সোমবার, ২২ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

বাংলাদেশের পরিস্থিতি দেখে হতাশ চীনা চিকিৎসক দল

নেই সচেতনতা, কম পরীক্ষা, চিকিৎসক স্বাস্থ্যকর্মীর স্বল্পতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনাভাইরাসের মতো প্রাণঘাতী ভাইরাসের বিষয়ে জনগণের প্রয়োজনীয় সচেতনতা না থাকা, টেস্টের সংখ্যা খুবই কম থাকা এবং স্বল্প পরিমাণ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়ে চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছে ঢাকা সফর করা চীনা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল। দুই সপ্তাহের বেশি সময় বাংলাদেশে সফরে  দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থা ঘুরে দেখে ও চিকিৎসক-ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে কথা বলে যাওয়ার আগে এ মন্তব্য করল চীনা দলটি। গত ৮ জুন ঢাকা আসা দশ সদস্যের দলটি আজ সফর শেষে ঢাকা ত্যাগ করবে। তাদের মতে, আমাদের মনে হয় না বাংলাদেশ করোনা সংক্রমণের পিক টাইম এখনো এসেছে। সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে গতকাল ডিপ্লোম্যাটিক করেসপনডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিক্যাব) সঙ্গে এক ভার্চুয়াল আলোচনায় অংশ নেন চীনের বিশেষজ্ঞরা।  ডা. লি ওয়েনশিউর নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দলে চিকিৎসক, নার্সসহ সংক্রামক ব্যাধি নিরোধ বিশেষজ্ঞরা ছিলেন এ আলোচনায়। ঢাকায় চীনা দূতাবাসের উপপ্রধান হুয়ালং ইয়ান বলেন, ঢাকায় সফররত চীনা চিকিৎসক দলের সুপারিশ আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। আজ সোমবার তারা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন। এরপর সুপারিশ তৈরি করে দূতাবাসের মাধ্যমে দেওয়া হবে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের বিষয়ে জনগণের মধ্যে সচেতনতা খুবই কম। চিকিৎসকসহ চিকিৎসাকর্মীর সংখ্যাও খুবই কম। তবু স্বল্প সংখ্যক জনবল নিয়ে তারা অসাধারণ কাজ করে যাচ্ছেন। করোনা আক্রান্ত শনাক্তে টেস্ট কম হচ্ছে বলে পর্যবেক্ষণ জানিয়ে বিশেষজ্ঞ দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়, দেশের সব বিভাগে ল্যাবরেটরিও নেই। সেজন্য অনেককে তাদের টেস্টের জন্য ঢাকায় নমুনা পাঠাতে হয়। ফলে এখনো বাংলাদেশে করোনা টেস্টের পরিমাণ খুবই কম।  বেশি বেশি টেস্টের ওপর জোর দিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, দ্রুত পরীক্ষা, দ্রুত শনাক্তকরণ, দ্রুত আইসোলেশন এবং দ্রুত চিকিৎসা এখন খুব গুরুত্বপূর্ণ। সন্দেহজনক কেস থেকে সর্বস্তরে টেস্ট নিশ্চিত করতে হবে। করোনাভাইরাসের পিক টাইমে বাংলাদেশ পৌঁছেছে কিনা আলোচনায় এমন প্রশ্ন করা হলে হুয়ালং ইয়ান বলেন, এটি বলা মুশকিল। তবে লকডাউন অত্যন্ত কার্যকরী এবং চীনে এটি খুব ভালো কাজ করেছে। ওই সময়ে চীনের অন্যান্য জায়গা থেকে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা উহানে গিয়েছিলেন। এমনকি খাদ্যও পাঠানো হয়েছিল। বিনা অর্থে সেবাও দেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশে লকডাউন সুপারিশ করা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, এটি অত্যন্ত কার্যকরী। অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং পুনরায় শুরু করতে চিহ্নিত করতে হবে কোন অঞ্চলে রোগটি বেশি। ফ্যাক্টরি চিহ্নিত করতে হবে, যেখানে এই রোগ ছড়াতে পারে। র‌্যাপিড টেস্ট করা উচিত কিনা প্রশ্নে হুয়ালং ইয়ান বলেন, আমরা এটি সুপারিশ করি না। সবচেয়ে ভালো হচ্ছে পিসিআর টেস্ট।’ র‌্যাপিড টেস্ট হচ্ছে অ্যান্টিবডি টেস্ট এবং প্রথম সপ্তাহে রোগীর মধ্যে অ্যান্টিবডি থাকে না বলে তিনি জানান। প্লাজমা ট্রিটমেন্টের ক্ষেত্রে তিনি বলেন, সব রোগীর ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা যায় না। শুধু বিশেষ ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা উচিত। এ ছাড়া চীনে পাঁচটি কোম্পানি ভ্যাকসিন তৈরি করছে। ভ্যাকসিন তৈরির কাজ শেষ হয়ে গেলে বাংলাদেশ হবে প্রথম দেশগুলোর মধ্যে একটি, যারা ভ্যাকসিন পাবে। এই রোগকে ভয় পাওয়া থেকে সাবধানে থাকার পরামর্শ দিয়ে ইয়ান বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত রোগী পুষ্টি পাচ্ছে, আইসোলেশনে থাকছে, ততক্ষণ পর্যন্ত ডায়েট নিয়ন্ত্রণের কোনো প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশ সফরকালে চীনের প্রতিনিধি দলটি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের পরিদর্শন করে এবং মনোনীত হাসপাতাল, কোয়ারেন্টাইন সেন্টার ও পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতে কাজ করে। তারা করোনাভাইরাস মহামারী নিয়েও আলোচনা করে এবং করোনা নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসার জন্য নির্দেশনা এবং প্রযুক্তিগত পরামর্শও দেয় বাংলাদেশের সংশ্লিষ্টদের।

সর্বশেষ খবর