বুধবার, ২৪ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার গভীর ষড়যন্ত্রে ট্রাম্প

ভোট দিয়ে বাইডেনকে জয়ী করুন : নীনা আহমেদ

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার গভীর ষড়যন্ত্রে ট্রাম্প

ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মনোনয়ন লাভের নির্বাচনে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে ১ লাখ ১২ হাজার ভোটের ব্যবধানে ধরাশায়ী করে পেনসিলভেনিয়া স্টেট অডিটর জেনারেল পদে নিজের বিজয়ের পথ সুগমকারী বাংলাদেশি আমেরিকান ড. নীনা আহমেদ বললেন, ‘আমরা যেমন একাত্তরে ৩০ লাখ তাজা প্রাণের বিনিময়ে মুক্ত-স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জনে সক্ষম হয়েছি, ঠিক একইভাবে এই আমেরিকায় আমাদের অধিকারের বিষয়গুলো অর্জিত হয়েছে আফ্রিকান-আমেরিকানদের রক্তের বিনিময়ে। এজন্য কালো মানুষ বলে ওদেরকে অবজ্ঞা-অবহেলা করা উচিত হবে না। ওদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধে চলমান আন্দোলনের সঙ্গে আমাদেরও একাকার থাকতে হবে।’ এনআরবি কানেক্ট টিভির ‘ওভার দ্য ওয়ার্ল্ড’ শিরোনামের ভার্চুয়াল টকশোতে (২২ জুন সোমবার রাতে) অংশ নিয়ে মার্কিন রাজনীতিতে বাংলাদেশি তথা অশ্বেতাঙ্গ আমেরিকানদের এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালনরত ড. নীনা আরও বলেন, ‘সামনের ৩ নভেম্বরের গুরুত্ব অপরিসীম। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এমন গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন খুব কমই ছিল। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস-ঐতিহ্য-মূল্যবোধকে বিশ্বের সামনে প্রশ্নবিদ্ধ করার মতো একজন মানুষকে হোয়াইট হাউস থেকে সরিয়ে দিতে না পারলে কেউই আমরা স্বস্তিতে থাকতে পারব না।’ ড. নীনা বলেন, ‘অভিবাসীদের রক্ত-ঘামে গড়ে ওঠা এই আমেরিকা থেকে আমাদের মতো কঠোর পরিশ্রমী ও মেধাবীদের তাড়িয়ে দেওয়ার গভীর এক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি গোপনে একটি টিম গঠন করেছেন যারা সিটিজেনশিপের আবেদনগুলো পর্যালোচনা করছে। সামান্য একটু অসামঞ্জস্য মনে হলেই সংশ্লিষ্ট (আমাদের মতো বাদামি ও মুসলমান)-দের সিটিজেনশিপ কেড়ে নিয়ে ঘাড় ধরে বের করে দেওয়া হবে। এজন্যই ৩ নভেম্বরের নির্বাচনে সবাই ভোট দিয়ে জো বাইডেনকে জয়ী করতে হবে। যারা এখনো ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত হননি, তারা যেন অবিলম্বে তালিকাভুক্ত হন।’ সাংবাদিক হাসানুজ্জামান সাকীর উপস্থাপনায় এ অনুষ্ঠানে ড. নীনা বলেন, ‘করোনাভাইরাসকে পরাস্ত করার পথ একটাই, আর তা হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। দীর্ঘদিন লকডাউনে থাকায় কেউ যেন হতাশায় আক্রান্ত না হন-এজন্য প্রিয় পরিচিতজনদের সক্রিয় থাকতে হবে। টেলিফোন-ইমেইল, ফেসটাইমে কথা বললে অনেকাংশেই স্বস্তি ফিরে আসে। আর যদি কেউ অর্থ সংকটে থাকেন বা গ্রোসারি ক্রয়ে সক্ষম না হন তাহলে যেন পরিচিতজন অথবা প্রতিবেশীরা সে সমস্যা দূর করতে সচেষ্ট হন। একজন আরেকজনের পাশে থাকলে একাকিত্ব ঘুচে যায় এবং করোনা মহামারীকেও দমানো সহজ হয়।’ ৩৫ বছরের অধিক সময় কমিউনিটির সামগ্রিক উন্নয়ন ও কল্যাণে নিরলসভাবে কর্মরত ড. নীনা বলেন, ‘পেনসিলভেনিয়ার মতো বিরাট একটি অঙ্গরাজ্যের সব ধর্ম-বর্ণ-গোত্রের মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থনের নেপথ্যে কাজ করেছে সততা ও নিষ্ঠার পাশাপাশি সবাইকে শ্রদ্ধা জানানো। আমি কাউকে কখনো খাটো করে দেখতে শিখিনি। এটা আমার পারিবারিক শিক্ষা। আর এটাও আমার অভিজ্ঞতায় রয়েছে যে, বাঙালিরা কষ্টের সিঁড়ি বেয়ে সামনে এগোতে জানে। আমি সেভাবেই মাঠে রয়েছি। এই ধারা যাতে শেষ দিন পর্যন্ত অটুট রাখতে পারি এজন্য সবার দোয়া চাচ্ছি।’ উল্লেখ্য, ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ায় ৩ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ব্যালটে স্টেট অডিটর জেনারেল হিসেবে তার নামও থাকবে। তার প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছেন একজন রিপাবলিকান। পেনসিলভেনিয়া স্টেটে রেজিস্টার্ড ভোটার ৮০% হলেন ডেমোক্র্যাট। সে সুবাদে ওই নির্বাচনে তিনি জয়ী হবেন-এতে সন্দেহ নেই। তবুও বিজয়ের মালা পরতে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতেই হবে। সে অপেক্ষায় রয়েছেন সবাই। ড. নীনা এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সব প্রবাসীকে প্রেসিডেন্ট পদে জো বাইডেনকে ভোট দিতে অনুরোধ করেছেন। নিজেদের অস্তিত্বের স্বার্থে এ কাজটি করতেই হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন। আরও উল্লেখ্য, স্মরণকালে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্টদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় বারাক ওবামার এশিয়ান-আমেরিকান ও প্যাসিফিক আইল্যান্ড সম্পর্কিত উপদেষ্টা ছিলেন ড. নীনা। এ ছাড়া তৃণমূলের জনপ্রিয় সংগঠক হিসেবে ফিলাডেলফিয়া সিটির ডেপুটি মেয়রের দায়িত্বও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছেন।

সর্বশেষ খবর