মঙ্গলবার, ২৩ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

টেস্টের ব্যবস্থা নেই ৪৩ জেলায়

জয়শ্রী ভাদুড়ী

লক্ষ্মীপুর জেলায় এ পর্যন্ত করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়েছেন ৫৯৫ জন। করোনার ছোবলে প্রাণ হারিয়েছেন ১৩ জন। প্রতিদিনই বাড়ছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। কিন্তু এ জেলায় নেই করোনা টেস্টের ল্যাব। শুধু এই জেলা নয়, দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৪৩ জেলায় নেই করোনা টেস্টের ব্যবস্থা।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘দেশের ৬২টি ল্যাবে করোনা টেস্ট চলছে। রাজধানীতে ৩২টি এবং সারা দেশে ৩০টি ল্যাবে করোনা পরীক্ষা চলছে। আমরা ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ল্যাব ও ব্যুথ বাড়ানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।’

লক্ষ্মীপুর জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, এ জেলায় উপসর্গ থাকা ব্যক্তিদের নমুনা সংগ্রহ করে পাশের জেলা নোয়াখালীর আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজে ও নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) করোনা ল্যাবে পাঠানো হয়। এখানে টেস্ট শেষে সিভিল সার্জন অফিস ঘুরে রোগীর কাছে রিপোর্ট পৌঁছায়। লক্ষ্মীপুরের পাশের জেলা ফেনীতেও নেই করোনা টেস্ট ল্যাব। পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে করোনাভাইরাস টেস্টের কোনো ব্যবস্থা নেই। ২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রাঙামাটির জনসংখ্যা পাঁচ লাখ ৯৫ হাজার ৯৮৯ জন। খাগড়াছড়ির জনসংখ্যা ছয় লাখ ১৩ হাজার ৯১৭ জন এবং বান্দরবানের জনসংখ্যা চার লাখ চার হাজার ৯৩ জন। এই ১০ বছরে জনসংখ্যা আরও বেড়েছে বলে অনুমেয়। কিন্তু এই তিন জেলার রোগীদের করোনা টেস্টের জন্য ভরসা চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের ল্যাব। চট্টগ্রামেই প্রতিদিন আক্রান্ত বাড়ছে। ল্যাবে নমুনার স্তূপ জমছে। এত চাপ সামলাতে না পেরে ঢাকায় কিছু নমুনা পাঠানোও হয়েছে। এর মধ্যে আশপাশের জেলার রোগীদের নমুনা টেস্ট চলছে এখানে। এতে করে রিপোর্ট হাতে পাওয়ার আগেই রোগীর অবস্থার অবনতি ঘটছে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মোস্তফা খালেদ বলেন, ‘বর্তমানে রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলায় করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয় না। এ তিন জেলার নমুনা পরীক্ষা করা হয় চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডি এবং ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে। তিন জেলা থেকে গড়ে দৈনিক ৪০-৫০টি নমুনা পরীক্ষার জন্য চট্টগ্রামের ল্যাবগুলোতে পাঠানো হয়। তবে প্রতিটি জেলায় একটি করে ল্যাব স্থাপনের পরিকল্পনা আছে সরকারের। সেই হিসাবে এই তিন জেলায়ও আগামীতে ল্যাব স্থাপন করা হবে। কিন্তু তা সময় সাপেক্ষ বিষয়।’ স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এখন দেশের ২১টি জেলায় করোনা টেস্টের ব্যবস্থা রয়েছে। এর মধ্যে বিভাগীয় শহরে একাধিক ল্যাবে করোনা টেস্ট চলছে। চট্টগ্রামে পাঁচটি ল্যাবে করোনা টেস্ট চলছে, রাজশাহীতে দুটি ল্যাবে করোনা টেস্ট চলছে। কিন্তু পাশের জেলা নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনা টেস্টের ব্যবস্থা নেই। রংপুর, দিনাজপুরে করোনা টেস্টের ব্যবস্থা রয়েছে কিন্তু পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, গাইবান্ধাতে টেস্ট ল্যাব নেই। পাশের জেলা বগুড়ার ল্যাবে এসব জেলার উপসর্গ থাকা রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয়। ভাইরোলজি বিশেষজ্ঞ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, সংক্রমণ ঠেকাতে চাইলে করোনা টেস্টের ল্যাব বাড়াতে হবে। উপসর্গ থাকা এবং আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে যাওয়া ব্যক্তিদের আলাদা করে নমুনা টেস্ট করাতে হবে। নয়তো ঘনবসতির এই দেশে মহামারী থামানো কঠিন হয়ে পড়বে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর