বুধবার, ১৭ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

লস অ্যাঞ্জেলেসে কনস্যুলেট ভবন কেনায় সাগর চুরি

গডফাদার বাঁচাতে লুকোচুরি

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে বাংলাদেশ কনস্যুলেট ভবন কেনায় ‘সাগর চুরি’র অভিযোগ উঠেছে। ৩ লাখ ৮১ হাজার ডলারের বাড়ি ২৩ গুণ বেশি দামে ৮৩ লাখ ডলার এবং ২০ লাখ ডলারের বাড়ি দেড়গুণ বেশি ৩২ লাখ ডলারে কিনে সরকারের অর্থ লোপাটের অভিযোগে লস অ্যাঞ্জেলেসের কনসাল জেনারেল প্রিয়তোষ সাহাকে ঢাকায় ডেকে নিয়ে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। এত বড় দুর্নীতির ঘটনায় জড়িত ওয়াশিংটন ডিসি কিংবা ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আর কারও বিরুদ্ধে গত ৫ মাসেও কোনো তদন্ত কিংবা শাস্তি দেওয়ার তথ্য জানা যায়নি। নেপথ্যের গডফাদারদের বাঁচাতে লুকোচুরি চলছে। এ অবস্থায় প্রবাসীরা পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। তারা এই দুর্নীতিতে জড়িতদের  চিহ্নিত করাসহ সংশ্লিষ্ট সবার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, লস অ্যাঞ্জেলেস সিটিতে বাংলাদেশ কনস্যুলেটের নিজস্ব ভবন এবং কনসাল জেনারেলের বাসভবন কেনার সময় উপরোক্ত অনিয়ম-অর্থ লোপাটের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। গত ২ জানুয়ারি এই লুটপাট সম্পর্কে বাংলাদেশ প্রতিদিনে ‘২০ লাখের বাড়ি ৩২ লাখ ডলারে/লস অ্যাঞ্জেলেসে বাংলাদেশ মিশনের বাড়ি ক্রয় নিয়ে বিতর্ক’ শিরোনামে চাঞ্চল্যকর খবর প্রকাশিত হয়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত বছরের ১১ জুন লস অ্যাঞ্জেলেস সিটির সাউথ ফেয়ারফ্যাক্স এভিনিউতে ৫০১ নম্বরের বাড়িটি কেনা হয় ৮৩ লাখ ডলারে। এটি কনস্যুলেট অফিস। প্রায় একই সময়ে ভিউপার্ক এলাকায় কেনওয়ে এভিনিউতে ৩৯৪৪ নম্বরের বাড়িটি কনসাল জেনারেলের বাসভবন হিসেবে কেনা হয় ৩২ লাখ ডলারে। বাড়ি ক্রয়-বিক্রয়ের তথ্য সংরক্ষণকারী কয়েকটি সংস্থার ওয়েবসাইটে যাচাইকালে প্রবাসীরা জানতে পারেন যে, ৮৩ লাখ ডলারে ক্রয়কৃত বাড়িটির সর্বোচ্চ মূল্য হতে পারে ৩ লাখ ৮১ হাজার ডলার। অন্যদিকে, ৩২ লাখ ডলারে কেনা বাড়িটির প্রকৃত মূল্য হতে পারে সাড়ে ২০ লাখ ডলার। এসব তথ্য উদঘাটনের পর লস অ্যাঞ্জেলেসের সচেতন প্রবাসীরা তুমুল প্রতিবাদ উত্থাপন করলে গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর এক নির্দেশে প্রিয়তোষ সাহাকে ঢাকায় তলব করা হয়। এরপর ২৪ ডিসেম্বর প্রিয়তোষ সাহাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চাকরি থেকে অবসর দেওয়া হয়েছে। যদিও তার চাকরির মেয়াদ ছিল আরও কয়েক বছর। এমন নির্দেশ জারির পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওই বাড়ি দুটি কেনার ব্যাপারে আর কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে বলে প্রবাসীরা জানতে পারেননি। অথচ বাড়ি কেনার জন্য গঠিত ‘আন্ত মন্ত্রণালয় কমিটি’র লোকজন কয়েক দফা ঢাকা ও ওয়াশিংটন ডিসি থেকে লস অ্যাঞ্জেলেস সফর করেছেন। বাড়ির মূল্যসহ পারিপার্শ্বিক অবস্থা যাচাই করেছে ৫ সদস্যবিশিষ্ট ওই কমিটি। জানা গেছে, প্রকৃত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত মূল্যে বাড়ি দুটি কেনার মাধ্যমে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ কতিপয় ব্যক্তির পকেটে গেছে। অভিযোগ উঠেছে, এই ভবন দুটি কেনার নেপথ্যের গডফাদারকে বাঁচাতেই মন্ত্রণালয় রহস্যজনকভাবে নীরবতা পালন করছে। এজন্য প্রবাসীরা অবিলম্বে দুর্নীতি দমন কমিশনের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। এদিকে নিউইয়র্কে কনস্যুলেট অফিস নিজস্ব ভবনে স্থাপনের একটি দাবি এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বশেষ গত বছরের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে যোগদানকালে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ প্রসঙ্গে প্রবাসীদেরও সহায়তা চেয়েছেন। পাশাপাশি কনসাল জেনারেলকেও তাগিদ দিয়ে গেছেন বাড়ি কেনার জন্য। কিন্তু এখন পর্যন্ত বাড়ি পছন্দের কাজটিই সম্পন্ন হয়নি বলে জানা গেছে। ইতিমধ্যে লস অ্যাঞ্জেলেসে নিজস্ব বাড়ি কেনায় কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠায় নিউইয়র্কের বাড়ি কেনার আগ্রহ অনেকটাই কমে গেছে বলেও জানা যাচ্ছে। এ ছাড়া নিউইয়র্ক অঞ্চলের ৫ লক্ষাধিক প্রবাসীর প্রাত্যহিক সেবা প্রদানের মধ্য দিয়ে প্রতি বছরই মোটা অঙ্কের অর্থ আয় হচ্ছে এই কনস্যুলেটে। অথচ নিজস্ব একটি ভবন নেই কনস্যুলেট অফিসের জন্য। জাতিসংঘের শহর ‘ম্যানহাটন’র বাইরে কুইন্সের নর্দার্ন বুলেভাডে কনস্যুলেট অফিস শুধু আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশেরই রয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলেসের ক্ষুব্ধ প্রবাসীরা ১৪ জুন এ সংবাদদাতাকে জানান, বাড়ি কেনায় ‘পুকুর চুরি’ নয় ‘সাগর চুরি’র অভিযোগগুলো অনেক আগেই ঢাকায় দুর্নীতি দমন কমিশনেও পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এই দুর্নীতির নেপথ্য নায়কদের বাঁচাতে পরবর্তী পদক্ষেপ স্থবির হয়ে আছে।

সর্বশেষ খবর