সোমবার, ২২ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

কুয়েতে এমপি পাপুলের ১৩৮ কোটি টাকা জব্দ

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

অর্থ ও মানব পাচারের অভিযোগে কুয়েতে গ্রেফতার হওয়া লক্ষ্মীপুর-২ আসনের এমপি কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল ও তার মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানির হিসাব জব্দ করা হচ্ছে। এর মধ্যে মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানির অ্যাকাউন্টে পাঁচ মিলিয়ন কুয়েতি দিনার বা বাংলাদেশি টাকায় ১৩৭ কোটি ৮৮ লাখ ৮৩ টাকা রয়েছে। ব্যাংক হিসাব জব্দের জন্য ইতিমধ্যে কুয়েতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আবেদন করেছেন সরকারি কৌঁসুলিরা। কুয়েতের পাবলিক প্রসিকিউটর অফিসের বরাত দিয়ে এসব তথ্য জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো। 

ইংরেজি দৈনিক আরব টাইমস জানিয়েছে, পাপুল ও তার কোম্পানির অ্যাকাউন্টে ৫ মিলিয়ন কুয়েতি দিনার রয়েছে। যার মধ্যে ৩ মিলিয়ন দিনার কোম্পানির মূলধন। সন্দেহভাজন এই অর্থ যাতে তোলা বা স্থানান্তর করা না যায় এবং আদালতে অপরাধ প্রমাণিত হলে সেগুলো বাজেয়াপ্ত করা যায়, সেজন্য নেওয়া হয়েছে এই পদক্ষেপ। আল কাবাস নামের আরবি দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংক হিসাবগুলো থেকে সন্দেহজনক লেনদেনের বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তারা ইতিমধ্যে নিশ্চিত হয়েছেন। এরপর থেকে ওই ব্যাংক হিসাব থেকে যাতে কোনোরকম লেনদেন না হয়, সে জন্য ব্যাংকগুলোকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আটক এমপির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হলে অর্থগুলো যাতে উদ্ধার করা যায়, সে জন্য পাবলিক প্রসিকিউশন এই পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে তদন্ত সূত্রগুলো জানিয়েছে। কুয়েতের তদন্ত কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে দেশটির সরকারি- বেসরকারি পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যক্তিকে নগদ, চেক ও নানা রকমের উপহার ঘুষ হিসেবে দিয়ে ব্যবসা পরিচালনার কথা স্বীকার করেছেন এমপি পাপুল। এসব তথ্যের ভিত্তিতে তার সহযোগী মূর্তজা মামুনকে আটকের পর বেশ কয়েকটি ব্যাংকের চেক জব্দ করেছেন তদন্ত কর্মকর্তারা, যা থেকে তদন্ত কর্মকর্তারা নিশ্চিত হয়েছেন, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে টাকা পাচার করেছেন বাংলাদেশের এমপি। এমপি পাপুল তদন্ত কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন, ভিসা বাণিজ্যের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে কুয়েতে কর্মী নেওয়ার জন্য দেশটির সরকারের একজন সরকারি কর্মকর্তাসহ তিনজনকে ২১ লাখ দিনার বা ৫৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছিলেন। পরে কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তাসহ তিনজনকে আটক করা হয়। বরখাস্ত করা হয় কুয়েতের জনশক্তি কর্তৃপক্ষের এক আন্ডার সেক্রেটারিকে। আটক তিনজনকে করা হচ্ছে জিজ্ঞাসাবাদ। মানব ও অবৈধ মুদ্রা পাচারের অভিযোগ ৬ জুন কুয়েত সিটির মারাফিয়া এলাকার বাসা থেকে এমপি পাপুলকে আটক করে কুয়েতের সিআইডি (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট)। পরদিন তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে সিআইডি। সিআইডির করা মানব পাচার ও অবৈধ মুদ্রা পাচার নিয়ে আগামী ৬ জুলাই শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন কুয়েতের পাবলিক প্রসিকিউশন। আদালত জামিন নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে আটক রাখা হবে। এর আগে পাচারের শিকার পাঁচ বাংলাদেশির অভিযোগের ভিত্তিতে পাপুলের বিরুদ্ধে মানব পাচার, অর্থ পাচার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগ এনেছে কুয়েতি প্রসিকিউশন।

সর্বশেষ খবর