বুধবার, ২৪ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনা মোকাবিলায় সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে : ডা. ফেরদৌস

তানভীর আহমেদ

করোনা মোকাবিলায় সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে : ডা. ফেরদৌস

ডা. ফেরদৌস যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে এসে শেষ করেছেন ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন। তার মতে, পর্যাপ্ত করোনা পরীক্ষা না করানোয় বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতির আসল চিত্র বোঝা যাচ্ছে না। তবে সংক্রমণ এখনো চূড়ায় পৌঁছায়নি। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের আরও কঠোর ভূমিকা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে ডা. ফেরদৌস বলেন, ‘পর্যাপ্ত পরীক্ষা না হওয়ায় বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতির  আসল চিত্র পাওয়া যাচ্ছে না। নিউইয়র্কে প্রথম তিন সপ্তাহের যে চিত্র ছিল বাংলাদেশ এখনো সে পরিস্থিতিতে আছে। আশপাশে আরও অনেকে করোনা আক্রান্ত রয়ে গেছেন। তথ্য-উপাত্ত নিয়ে সেন্ট্রাল ডাটাবেইস নেই।’ বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ আগস্ট, সেপ্টেম্বরের দিকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানোর আশঙ্কা করেছেন তিনি। ডা. ফেরদৌস বলেন, ‘তিন ধাপে করোনার সর্বোচ্চ সংক্রমণ দেখা যায়। প্রথমত পর্যায়ে যারা কর্মজীবী তারা আক্রান্ত হন। দ্বিতীয় ধাপে, কর্মজীবীদের মাধ্যমে তার ঘরে ও পরিবারের মধ্যে ৫ জন বা ৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন এমন খবর আসতে থাকে। তৃতীয় ও সর্বোচ্চ পর্যায়ে দেখা যায়, ঘরের বয়স্ক মানুষেরা করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন। বয়স্করা হাসপাতালে আসতে থাকেন শেষদিকে। বয়সে তরুণদের মৃত্যুহার এক থেকে দেড় শতাংশ মাত্র। ৬৫ বছরের ওপর যাদের বয়স তাদের মৃত্যুহার ১৫ শতাংশ। তাই মৃত্যুর সংখ্যা শেষের দিকে আরও বাড়ে। আশঙ্কা করছি, এমন পরিস্থিতি বাংলাদেশে আগস্ট, সেপ্টেম্বরের দিকে আসতে পারে।’ বিশ্বের কোনো দেশই করোনা ঠেকানোর পূর্ব পরিকল্পনা শতভাগ কাজ করেনি মনে করিয়ে দিয়ে ডা. ফেরদৌস বলেন, ‘দুনিয়ার কোনো দেশেরই স্ট্র্যাটেজি বা করোনা মোকাবিলায় কর্মপরিকল্পনা পুরোপুরি কাজ করেনি। হাসপাতালে সিস্টেম ব্রেকডাউন করেছে। হাসপাতালে বহির্বিভাগ রোগীর চিকিৎসা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নিউইয়র্কের মতো উন্নত স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী দেশগুলোর বহির্বিভাগও রোগীর চাপ সামলাতে পারেনি। পুরো ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল। মহামারীতে মাত্র দুই শতাংশ রোগী হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা করাতে পারবেন। বাকিদের অবস্থা কী হবে? সবাই কথা বলছে ভেন্টিলেটর, রেমডেসিভির, মৃত্যুর সংখ্যা এসব নিয়ে। হাসপাতালে যাওয়া দুই শতাংশ রোগী নিয়ে কথা হচ্ছে, ঘরে থাকা বাকি ৯৮ শতাংশ রোগীর কী হবে? বহির্বিভাগে এখন শক্তিশালী একটি ভূমিকা থাকার কথা। সারা বিশ্বেই এ পর্যায়ে উন্নতির চেষ্টা করছে। কমিউনিটি পর্যায়ে যত রোগ ঠেকাতে পারবেন হাসপাতালের ওপর চাপ তত কমবে। মানুষকে বোঝাতে হবে, এখানে গেলেই স্বাস্থ্যকর্মী আছে, তার কাছে গেলে বা ফোনে চিকিৎসা পরামর্শ পাওয়া যাবে।’ করোনায় গুজব ঠেকাতে ও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে সরকারকে আরও কঠোর হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। বলেন, ‘করোনায় মৃত্যুর পর লাশ কীভাবে সৎকার হবে সে বিষয়ে শক্ত আইন করা হয়েছে পশ্চিমা দেশগুলোতে। মৃত্যুর পর লাশ ব্যাগে সিল করে দেওয়া হয়। জানাজায় মাত্র ৪ জন উপস্থিত থাকতে পারবেন। দুজন পরিবার থেকে, বাকি দুজন লাশ দাফনে সাহায্য করবেন। করোনার সময়ে জানাজায় হাজার মানুষ উপস্থিত হবেন না। এদেশে দুটি ভুল হচ্ছে, হয়তো হাজারো মানুষ জানাজায় যাচ্ছেন নয়তো লাশ রাস্তায় ফেলে রাখছেন। কঠোর আইন ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা হলে এমনটি হতো না।’  করোনার সঙ্গে লড়াইকে মানবিক যুদ্ধ বলে মন্তব্য করেছেন এই চিকিৎসক। তিনি বলেন, ‘করোনায় মানবিক না হলে এ যুদ্ধে আমরা হেরে যাব। এটি শুধু স্বাস্থ্য যুদ্ধ নয়, একটি মানবিক যুদ্ধও। বাড়িতে কাপড়ের মাস্ক বানাতে মাত্র ৫ টাকা খরচ হয়। সবার উচিত সঙ্গে দুটি-তিনটি বাড়তি মাস্ক রাখা। বাইরে বেরোলে যাদের মাস্ক নেই বা মাস্ক পরছেন না তাকে মাস্ক উপহার দিন, তাকে সচেতন করুন। এখন মানবিক হোন।’ ডা. ফেরদৌস বাংলাদেশে এসেছিলেন বড় একটি পরিকল্পনা নিয়ে। জানালেন, ‘বেশ বড় হৃদয় নিয়ে এসেছিলাম। বড় প্ল্যান নিয়ে এসেছিলাম। বাংলাদেশে যারা হাসপাতালে চিকিৎসা দিচ্ছেন, তারা বিশ্বমানের চিকিৎসক। আমি চেয়েছিলাম তরুণ কিছু চিকিৎসক নিয়ে একটি সেন্টার করব। সেখানে তারা ক্যাম্প বসিয়ে চিকিৎসা দেবেন। তিন মাসের ক্যাম্প হবে। ঢাকা, কুমিল্লা ও চট্টগামে চিকিৎসা দেব। আমি একজন সেবক, সেই মানসিকতা নিয়েই এগিয়ে যেতে চাই। আমার একটি দল ছিল। ১০ জন চিকিৎসক ও ১২ জন কর্মী। আরও ৬০ জন মেডিকেল শিক্ষার্থী যারা ভলান্টিয়ার। যারা মানুষের সেবা দেবে ফোনের মাধ্যমে। সেই পরিকল্পনা থেকে এখনো পিছিয়ে আসিনি। আমি শিগগিরই আমেরিকা চলে যাব। তবে এই চিকিৎসক দলকে বলেছি জায়গা খুঁজতে। কমিটমেন্ট থেকে একবিন্দু সরে যাইনি।’ বাংলাদেশে করোনা মোকাবিলায় সরকারের সমন্বিত পদক্ষেপ জরুরি বলে মনে করেন তিনি। ডা. ফেরদৌস বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। আমার মনে হয়, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ একজন বা দুজনকে তিনি এই দায়িত্ব দিয়ে বলতে পারেন, আমি আপনাদের সঙ্গে আছি, আপনারা যথাযথ পদক্ষেপ নিন। যুক্তরাষ্ট্রের দিকে তাকান, সেখানে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দুজন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। আমাদের এখানে কান্ডারি একজনই তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। তাঁর সঙ্গে থাকতে পারেন বিজ্ঞানী ও চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা। পুরো ব্যবস্থাকে সমন্বয় করতে হবে। আমাদের সব আছে, এখন প্রয়োজন সমন্বয় ও বাস্তবায়নে কঠোর হওয়া। আমি আশাবাদী শিগগিরই আমরা এটি দেখতে পাব।’

সর্বশেষ খবর