শনিবার, ২০ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

গভীর রাতে বায়না, নানা মানুষের নানান চাহিদা

লকডাউন পূর্ব রাজাবাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে নির্দিষ্ট এলাকা চিহ্নিত করে লকডাউন দিয়েছে সরকার। পূর্ব রাজাবাজার এলাকায় প্রথম তালিকায় লকডাউন করা হয়। সংশ্লিষ্ট এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সঙ্গে কাজ করছেন স্বেচ্ছাসেবকরা। বাসিন্দাদের সেবা ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দিতে স্বেচ্ছাসেবকরা দায়িত্ব পালন করছেন। ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালনকালে স্বেচ্ছাসেবকদের কাছে বাসিন্দারা নানা ধরনের প্রয়োজনের কথা জানাচ্ছেন। এর মধ্যে বাসিন্দারা অদ্ভুত সব আবদারও জানাচ্ছেন। আবদার মেটাতে স্বেচ্ছাসেবকরা সব ধরনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। 

স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজাবাজারের বাসিন্দাদের অনেকে নানা ধরনের আবদার করছেন। এর মধ্যে রয়েছে রাত ৩টায় শ্যাম্পু, ব্রয়লার মুরগি, কোক, পান-জর্দা, গার্লিক পিজা, ঝাড়–র আবদারও রয়েছে। লকডাউনের শুরুর দিকে পূর্ব রাজাবাজার এলাকার স্বেচ্ছাসেবকরা সেখানকার এক বাসিন্দার কাছে থেকে ফোন পান। ফোনে ওই বাসিন্দা আধা কেজি মালটা ও চার প্যাকেট খাবার স্যালাইন এনে দিতে বলেন। দুপুর ১২টার দিকে আরেক স্বেচ্ছাসেবককে ফোনে এক বাসিন্দা জানান, তার বাসার ছাদে বারবিকিউ পার্টি হচ্ছে। এর জন্য ব্রয়লার মুরগি এনে দিতে হবে। বায়েজিদ হোসাইন নামে এক স্বেচ্ছাসেবক বলেন, বেশির ভাগ মানুষ প্রয়োজনীয় সাহায্য চায়। কিছু মানুষ মজা করার জন্য ফোন করে। শাওন নামে আরেক স্বেচ্ছাসেবক বলেন, কয়েকদিন আগে আমরা কন্ট্রোল রুমে ওষুধের জন্য অনুরোধ পাই। পরে যখন আমাদের এখান থেকে ফোন করে জানতে চাওয়া হলো, ওই বাসিন্দা দেশি পিয়াজ আর মোটা চালের দাম জানতে চাইলেন। আরেকজন রাত ১২টার দিকে ফোন করে জরুরি ওষুধ সরবরাহের জন্য বলেছিলেন। যখন স্বেচ্ছাসেবকরা প্রেসক্রিপশন নিয়ে লাজ ফার্মায় গেলেন, জানতে পারলেন এটা ব্রণের ওষুধ। ফোনে এক বাসিন্দা তার জন্য গার্লিক পিৎজা এনে দেওয়ার কথা বলেন। আরেকজন ফোন করে সমুচা ও নাগেট এনে দিতে বলেছেন। তিনি বলেন, আমরা দোকানে যোগাযোগ করে তাদের এই জিনিসগুলোও পৌঁছে দিয়েছি। স্বেচ্ছাসেবকরা বলেন, কয়েকদিন আগে ৮০ বছর বয়সী একজনের কাছ থেকে ফোন পাই। ওই ব্যক্তি জানান, তার জ্বর আছে ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু, তার পরিবারের সদস্যরা তাকে একটি কক্ষে বন্ধ করে রেখেছেন। বিষয়টি জানার পর স্বেচ্ছাসেবকরা সেখানে গিয়ে ওই ব্যক্তিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যান। সে সময় পরিবারে কোনো সদস্য ওই ব্যক্তিকে সহায়তার জন্য এগিয়ে আসেনি। কিন্তু আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা এগিয়ে গেছেন।

করোনা সংক্রমণের কারণে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজার এলাকাকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করে গত ১০ জুন সেখানে পরীক্ষামূলক লকডাউন দেওয়া হয়। এলাকাটিতে বাস করছেন প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় দেশের বিভিন্ন এলাকা জোনভিত্তিক ভাগ করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশ, স্থানীয়রা ও স্বেচ্ছাসেবকরা মিলে ওই এলাকার মানুষদের সহায়তা করছেন। পাশাপাশি নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণের জন্য টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনীও। এলাকার বাসিন্দাদের খাদ্যসহ প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো দিতে দুই শিফটে ৮০ জন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। তারা বলেন, আমরা মানুষের পাশে দাঁড়ানোর যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। মাঝেমধ্যে তাদের অনেকে আমাদের সঙ্গে ঠাট্টা করলেও আমরা হাসিমুখেই তাদের জন্য কাজ করছি।

সর্বশেষ খবর