বৃহস্পতিবার, ১৮ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনা বাধা উন্নয়ন প্রকল্পে

নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হচ্ছে না ১৪১ প্রকল্প, এক বছরের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ৪২২টির

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

করোনা মহামারী থামিয়ে দিয়েছে সরকারের ছোট বড় সব ধরনের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ।

চলতি বছরের জুনে সমাপ্ত হওয়ার কথা এমন অন্তত ১৪১টি প্রকল্পের কাজ সময়মতো শেষ হচ্ছে না। উপরন্তু মেয়াদোত্তীর্ণ আরও ৪২২টি প্রকল্পের মেয়াদ বিশেষ বিবেচনায় এক বছর বাড়াতে বাধ্য হয়েছে সরকার। সূত্র জানায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে ৩১৭টি প্রকল্প চলতি বছরের জুনে শেষ করার সময় নির্ধারিত ছিল। গত ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত সংশোধিত এডিপির বিষয়ে এনইসি সভায় সিদ্ধান্ত হয়, সংশোধিত এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত এই ৩১৭টি প্রকল্প আবিশ্যিকভাবে এ বছরের জুনে শেষ করতে হবে। এসব প্রকল্পের মেয়াদ আর বৃদ্ধি করা যাবে না। এ ছাড়া ২০২০-২১ অর্থবছরের এডিপি প্রণয়নের তালিকায় এসব প্রকল্প অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করা যাবে না। কিন্তু করোনা-বাধা মাত্র ২ মাসের মধ্যে উল্লিখিত প্রকল্পগুলোর বিষয়ে সেই সিদ্ধান্ত পাল্টাতে বাধ্য করেছে সরকারকে। শুধু তাই নয়, নিয়ম অনুযায়ী মেয়াদোত্তীর্ণ প্রতিটি প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য আইএমইডি ও পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। উল্লিখিত প্রকল্পগুলো পৃথকভাবে মূল্যায়ন করে  মেয়াদ বাড়ানোর অনুমোদন নেওয়া যায়নি। পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে  বলেন, শুধু বাংলাদেশে নয়, করোনা মহামারী বিশ্বব্যাপী বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি করেছে। এটি এমন একটি সংকট যেটিকে মানুষের পক্ষে থামিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। গত  ফেব্রুয়ারি থেকে কোনো কাজ হচ্ছে না। এরপর লকডাউনে সময় সময় বাড়ানো হয়েছে সাধারণ ছুটি। চলমান সংকট কতদিন চলবে এ বিষয়েও কারও কাছে কোনো তথ্য নেই। এ অবস্থায় যেসব প্রকল্প থেমে গেছে, সেগুলো কীভাবে শেষ করা যায় সে বিষয়ে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। সূত্র জানায়, করোনা ভাইরাসের প্রদুর্ভাবের কারণে লকডাউন শুরু হওয়ার পর মার্চে যে প্রকল্পগুলো নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, মে মাসে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় পর্যালোচনা করে দেখে যে, ওই ৩১৭টি প্রকল্পের মধ্যে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ১৭৬টি প্রকল্প সমাপ্ত হলেও কভিড-১৯-এর কারণে স্বাভাবিক পরিস্থিতি না থাকায় সেখান থেকে অন্তত ১৪১টি প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে না। এ অবস্থায় গত ১৯ মে এনইসি চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের এই ১৪১টি প্রকল্পের বাস্তবায়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে ব্যয় না বাড়িয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দসহ প্রকল্পগুলো অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করা হয়। শুধু তাই নয়, ওই একই সভায় করোনার কারণে চলতি বছরের জুনে মেয়াদোত্তীর্ণ এমন আরও ৪২২টি প্রকল্পও বিশেষ বিবেচনায় এক বছরের জন্য মেয়াদ বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এটি করা ছাড়া সরকারের কোনো উপায় ছিল না। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে কারো কাছে কোন আগাম তথ্য নেই। এই সঙ্কট থেকে কবে রক্ষা পাওয়া যাবে সে বিষয়েও কোন নিশ্চয়তা পাওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি যথাসময়ে না হওয়ায় অর্থবছরের প্রথম ৪/৫ মাস এসব প্রকল্পের অনুকূলে কোনো অর্থ ছাড় ও ব্যয় করা সম্ভব হয় না। ফলে সামগ্রিক এডিপি বাস্তবায়নে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এ অবস্থায় করোনার কারণে আটকে থাকা প্রকল্পগুলোর মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়।

সর্বশেষ খবর