শনিবার, ২০ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা
উত্তরায় তিন টুকরা লাশ

ব্যবসার টাকা আত্মসাৎ করতেই খুন

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনা মহামারীর মধ্যেই রাজধানীতে এক যুবকের তিন খ- লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত যুবক হেলাল উদ্দিন (২৬)। তিনি উত্তরার আজমপুরে মধ্যপাড়া মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটে বিকাশ ও ফ্ল্যাক্সিলোডের ব্যবসা করতেন। সেই চাঞ্চল্যকর খুনের রহস্য উদ্ঘাটন করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি-উত্তর)।

এ খুনে জড়িত থাকার অভিযোগে বৃহস্পতিবার রাতে শাহিনা আক্তার মনি সরকার (১৮) এবং তার মা রাশিদা আক্তারকে (৪৮) উত্তরা জামগাড়া এবং আবদুল্লাহপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে লুট হওয়া ৩৩ হাজার টাকাও জব্দ করা হয়। এ খুনের হোতা মনি সরকারের স্বামী চালস রূপম সরকারকে চিহ্নিত করেছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

তবে রূপম সরকারকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। গতকাল মনি সরকার ও রাশিদা আক্তারকে আদালতে হাজির করা হলে তারা খুনের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। ডিবি পুলিশ জানায়, দক্ষিণখানের তেঁতুলতলা বেকারির মোড়ের একটি বাড়ির দ্বিতীয় দুই রুমের ছোট বাসায় নিয়ে হেলালকে হত্যা করে রূপম সরকার ও তার স্ত্রী মনি সরকার। খুনের পর রূপমের শাশুড়ি রাশিদা আক্তার হেলালের কাছে থাকা টাকা লুট এবং খুনিদের পালাতে সহায়তা করে। ডিবি উত্তর বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান জানান, গত ১৪ জুন রাতে ফটোস্ট্যাট মেশিন বিক্রি করবে বলে হেলালকে ডেকে নিয়ে যায় মনি ও রূপম। এক পযায়ে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে হেলালকে চা খেতে দেয় চালস রূপম সরকার। চা খাওয়ার পর সেখানেই ঘুমিয়ে পড়েন হেলাল। এরপর তারা স্বামী-স্ত্রী ডিস এন্টেনার তার হেলালের গলায় পেঁচিয়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন। পরে লাশ গুম করার জন্য চালস রূপম সরকার সেটি তাদের বাথরুমে নিয়ে যান। সেখানে ধারালো চাকু ও বঁটি দিয়ে প্রথমে মাথা কাটেন, এরপর চেপে চেপে সারা শরীর থেকে রক্ত বের করেন। রক্ত শেষ হলে নাভী বরাবর আরেক খন্ড করেন। মাথাটি ছোট ব্যাগে ভরে পাশের একটি ডোবায় ফেলে দেন। আর ধড় ও পায়ের অংশ পৃথক বস্তায় ভরে অটোরিকশায় করে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে ফেলে দেন। খুনের হোতা রূপমকে ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে। পুলিশ জানায়, গত ১৬ জুন দক্ষিণখানের জামিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার পাশের ফাঁকা প্লট থেকে হেলালের লাশ উদ্ধার করা হয়। এর আগের দিন সকালে দক্ষিণখান এলাকার মুক্তিযোদ্ধা সড়কের ১০৯ নম্বর বাসার সামনে ও হাজী আবদুস সালাম সড়কের সংযোগস্থলে একটি বস্তা পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় লোকজন তাদের খবর দেন। পরে তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে বস্তা খুলে এক ব্যক্তির লাশের কোমর থেকে নিচের অংশ উদ্ধার করেন।এর মধ্যেই খবর আসে এয়ারপোর্ট এলাকার একটি মাঠে একটি লাশের অংশ পাওয়া গেছে। এয়ারপোর্টের ঈশান কলোনি এলাকার একটি মাঠ থেকে গলা থেকে নাভী পর্যন্ত অংশ উদ্ধার করা হয়। পরে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায় পুলিশ। জানা গেছে, হেলালের বাড়ি পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার দইহাড়ি গ্রামে। থাকতেন দক্ষিণ কুড়িলে ভাড়া বাসায়। এ ঘটনায় ১৫ জুন রাতেই তার বড়ভাই মো. হোজায়ফা দক্ষিণখান থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। তার বড় ভাই মো. হোজায়ফা মামলার এজহারে উল্লেখ করেন, হেলালের রুমমেট আল আমিনের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন, গত ১৪ জুন সকাল সাড়ে ৭টায় দোকান খোলার জন্য বাসা থেকে বের হন হেলাল। এরপর আর ফেরেননি। এমনকি উত্তরার আজমপুরে তার দোকানও বন্ধ পাওয়া যায়। হেলালের খোঁজখবর না পেয়ে পরদিন সোমবার নরসিংদী থেকে ঢাকায় আসেন। পরে তিনি তার ছোটভাই হেলালের নিখোঁজের বিষয়টি দক্ষিণখান থানায় জানালে পুলিশ তাকে লাশের নিচের অংশ বস্তাবন্দী অবস্থায় পাওয়ার খবর জানায়। বিমানবন্দর এলাকায় মাথাবিহীন লাশের আরেক অংশ পাওয়ার খবর জানান। এরপর লাশের ফিঙ্গার প্রিন্টের ছবি দেখে তিনি তার ভাইকে শনাক্ত করেন।

সর্বশেষ খবর