শুক্রবার, ১৯ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

টেস্ট নিয়ে এত সংকট

ভুল ঠিকানায় আসছে রিপোর্ট, নমুনা নিয়ে দীর্ঘদিন রেখে দেওয়ায় টেস্টের কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ

জয়শ্রী ভাদুড়ী

টেস্ট নিয়ে এত সংকট

করোনাভাইরাসের উপসর্গ থাকায় গত ৩১ মে নমুনা পরীক্ষা করতে দেন বনশ্রীর বাসিন্দা সতীশ চন্দ্র দাস, তার স্ত্রী রুপালি দাস এবং ছেলে ডা. তন্ময় দাস। এর মধ্যে গত ৫ জুন শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে বেসরকারি একটি হাসপাতালে করোনা সাসপেক্টেড রোগী হিসেবে ভর্তি হন তারা। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৯ জুন মারা যান সতীশ চন্দ্র দাস। মারা যাওয়ার চার দিন পর স্বাস্থ্য অধিদফতরে যোগাযোগ করে তারা রিপোর্ট পান। রিপোর্টে তাদের ছেলে ডা. তন্ময় দাসের পজেটিভ, বাকি দুজনের নেগেটিভ ফল আসে। কিন্তু বনশ্রীর এক বাসা থেকে নমুনা নিয়ে রিপোর্টে তিনজনকে তিন এলাকার বাসিন্দা উল্লেখ করা হয়েছে। দীর্ঘদিন পর ভুল ঠিকানার রিপোর্ট নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে তার পরিবার।

ডা. তন্ময় চন্দ্র দাস বলেন, রিপোর্ট নিয়ে আমাদের সঙ্গে মশকরা চলছে। নমুনা দেওয়ার ১৪ দিন পার হলেও রিপোর্ট পাচ্ছিলাম না। স্বাস্থ্য অধিদফতর, আইইডিসিআর এ যোগাযোগ করে রিপোর্ট পেলেও তিনজনের তিন ঠিকানা দেওয়া হয়েছে। এক বাসা থেকে নমুনা নিয়ে তিন এলাকার বাসিন্দা দেওয়া হলে রিপোর্ট কতটা সঠিক? এটা নিয়ে সন্দেহ জাগছে।

করোনা টেস্ট নিয়ে তৈরি হয়েছে নানামুখী সংকট। উপসর্গ নিয়ে অসংখ্য মানুষ অপেক্ষা করছেন টেস্ট করার জন্য। কিন্তু হটলাইনে যোগযোগের এক সপ্তাহেও নমুনা সংগ্রহ করতে আসছে না। নমুনা নিয়ে গিয়ে ১৫ দিন পার হলেও মিলছে না রিপোর্ট। রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর পজেটিভ হলে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে কেউ খোঁজ পর্যন্ত নিচ্ছে না। আক্রান্ত হওয়ার ২০ দিন পর কোনো রকম উপসর্গ না থাকলেও পুনরায় টেস্ট করার ব্যবস্থা করতে হিমশিম খাচ্ছেন রোগীরা। যশোরের বেনাপোলের দুর্গাপুরের বাসিন্দা এক ব্যবসায়ী ৫ জুন থেকে জ¦রে ভুগছিলেন। জ¦রের কারণে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে করোনা টেস্ট করার পরামর্শ দেওয়া হয়। ১০ জুন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে করোনা টেস্টের জন্য তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ১২ জুন জানানো হয় আগের নমুনায় পজেটিভ-নেগেটিভ কোনো রেজাল্টই আসেনি। নমুনা নেওয়ার সমস্যার কারণে ১৩ জুন আবার নমুনা নেওয়া হয়। করোনা আক্রান্ত হওয়ার চিন্তায় এবং আশপাশের মানুষের হেয় প্রতিপন্ন আচরণে মানসিকভাবে চাপে পড়ে গিয়েছিলেন অসুস্থ ওই ব্যক্তি। গত ১৪ জুন রাতে স্ট্রোক করে মারা যান তিনি। সকাল হতেই করোনা আক্রান্ত রোগীর বিধি মেনে দাফন করতে প্রস্তুতি নেয় উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। কিন্তু এর মধ্যেই রিপোর্ট আসে তিনি করোনা নেগেটিভ। ওই ব্যক্তির বড় ভাই জানান, প্রথম নমুনায় রিপোর্ট পেলে হয়তো আমার ভাইকে হারাতে হতো না। ভাইয়ের করোনা নেগেটিভ হওয়ার পরও চারদিকের মানুষের আচরণে আমরা সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হয়ে পড়েছি। মানসিকভাবে আমরা প্রচ- চাপে পড়েছি। ভাইরাস বিশেষজ্ঞ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘নমুনা সংগ্রহ করে দীর্ঘদিন রাখলে এবং সঠিক ব্যবস্থাপনায় না রাখলে নমুনা থেকে সঠিক ফল পাওয়া সম্ভব না। যেভাবে আক্রান্ত বাড়ছে তাতে ল্যাবের সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে। ঢাকার বাইরে অন্য জেলাগুলোতে ল্যাব আরও বাড়াতে হবে।’ মুগদার বাসিন্দা বায়োজিদ হোসেন বলেন, আমি এবং আমার স্ত্রী করোনা পজেটিভ। ২২ দিন পরে আমাদের আর কোনো উপসর্গ নাই। কিন্তু যোগাযোগ করে করোনা টেস্টের ব্যবস্থা করতে পারছি না। খাবার ফুরিয়ে আসছে প্রায়। সে রকম কেউ নেই যে কিছু প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দেবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর