াও অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ ও বিক্রিতে ‘মনিটরিং’ জোরদার করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অক্সিজেন সিলিন্ডারের খুচরা ও রি-ফিলিংয়ের মূল্য নির্ধারণের নির্দেশ দিয়ে আদেশে আদালত বলেছে, সিলিন্ডারের নির্ধারিত মূল্য খুচরা বিক্রেতাদের প্রতিষ্ঠান/দোকানে প্রদর্শন করতে হবে। কৃত্রিম সংকট রোধে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ও রোগীর পরিচয়পত্র ছাড়া অক্সিজেন সিলিন্ডারের খুচরা বিক্রি বন্ধের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করতে পারে বলে অভিমত দিয়েছে আদালত। রাজধানী ঢাকায় ‘লকডাউন’ জারির বিষয়ে আদালত আদেশে বলেছে, সরকার এরই মধ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশকে কভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় লাল, হলুদ ও সবুজ জোনে বিভক্ত করে পর্যায়ক্রমে লকডাউনের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে। এমতাবস্থায় বর্তমান পর্যায়ে লকডাউনের বিষয়ে কোনো আদেশ দেওয়া সঙ্গত হবে না মর্মে আদালত মনে করে। এছাড়াও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ৫০ শয্যা বা তার বেশি শয্যার বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিকগুলোতে গতকাল নাগাদ কতজন কভিড-১৯ রোগী এবং সাধারণ রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছে- সে প্রতিবেদনও ৩০ জুনের মধ্যে দিতে বলা হয়েছে। আইসিইউ হটলাইন চালুর নির্দেশ : আদালত আদেশে বলেছে, আইসিইউ ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং সেলে ভুক্তভোগীরা যাতে সহজেই যোগাযোগ করতে পারে সে জন্য ‘আইসিইউ হটলাইন’ নামে আলাদা একটি হটলাইন চালু করতে হবে। হটলাইন নম্বর প্রতিদিন বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিশেষ করে টেলিভিশন মাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমকে অধিকতর জবাবদিহিমূলক ও বিস্তৃত করতে হবে। ভুক্তভোগীরা যাতে এ সেবা দ্রুত ও সহজে পেতে পারেন- তা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো হাসপাতালে আইসিইউতে কতজন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং কতটি আইসিইউ শয্যা কী অবস্থায় আছে, তার সর্বশেষ অবস্থা প্রতিদিনের প্রচারিত স্বাস্থ্য বুলেটিন ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ ও প্রচারের ব্যবস্থা নিতে হবে।

সর্বশেষ খবর