বুধবার, ২৪ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

সীমিত পরিসরে হজ

নিবন্ধিতরা আগামীতে অগ্রাধিকার পাবেন চাইলে টাকা তুলে নিতে পারবেন

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে সৌদি নাগরিক এবং দেশটিতে অবস্থানরত বিদেশিরা ছাড়া অন্য কেউ এবার হজ পালন করতে পারবেন না। তাই বাংলাদেশের নিবন্ধিত হজযাত্রীরা এবার হজে অংশ নিতে পারছেন না। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নিবন্ধিত হজযাত্রীরা চাইলে তাদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে। নিবন্ধনকারীরা টাকা রেখে দিলে তাদের আগামী বছরে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। জানতে চাইলে ধর্ম সচিব নুরুল ইসলাম বলেন, ‘কোনো জটিলতা হবে না, সমুদয় টাকা আমাদের ব্যাংকে রয়েছে। ব্যাংকে তারা যেভাবে টাকা জমা দিয়েছেন সেভাবেই ফেরত নিতে পারবেন।’ হাব সভাপতি এম শাহাদাত হোসেন বলেন, বাংলাদেশে যেসব হজযাত্রী ২০২০ সালে নিবন্ধন করেছেন, তারা এ বছর হজে যেতে পারবেন না। তবে ২০২১ সালে তারা সবাই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যেতে পারবেন।

সীমিত পরিসরে হজ : সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুবরাজ ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ সোমবার সন্ধ্যায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনকে ফোন করে জানান, কভিড-১৯ মহামারীজনিত পরিস্থিতির কারণে এ বছর প্রথাগত কোনো হজ পালন করতে দেওয়া হবে না। এ বছর কেবল সীমিতসংখ্যক (অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক উভয়ই এক হাজারের কম) লোককে হজ করতে দেওয়া হবে। এই পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্তটিকে ‘সঠিক’ বলে অভিহিত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন সৌদি যুবরাজকে ফোন দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানান। সৌদি আরব গতকাল বলেছে, করোনাভাইরাসের কারণে কেবল ‘খুব সীমিতসংখ্যক’ লোককে এ বছর হজ করার অনুমতি দেওয়া হবে, যেখানে প্রতিবছর বিশ্ব থেকে প্রায় ২০ লাখ লোক একসঙ্গে হজ পালন করেন। সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে বলছে, ‘হজে অংশ নিতে পারবেন সৌদিতে অবস্থান করা বিভিন্ন দেশের খুবই অল্পসংখ্যক মানুষ।’ বর্তমান করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতি বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের পরামর্শে বৈশ্বিক মহামারী থেকে মানুষের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় নিয়েই আন্তর্জাতিকভাবে বহির্বিশ্বের হজ পালনকারীরা হজে অংশ নিতে পারবেন না। জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২৮ জুলাই থেকে হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে।

চাইলে টাকা ফেরত : বাংলাদেশ থেকে কেউ হজে অংশ নিতে না পারলেও নিবন্ধিতরা চাইলেই টাকা ফেরত দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ধর্ম সচিব নুরুল ইসলাম। এজেন্সিগুলো বলছে, মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা পেলেই টাকা ফেরত দেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে এবং আবার হজে যেতে আরও দুই বছর অপেক্ষায় থাকতে হবে। তবে টাকা ফেরত পেতে কোনো জটিলতা হবে না জানিয়ে ধর্ম সচিব জানান, দু-এক দিনের মধ্যেই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

ধর্ম সচিব বলেন, ‘কোনো জটিলতা হবে না, সমুদয় টাকা আমাদের ব্যাংকে রয়েছে। আজ-কালের মধ্যেই আমরা ব্যবস্থা নেব। ব্যাংকে তারা যেভাবে টাকা জমা দিয়েছেন সেভাবেই ফেরত নিতে পারবেন।’

নিবন্ধিতরা অগ্রাধিকার পাবেন : জানা গেছে, সরকার সার্কুলার দিলেই টাকা ফেরত দেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে। যারা টাকা ফেরত নেবেন না, ২০২১ সালে হজে যাওয়ার ক্ষেত্রে তারা অগ্রাধিকার পাবেন।

জানতে চাইলে হজ এজেন্ট মাসুদউর রহমান বলেন, সরকার যখন ঘোষণা দেবে, তখনই খুব কম সময়ে টাকা ফেরত দিয়ে দেবে এজেন্সিগুলো।

হাব সভাপতি এম শাহাদাত হোসেন বলেন, বাংলাদেশে যেসব হজযাত্রী ২০২০ সালে নিবন্ধন করেছেন, তারা এ বছর হজে যেতে পারবেন না। তবে ২০২১ সালে তারা সবাই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যেতে পারবেন।

লোকসানে এজেন্সিগুলো : সার্বিকভাবে হজ এজেন্সিগুলো আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হলেও এ সিদ্ধান্তকে তারা মেনে নিয়েছে। রাজধানীর বিজয়নগরের হজ, ওমরাহ ও এয়ার টিকিটের ব্যবসায়ী কবির হোসেন জানান মাসে দেশে ও সৌদি আরবে ১০ জন স্টাফসহ অফিস চালাতে তিন লাখ টাকা খরচ করেন। মূলত হজ ও ওমরাহ যাত্রীদের সৌদি পাঠানো, সেখানে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থার পাশাপাশি এয়ার টিকিট কেটে দেওয়ার মাধ্যমে অফিস ও সংসারের খরচ মিটিয়ে ভালোভাবেই জীবন-যাপন করছিলেন। কিন্তু করোনা সংক্রমণের কারণে তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে আকাশপথে চলাচল বন্ধ থাকায় বিমানের টিকিট কাটা থেকে আয় বন্ধ। এ ছাড়া ওমরাহতে লোক পাঠানো বন্ধ হওয়ার পর থেকে সেখান থেকেও আয় বন্ধ। কবির হোসেন বলেন, আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হলেও করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এ বছরের হজ পালনে সৌদি আরবের এ সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। সৌদি সরকার বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রী নিলেও জেদ্দা কিংবা মদিনা বিমানবন্দরে নামার পর করোনা ধরা পড়লে পরবর্তী ফ্লাইটে তাকে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সে ক্ষেত্রে এজেন্সিগুলো আরও বিপাকে পড়ত। কারণ করোনাভাইরাসের নমুনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা অনেক সময় পজিটিভ হলেও নেগেটিভ এবং নেগেটিভ হলেও পজিটিভ আসার প্রমাণ রয়েছে। সব মিলিয়ে সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন তিনি। বেসরকারিভাবে নিবন্ধিত ৬১ হাজার ১৪২ জনের কাছ থেকে বিমান ভাড়া, মুয়াল্লিম ও নিবন্ধন ফি বাবদ জনপ্রতি ১ লাখ ৮২ হাজার ৭৪২ টাকা হিসেবে মোট ১ হাজার ১১৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকা নেওয়া হয়েছে। তবে সরকারিভাবে নিবন্ধিত ৩ হাজার ৪৫৭ জনের কাছ থেকে প্যাকেজ অনুসারে পুরো টাকাই নিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর