মঙ্গলবার, ২৩ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

সুসময়েও চ্যালেঞ্জে আওয়ামী লীগ

৭১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ, সীমিত পরিসরে পালিত হবে কর্মসূচি

রফিকুল ইসলাম রনি

বাঙালি জাতির মুক্তির মূলমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে গণতান্ত্রিকভাবে জন্ম নেওয়া উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। জন্মের পর থেকে বেশির ভাগ সময়ই গেছে লড়াই-সংগ্রামে। হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্র সবই দেখেছে দলটি। ইতিহাস, অর্জন, উন্নয়ন, গৌরব ও সৃষ্টির দল আওয়ামী লীগের আজ প্রতিষ্ঠার দিন।  ইতিহাসের নানা বাঁক পেরিয়ে আজ ২৩ জুন ৭১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করবে এ দল। ১৯৪৯ সালের এই দিনে দলটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

দেশের প্রতিটি আন্দোলনে যেমন আওয়ামী লীগের অবদান রয়েছে, তেমনি টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার রেকর্ড কেবলমাত্র এই দলেরই। আবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকে বাংলাদেশের মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীও পালন করছে দলটি। আগামী বছর পালন করবে বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী। চলতি বছর ও আগামী বছরকে ‘মুজিববর্ষ’ পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু আকাশসম স্বপ্নের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে মহামারী করোনা নামক কালো মেঘ। তবে দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বলছেন- মানুষের ভালোবাসা ও সমর্থন নিয়ে আওয়ামী লীগ সব সময়ই বিজয়ী হয়েছে। কোনোদিন পরাজিত হয়নি। সামনের দিনগুলোতেও বাধা-বিপত্তি-দুর্যোগ-দুর্বিপাকসহ সব সংকট মোকাবিলা করে এগিয়ে যাবে দলটি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ এখন সবচেয়ে সুসময় পার করছে। এই মুহূর্তে রাজপথে নেই বিরোধী দলের আন্দোলন-সংগ্রাম। ফলে উজ্জীবিতই ছিলেন দলটির নেতা-কর্মী-সমর্থকরা। তবে করোনা নামক মহামারীতে দলটির শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতাকে হারানো এবং মহামারী করোনা সংকট কাটিয়ে ওঠাই আওয়ামী লীগের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। আরেকটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে থাকা। মুজিববর্ষের শুরুতেই দলটির সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গৃহহীনদের ঘর করে দিতে দেশব্যাপী দলীয় নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে তালিকা চেয়েছিলেন। দলীয় সভানেত্রীর এই ঘোষণা বাস্তবায়ন করাই এখন আওয়ামী লীগের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া নির্দেশনাগুলো মেনে চললে এত ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি হতো না বলে মন্তব্য করেছেন দলটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন। আমির হোসেন আমু বলেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে আমরা নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছিলাম। অতি অল্প সময়ে আমাদের মধ্যম আয়ের দেশে পদার্পণ করার কথা। এখন সারা দুনিয়ায় করোনাভাইরাসের আঘাতে তছনছ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। আজকে আমাদের প্রধানমন্ত্রী বারবার মানুষকে সাহস দিচ্ছেন। সহযোগিতার হস্ত প্রসারিত করেছেন। গ্রামপর্যায়ের মানুষ যাতে অভুক্ত না থাকে সেজন্য দীর্ঘদিন ধরে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. হারুন-অর-রশিদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আওয়ামী লীগ এখন সবচেয়ে সুসময়ে রয়েছে। কিন্তু তারপরও সামনে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ আছে। এই চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়তে হবে। সব প্রতিষ্ঠানকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের উত্থান সাময়িক নিষ্ক্রিয় হলেও তারা থেমে যায়নি। আরেকটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, আওয়ামী লীগ গণমানুষের দল। কোনোভাবেই জনগণ থেকে বিচ্যুত হয়ে আমলানির্ভর ও প্রশাসননির্ভর হয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করে টিকে থাকার চেষ্টা করা যাবে না।

আওয়ামী লীগের এক প্রেসিডিয়াম সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিরোধী দলের আন্দোলন সংগ্রাম মোকাবিলা করতে হচ্ছে না। তিন মেয়াদে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আছি। বলা যায় এখন সুসময় চলছে। তবে করোনার এই পরিস্থিতি সামনে চলে আসবে এটা কখনো ভাবতে পারিনি। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় করোনা মোকাবিলাই আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

আওয়ামী লীগের জন্ম ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ১৯৪৭ সালে সম্পূর্ণ পৃথক দুটি ভূখ-, স্বতন্ত্র ভাষা ও সংস্কৃতির অঞ্চল নিয়ে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মাত্র ৪ মাস ২০ দিনের মধ্যে তখনকার তরুণ যুবনেতা শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি গঠন করেন সরকারবিরোধী ছাত্র সংগঠন পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ। এরই ধারাবাহিকতায় পরের বছর ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার স্বামীবাগে কে এম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর উদ্যোগে আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে গঠন করা হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সভাপতি, টাঙ্গাইলের শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক, শেখ মুজিবুর রহমানকে (কারাবন্দী ছিলেন) যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক করে গঠিত হয় আওয়ামী (মুসলিম) লীগের প্রথম কমিটি। ১৯৫৫ সালে এই দল ধর্মনিরপেক্ষতাকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে। দলের নামকরণ হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ।’ মুক্তিযুদ্ধের পরে পাকিস্তান শব্দটি বাদ দিয়ে দলটি ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ নামে কার্যক্রম শুরু করে।

এই আওয়ামী লীগের মাধ্যমে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালে বাংলার জনগণকে বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে স্বাধিকার আদায়ের জন্য ঐতিহাসিক ৬ দফা ঘোষণা করেন। সেই ৬ দফা আন্দোলনের পথ বেয়েই ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০-এর নির্বাচনে বাঙালির নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ ও ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের সফল নায়ক ছিলেন তৎকালীন আওয়ামী লীগ সভাপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

৭১ বছরের পথপরিক্রমায় দেশের বৃহত্তম ও প্রাচীন রাজনৈতিক দলটিকে অনেক চড়াই-উতরাই পেরোতে হয়েছে। স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর অনেকটা অস্তিত্ব সংকটেই পড়ে আওয়ামী লীগ। দলের ভিতরেও শুরু হয় ভাঙন। এর মধ্যে আবদুল মালেক উকিল-জোহরা তাজউদ্দীনের দৃঢ়তায় সংকট কাটিয়ে উঠতে শুরু করে দলটি। ১৯৮১ সালে দলের সভানেত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর দেশে ফিরতে সক্ষম হন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর এক দশক ধরে সারা দেশ ঘুরে দলকে সংগঠিত করেন তিনি। ১৯৯৬ সালে তার নেতৃত্বেই ২১ বছর পর সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আবার সরকার গঠন করে দলটি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে পুনরায় বিজয়ী হয়। এরপর ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। জন্মলগ্ন থেকেই প্রতি বছর দিবসটি ঘিরে বর্ণাঢ্য আয়োজন করে দলটি। কিন্তু এবার সীমিত পরিসরে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন দলটির সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

৭১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই দিনে আওয়ামী লীগ আজ কোথায় দাঁড়িয়ে।  রাষ্ট্র পরিচালনার ইতিহাসে প্রথম টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় থাকলেও অসীম ত্যাগ ও আদর্শনির্ভর এই রাজনৈতিক দলটি স্বাধীন স্বকীয়তা ধরে রাখতে পারেনি। টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকলেও প্রবল শক্তিশালী সাংগঠনিক কাঠামো ধরে রাখা যায়নি।  মাঠপর্যায়ে দলটির দেখা দিয়েছে সাংগঠনিক দুর্বলতা। সবকিছু ছাপিয়ে মাটি ও মানুষের দল আওয়ামী লীগের কাছেই জনগণের প্রত্যাশা অনেক। সে প্রত্যাশা পূরণে কতটা এগোতে পারছে দলটি, এ জিজ্ঞাসা সবার। আবার রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, গণমানুষের দলটি ধীরে ধীরে আমলানির্ভর হচ্ছে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে উপহার দিয়েছেন মহামূল্যবান স্বাধীনতা। তাঁরই কন্যা শেখ হাসিনা ভূমিধস বিজয় নিয়ে ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা বিনির্মাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়ার পাশাপাশি ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে বাঙালি জাতিকে উপহার দিয়েছেন গভীর সমুদ্রে বাংলাদেশের সমপরিমাণ আরেকটি বাংলাদেশ। টানা তিন দফায় ক্ষমতায় থেকে জাতিকে উপহার দিয়েছেন উন্নয়ন-অগ্রগতি ও ডিজিটালাইজড নতুন প্রজন্মের উপযুক্ত বাংলাদেশ। ভারতের সঙ্গে ঐতিহাসিক স্থলসীমান্ত চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে দীর্ঘ ৬২ বছর পর ছিটমহলবাসীকে দিয়েছেন স্বাধীনতার স্বাদ। স্থল-সমুদ্র বিজয়ের পর সর্বশেষ মহাকাশে নিজস্ব স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে মহাকাশও জয় করেছে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যারা : ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন প্রথম কাউন্সিলে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন শামসুল হক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন প্রথম কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক। দলের দ্বিতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় ১৯৫৩ সালে ময়মনসিংহে। এতে সভাপতি হন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৫৫ সালের ২১-২৩ অক্টোবর ঢাকার সদরঘাটের রূপমহল সিনেমা হলে দলের তৃতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে আওয়ামী লীগ অসাম্প্রদায়িক সংগঠনে পরিণত হয়। দলের নতুন নামকরণ হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ। নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতি হোসেন শহীদ  সোহরাওয়ার্দী এ প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন। পরে কাউন্সিল অধিবেশনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে মওলানা ভাসানী ও বঙ্গবন্ধু  শেখ মুজিব বহাল থাকেন। ১৯৫৭ সালে কাগমারি সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক নির্ণয়ে সোহরাওয়ার্দী-ভাসানীর মতপার্থক্যের কারণে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগ ভেঙে যায়। ভাসানীর নেতৃত্বে গঠিত হয় ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)। আর মূল দল আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ ও সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান অপরিবর্তিত থাকেন। ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি হলে আওয়ামী লীগের কর্মকান্ড স্থগিত করা হয়। দীর্ঘ ছয় বছর ‘আন্ডারগ্রাউন্ড’ রাজনীতি করার পর ’৬৪ সালে দলটির কর্মকান্ড পুনরুজ্জীবিত করা হয়। এতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ-শেখ মুজিবুর রহমান অপরিবর্তিত থাকেন। ১৯৬৬ সালের কাউন্সিলে দলের সভাপতি পদে নির্বাচিত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তাজউদ্দীন আহমদ। এর পরে ’৬৮ ও ’৭০ সালের কাউন্সিলে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অপরিবর্তিত থাকেন। এই কমিটির মাধ্যমেই পরিচালিত হয় মহান মুক্তিযুদ্ধ। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রথম কাউন্সিলে সভাপতি হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুুর রহমান। ’৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু সভাপতির পদ ছেড়ে দিলে সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয় এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে। সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল থাকেন জিল্লুর রহমান।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আসে আওয়ামী লীগের ওপর মরণাঘাত। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলে আওয়ামী লীগের রাজনীতি আবারও স্থগিত করা হয়। ১৯৭৬ সালে ঘরোয়া রাজনীতি চালু হলে তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা মিজানুর রহমান  চৌধুরী ও  মোল্লা জালালউদ্দিনকে নিয়ে নেতৃত্বের কোন্দল শুরু হয়। ওই সময় আওয়ামী লীগের ঐক্য রক্ষা ও পুনরুজ্জীবিত করতে সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীনকে আহ্বায়ক করে একটি আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। ’৭৮ সালের কাউন্সিলে দলের সভাপতি করা হয় আবদুল মালেক উকিলকে এবং সাধারণ সম্পাদক হন আবদুর রাজ্জাক।

এর পরই শুরু হয় আওয়ামী লীগের উত্থানপর্ব, উপমহাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে গড়ে তোলার মূল প্রক্রিয়া। সঠিক নেতৃত্বের অভাবে দলের মধ্যে সমস্যা দেখা দিলে নির্বাসনে থাকা বঙ্গবন্ধুকন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। দেশে ফেরার আগেই ’৮১ সালের কাউন্সিলে শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী  এবং সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল থাকেন আবদুর রাজ্জাক। আবারও আঘাত আসে দলটির ওপর। ’৮৩ সালে আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে দলের একটি অংশ পদত্যাগ করে আওয়ামী লীগ  থেকে বেরিয়ে বাকশাল গঠন করে। এ সময় সৈয়দা সাজেদা  চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ’৮৭ সালের কাউন্সিলে শেখ হাসিনা সভানেত্রী ও সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক হন। ’৯২ ও ’৯৭ সালের সম্মেলনে শেখ হাসিনা এবং প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুুর রহমান দলের সভানেত্রী ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০০ সালের বিশেষ কাউন্সিলে একই কমিটি বহাল থাকে। ২০০২ সালের ২৬ ডিসেম্বর জাতীয় কাউন্সিলে শেখ হাসিনা এবং প্রয়াত আবদুল জলিল দলের সভানেত্রী ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালের ২৪ জুলাই, ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের দুটি কাউন্সিলে শেখ হাসিনা সভানেত্রী বহাল থাকেন এবং সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। ২০১৬ সালের ২৭ ও ২৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে সভানেত্রী পদে শেখ হাসিনা বহাল থাকলেও নতুন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন বর্তমান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ২০-২১ ডিসেম্বর জাতীয় কাউন্সিলে সভানেত্রী পদে শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক পদে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বহাল থাকেন। 

কর্মসূচি : টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে এবার আরও জাঁকজমকপূর্ণভাবে দিনটি পালিত হবে- এমন প্রত্যাশা ছিল নেতা-কর্মীদের। কিন্তু করোনাভাইরাস সৃষ্ট পরিস্থিতি সেই স্বপ্ন ও পরিকল্পনায় বাদ সেধেছে। ফলে মুজিববর্ষেও সীমিত পরিসরেই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে দলটিকে। জানা গেছে, এবার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন সকাল ৬টায় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যলয়ের সামনে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে সকাল ৯টায় ধানমন্ডির-৩২ নম্বরে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির কয়েকজন সিনিয়র সদস্য। বিকালে জাতির পিতাসহ ১৫ আগস্ট নিহত সব শহীদ, জাতীয় চার নেতা, মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদ, বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে মৃত্যুবরণকারী আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত সবার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত ও শান্তি এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সব সদস্যের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোয়া ও মোনাজাত করা হবে। এ ছাড়া দিনটি উপলক্ষে টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল। এই দলে রয়েছেন- প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক  আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সাহাবুদ্দিন ফরাজী।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর