শিরোনাম
বুধবার, ২৪ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

জার্মানিতে আবার লকডাউন, বিশ্বে আক্রান্ত ৯০ লাখ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ব্রাজিল ও ভারতের মতো জনবহুল দেশগুলোতে প্রাদুর্ভাব বাড়ার মধ্য দিয়ে বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৯০ লাখ ছাড়িয়েছে। বিশ্বে মারাত্মক ছোঁয়াচে এই রোগে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন চার লাখ ৭০ হাজারের বেশি মানুষ। গত ডিসেম্বরের ৩১ তারিখ চীন উহান শহরে প্রাদুর্ভাবের কথা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে জানানোর পর মে মাসের মাঝামাঝিতে গিয়ে বিশ্বজুড়ে কভিড-১৯ শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৫ লাখে। এরপর মাত্র পাঁচ সপ্তাহে সংখ্যাটি দ্বিগুণ হলো। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে সাত সপ্তাহে। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই শনাক্ত হয়েছে ২২ লাখ বা ২৫ শতাংশ। দেশটিতে এখন নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বিশ্বে এখন করোনাভাইরাসের বড় একটি ‘হটস্পট’ লাতিন আমেরিকা। বিশ্বের মোট আক্রান্তের ২৩ শতাংশই এই অঞ্চলে। চিলি, আর্জেন্টিনা, কলম্বিয়া, পানামা, বলিভিয়া, গুয়াতেমালা ও ব্রাজিলে পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ৫৪ হাজার রোগী শনাক্ত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পর সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে এ অঞ্চলের সবচেয়ে জনবহুল দেশ ব্রাজিলে। আক্রান্তের হিসাবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ব্রাজিল। দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১১ লাখ ১১ হাজার ৩৪৮। এর মধ্যে ৫১ হাজার ৪০৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। রাশিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ লাখ ৯২ হাজার ২৮০। এর মধ্যে আট হাজার ২০৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। ভারত শনাক্তের সংখ্যার দিক দিয়ে রাশিয়াকে পেছনে ফেলে তালিকার তৃতীয় অবস্থানের দিকে এগোচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন এক লাখ ২০ হাজারের বেশি মানুষ। ব্যাপকভাবে করোনাভাইরাসের পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকার পরও সরকারি হিসাবে ব্রাজিলে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫০ হাজার। চীনের বেইজিংয়ে নতুন করে উপদ্রব দেখা দেওয়ার পর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কেবল রাজধানীতেই দিনে ১০ লাখ বাসিন্দাকে পরীক্ষা করার সামর্থ্য তাদের আছে। যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ পরীক্ষা করা হয়েছে পাঁচ লাখ ৯৪ লাখ। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। উৎপত্তিস্থল চীনে ৮৩ হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হলেও সেখানে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব কমে গেছে। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশে এই ভাইরাসের প্রকোপ বাড়ছে। ডব্লিউএইচওর জরুরি বিষয়ক শীর্ষ বিশেষজ্ঞ মাইক রায়ান বলেছেন, নিশ্চিতভাবেই সংখ্যাগুলো বাড়ছে। কারণ একই সময়ে বিশ্বের অনেক জনবহুল দেশে ও বিশ্বজুড়ে মহামারীটি ছড়িয়ে পড়ছে। কিছু সংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে পরীক্ষা বাড়ার ভূমিকা থাকতে পারে আর ভারতের মতো দেশগুলো নিশ্চিতভাবেই পরীক্ষা বাড়িয়েছে, কিন্তু পরীক্ষার কারণেই এমনটি ঘটছে বলে আমরা মনে করি না। রায়ান বলেন, “জনসংখ্যার অনুপাতে দেশগুলোতে এখনো পরীক্ষার সংখ্যা কম আর সামগ্রিকভাবে পরীক্ষায় পজিটিভ আসার হার এখনো অনেক বেশি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি, এই প্রবণতা বিস্তৃত পরীক্ষার প্রতিফলন নয় কিন্তু আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা সম্ভবত হিসাবে আসছে না। জার্মানিতে আবারও লকডাউন : মাংস প্যাকেটজাত করার একটি কারখানায় করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর জার্মানিতে নতুন করে লকডাউন আরোপ করা হচ্ছে। দেশের নর্থ-রাইন-ওয়েস্টফারিয়া প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, গুটেরস্লো জেলায় যেখানে ৩৬০,০০০ লোকের বসবাস- লকডাউন আরোপ করা হচ্ছে। ৩০ জুন পর্যন্ত এই লকডাউন বলবত থাকবে। টনিজ নামে ওই মাংস প্যাকেট-জাত করার কারখানার কমপক্ষে ১৩০০ শ্রমিক-কর্মচারীর শরীরে ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর তাদের সবাইকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। জার্মানিতে মে মাসে লকডাউন তুলে নেওয়ার পর এই প্রথম তা আবার আরোপ করা হচ্ছে। জার্মানি যেভাবে করোনাভাইরাস মোকাবিলা করেছে, তা সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। তবে সে দেশে নতুন করে সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। ভারতে নারীর মৃত্যু বেশি : গবেষণালব্ধ তথ্য-উপাত্ত বলছে, বিশ্বজুড়ে মহামারী কভিড-১৯ রোগে নারীদের তুলনায় পুরুষদের মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। উদাহরণ স্বরূপ ইতালি, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রে নারীদের তুলনায় অনেক বেশি পুরুষ আক্রান্ত হচ্ছেন আর আক্রান্ত হয়ে যারা মারা যাচ্ছেন তাদের বেশির ভাগই হচ্ছেন পুরুষ। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়েরর ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথের বিজ্ঞানী সেবরা ক্লেইন, ভাইরাসজনিত রোগের সংক্রমণের ক্ষেত্রে লৈঙ্গিক পার্থক্য নিয়ে বিশেষজ্ঞ এই বিজ্ঞানী বলছেন, ‘করোনাভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে বয়স্কদের মতোই সমান ঝুঁকিতে রয়েছে পুরুষরাও। কিন্তু ভারতে সেই চিত্র কিছুটা গোলমেলে ও হতবাক করার মতো। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের একদল বিজ্ঞানীর করা নতুন এক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, যদিও ভারতের আক্রান্তদের মধ্যে বেশির ভাগই হলেন পুরুষ কিন্তু মৃত্যুর ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে পুরুষদের তুলনায় নারীদের ঝুঁকি অনেক বেশি।

সর্বশেষ খবর