শুক্রবার, ১৯ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

চিকিৎসকদের সংক্রমণ বেশি ঢাকায়, কম রাজশাহীতে

মাহবুব মমতাজী

চিকিৎসকদের সংক্রমণ বেশি ঢাকায়, কম রাজশাহীতে

চিকিৎসকদের মধ্যে করোনা সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। চিকিৎসকদের মৃত্যুর খবরও রীতিমতো উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। তবে ঢাকা বিভাগে চিকিৎসক আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে যথাযথ প্রশিক্ষণ না থাকায় চিকিৎসকরা আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি।

এ পর্যন্ত সারা দেশে এক হাজার ২৫৮ জন চিকিৎসক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে শুধু ঢাকা বিভাগে রয়েছেন ৭১৫ জন। সরকারি হাসপাতালের ৪১০ জন, বেসরকারি হাসপাতালের ২৩৫ জন। আর অন্যান্য ৭০ জন। বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশনের (বিডিএফ) তথ্যানুযায়ী, ময়মনসিংহ বিভাগে আক্রান্ত হয়েছেন ১৩৫ জন। সরকারি হাসপাতালের ১৩২ জন এবং বেসরকারি হাসপাতালের ৩ জন। চট্টগ্রাম বিভাগে আক্রান্ত হয়েছেন ১৭৫ জন। এরমধ্যে সরকারি হাসপাতালের ১১১ জন এবং বেসরকারি হাসপাতালের ৪৩ জন। আর অন্যান্য ২১ জন। খুলনা বিভাগে আক্রান্ত ৫০ জন। এরমধ্যে সরকারি হাসপাতালের ৪৫ জন এবং বেসরকারি হাসপাতালের ৫ জন। বরিশাল বিভাগে সরকারি ২১ জন এবং বেসরকারি হাসপাতালের ৩ জন। সিলেট বিভাগের সরকারি হাসপাতালের ৩২ জন এবং বেসরকারি হাসপাতালের ২ জন। রংপুর বিভাগে শুধু সরকারি হাসপাতালের ১৯ জন চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন। সবচেয়ে কম আক্রান্ত হয়েছেন রাজশাহী বিভাগে। সেখানে সরকারি হাসপাতালের ১৩ জন এবং বেসরকারি হাসপাতালের ২ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া অন্যান্য স্থানে আক্রান্ত ৫৭ জন। বিডিএফের পরিচালক ডা. মিলি দে এ প্রতিবেদককে জানান, গতকাল পর্যন্ত মারা গেছেন মোট ৪৫ জন চিকিৎসক। এদের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত ছিলেন ৩৯ জন এবং করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ৬ জন।      

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) বলছে, এ পর্যন্ত সারা দেশে ১ হাজার ১১ জন চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। টেকনোলজিস্টসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৩৩১ জন। অন্যদিকে বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন বলছে, সারা দেশে ১ হাজার ২১৩ জন নার্স আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে মারা গেছেন ৪ জন। শুধু ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালেই আক্রান্ত ১৭৩ জন এবং কুর্মিটোলায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩০ জন।

বাংলাদেশে করোনাবিরোধী সম্মুখসারির এই যোদ্ধাদের মৃত্যুর মিছিলে সর্বশেষ যুক্ত হয়েছেন তিনজন চিকিৎসক। গতকাল ঢাকা, দিনাজপুর ও চট্টগ্রামে এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। তাদের একজন ডা. আশরাফুজ্জামান গতকাল সকাল ৮টার দিকে রাজধানীর উত্তরার বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গতকাল সাড়ে ৮টায় দিনাজপুরের এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন একই হাসপাতালের সাবেক পরিচালক ডা. শাহ আবদুল আহাদ (৭০)। এর আগে গতকাল ভোর ৪টার দিকে চট্টগ্রাম মহানগর হাসপাতালের আইসিইউতে একই হাসপাতালের সিনিয়র আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. নুরুল হক মারা যান। মঙ্গলবার ভোরে করোনা আক্রান্ত হয়ে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক পরিচালক ডা. এ কে এম মুজিবুর রহমান সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) মারা যান। করোনা পজিটিভ হয়ে হাসপাতালে প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। রবিবার মারা যান ডা. সাদেকুর রহমান। তিনি চট্টগ্রামের জেমিসন রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালের চিকিৎসক ছিলেন। চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বিএমএর তথ্য ও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনায় এ পর্যন্ত মারা যাওয়া চিকিৎসকদের মধ্যে চারজন ছিলেন আইসিইউ বিশেষজ্ঞ। তাদের মধ্যে একজন করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যান। আইসিইউ বিশেষজ্ঞদের মধ্যে প্রথম মারা যান ডা. আবদুর রহমান। গত ২৬ মে করোনার উপসর্গ নিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান। এরপর ৭ জুন স্কয়ার হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের প্রধান মির্জা নাজিম উদ্দিন, ৯ জুন ইমপালস হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের প্রধান জলিলুর রহমান এবং গত ১৩ জুন রাতে বিআরবি হাসপাতালের আইসিইউ প্রধান সাজ্জাদ হোসাইন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

সর্বশেষ খবর