বৃহস্পতিবার, ১৮ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

রিপোর্ট পাওয়ার আগেই মৃত্যু

উপসর্গ নিয়ে প্রাণ গেল আরও ৩২ জনের

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ১৪ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে চারজনের করোনা পজিটিভ ছিল এবং ১০ জন উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলায় সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্টের মতো করোনা উপসর্গ নিয়ে গতকাল একজন মুক্তিযোদ্ধা, দুজন শিক্ষকসহ আরও ২২ জন মারা গেছেন। গতকাল সব মিলে উপসর্গ নিয়ে ৩২ জন মারা গেছেন। তাদের অধিকাংশের করোনা টেস্ট করা হয়েছে। কিন্তু রিপোর্ট পাওয়ার আগেই অনেকেই মারা গেছেন। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন মানিকগঞ্জের, একজন মেহেরপুরের, একজন খুলনার, একজন চুয়াডাঙ্গার, ছয়জন কুমিল্লার, দুজন লালমনিরহাটের, তিনজন গাজীপুরের, একজন চট্টগ্রামের, একজন পটুয়াখালীর, একজন কিশোরগঞ্জের, তিনজন  ফেনীর ও একজন পিরোজপুরের বাসিন্দা। সংশ্লিষ্টদের বাড়িঘরও লকডাউন করেছে প্রশাসন। করোনা সন্দেহে পরিবারের সদস্যদের নমুনা সংগ্রহ করাও হচ্ছে। অনেককেই হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।

ঢাকা মেডিকেলে মৃত্যু ১৪ জন : ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মঙ্গলবার বিকাল থেকে গতকাল বিকাল পর্যন্ত ১৪ জনের  মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ৪ জন করোনা পজিটিভ ছিল। উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ১০ জন। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে যাদের করোনা পজিটিভ ছিল তারা হলেন, কামাল (৪০), নুরজাহান বেগম (৮৫), মো. মজিবুর রহমান (৪২) ও আবুল কালাম (৫৫)। যারা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন তারা হলেন, হাসনা (৫০), নুরজাহান (৭৬), হাজেরা (৬৫), সালেহা (৭০), সাবিনা (৩০), তারেক (১৫), আজিজুল (৩৮), নার্গিস (৪১), সাধনা বণিক (২৭) ও এম এ রাশেদ (৭১)।

জেলায় জেলায় ২২ জনের মৃত্যু : আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যানুযায়ী- মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা  হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ৬০ বছরের এক অজ্ঞাত নারী মারা গেছেন। গতকাল সকাল সোয়া সাতটার দিকে তিনি মারা যান। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আরশ্বাদ উল্লাহ বলেন, গত ৬ জুন এক ব্যক্তি অজ্ঞাত ওই নারীকে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন। চিকিৎসক তার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণের পর কভিড-১৯ ওয়ার্ডে ভর্তি করেন। বুধবার সকালে তিনি মারা যান। হাসপাতালে ভর্তি করার পর থেকে মত্যুর আগ পর্যন্ত কেউ তাকে দেখতে আসেননি। মেহেরপুরের মুজিবনগরে ঠান্ডা জ্বর ও সর্দি কাশি নিয়ে নবম শ্রেণির স্কুল ছাত্রী বিপাশার মৃত্যু হয়েছে। বিপাশা মুজিবনগর থানার মানিক সাগর গ্রামের ফজলুল হকের মেয়ে। স্থানীয়রা জানান, গত দুই দিন আগে বিপাশা জ্বর ও সর্দি কাশি নিয়ে মুজিবনগর স্বাস্থ্য কপ্লেক্সে ভর্তি হয়। বুধবার বেলা ১১টার দিকে মারা যান। করোনা উপসর্গ নিয়ে খুলনার রূপসা উপজেলার নৈহাটি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান খান বজলুর রহমান (৬০) মারা গেছেন। গতকাল খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফ্লু কর্নারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তার বাড়ি রূপসা উপজেলার সামন্তসেনা গ্রামে। চুয়াডাঙ্গায় করোনা উপসর্গ নিয়ে মো. সোলায়মান (৬০) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকালে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আইসোলেশনে মারা যান তিনি। তিনি দর্শনা বাসস্ট্যান্ডপাড়ার গিয়াস উদ্দিনের ছেলে। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় সাতজন মারা গেছেন। এর মধ্যে একজন পজিটিভ আর বাকি ছয়জনের করোনা উপসর্গ ছিল। গতকাল কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. সাজেদা খাতুন জানান, সাতজন মারা গেছেন। এর মধ্যে একজন পজিটিভ রোগী ছিল। বাকি ছয়জন উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। সূত্র জানায়, আদর্শ সদর উপজেলার কুচাইতলী এলাকার মতিউর রহমান (৬০) ১৭ জুন দিবাগত রাত পৌনে ৩টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। অন্য ছয়জনের এখনো রিপোর্ট আসেনি।

লালমনিরহাটে করোনার উপসর্গ জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়ে দুজন মারা গেছেন। এর মধ্যে গতকাল ভোরে মারা যান লালমনিরহাট সদর উপজেলার খোচাবাড়ি বিডিআর হাটখোলা এলাকার আলেয়া বেগম (৫৫)। দুপুরে মারা যান কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভা ার ইউনিয়নের দক্ষিল ঘনেশ্যাম (আমিনগঞ্জ) এলাকার আবদুল গফুর (৪৮)।

গাজীপুরে করোনা উপসর্গ নিয়ে ২৪ ঘণ্টায় স্কুলশিক্ষকসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন, স্কুলশিক্ষক মো. হাবিবুর রহমান, কালিয়াকৈর উপজেলার লতিফপুর এলাকার বাসিন্দা আবু সাঈদ (৭০)। সূত্রাপুর এলাকার বাসিন্দা পঞ্চানন্দ বণিক (৮০)। ওই স্কুলশিক্ষকের মেয়ে জানান, তার বাবা হাবিবুর রহমান টঙ্গী সফিউদ্দিন সরকার স্কুল অ্যান্ড কলেজ (প্রভাতি) শাখার সহকারী শিক্ষক ছিলেন। অনেক দিন ধরে তিনি নিউমোনিয়া, ঠা া ও সর্দিতে ভুগছিলেন। ৯ জুন তাকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে তিনি মারা যান।

জ্বর-সর্দি নিয়ে কক্সবাজারের কুতুবদিয়ার দক্ষিণ ধুরুং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) এক সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে নিজ বাড়িতে তিনি মারা যান। তার নাম আবুল হোসেন (৫০)। বাড়ি ইউনিয়নের পূর্ব আলি ফকির ডেইল পাড়ায়। করোনার উপসর্গ নিয়ে চট্টগ্রামে আরেক চিকিৎসক মারা গেছেন। গতকাল সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার নাম নুরুল হক (৪৩)।

জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে পটুয়াখালীর গলাচিপায় এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মারা যাওয়া ব্যক্তির বয়স ছিল ৪৫ বছর। তিনি উপজেলার একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে কিশোরগঞ্জের ভৈরবের একজন মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার রাতে তিনি মারা যান। মারা যাওয়া ব্যক্তির নাম মোশারফ হোসেন (৬৮)। তিনি ভৈরব পৌর নিউ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি। পৌর শহরের ভৈরবপুর কাদির  বেপারী বাড়ির বাসিন্দা ছিলেন তিনি। জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা মোশাররফ হোসেন এক সপ্তাহ ধরে জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। করোনার সংক্রমণ রয়েছে কিনা- জানতে রবিবার হাসপাতালে নমুনা দিয়ে আসেন। কিন্তু পরীক্ষার ফল জানতে পারেননি। এরই মধ্যে সোমবার শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকে। তখন দ্রুত তাকে ঢাকার একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার রাতে মারা যান তিনি। ফেনীতে জ্বর, সর্দি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। ফেনী ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারা মারা যান। তিনজনের মধ্যে ৮৫ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ ও ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধা রয়েছেন। তাঁদের বাড়ি ফেনীতে। জানা গেছে, ৮৫ বছর বয়স্ক বৃদ্ধের বাড়ি ফেনী পৌরসভার পূর্ব মধুপুর এলাকায়। তিনি গত ৩-৪ দিন ধরে জ্বর, সর্দি ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। প্রথমে নিজ বাড়িতে স্থানীয়ভাবে তার চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে মঙ্গলবার বিকালে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যায় মারা যান তিনি। ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধার বাড়ি ফেনী পৌরসভার বিরিঞ্চি এলাকায়। তিনিও জ্বর, সর্দি, শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। মঙ্গলবার বিকালে তাকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যায় মারা যান।

এদিকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের ২০ বছর বয়সী ওই নারী জ্বর, সর্দি, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে গত ১০ জুন ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন। ১১ জুন নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য নোয়াখালীতে পাঠানো হয়। তবে মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে তার শারীরিক অবস্থারও কিছুটা উন্নতি হয়েছিল। কিন্তু মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে অবস্থার অবনতি ঘটে। পরে সন্ধ্যায় তিনি মারা যান। পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলায় করোনার উপসর্গ নিয়ে ছোট ভাইয়ের মৃত্যুর পাঁচ দিন পর এবার বড় ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে পিরোজপুর শহরের একটি হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে তার মৃত্যু হয়। মারা যাওয়া ওই ব্যক্তির নাম সুনীল দাস (৬৫)। তার বাড়ি ইন্দুরকানি উপজেলার চারাখালী গ্রামে। তিনি পল্লী চিকিৎসক ছিলেন।

সর্বশেষ খবর