শিরোনাম
বুধবার, ২৪ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনা পুষে অর্থনীতি সচল হবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনা পুষে অর্থনীতি সচল হবে না

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেছেন, ‘করোনা পুষে রেখে অর্থনীতি সচল হবে না, দুর্নীতি পুষে রেখে করোনা মোকাবিলা করা যাবে না। ক্যাসিনো বন্ধে যেভাবে বুলডোজার চালানো হয়েছিল, ঠিক তেমনভাবে স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতিবাজদের ওপর বুলডোজার চালাতে হবে।’ তিনি স্বাস্থ্য খাতে অব্যবস্থাপনা, সমন্বয়হীনতা ও ভয়ঙ্কর দুর্নীতি দূর করার দাবি জানান। সংবাদপত্রের  ব্যবহারের জন্য নিউজপ্রিন্ট আমদানির ওপর শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব প্রত্যাহার করার দাবিও জানান তিনি। গতকাল জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় তিনি এসব দাবি জানান। হাসানুল হক ইনু বলেন, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, সংক্রমণ রোগ বিশেষজ্ঞ, ভাইরোলজি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করে লাল-হলুদ-সবুজ জোনভিত্তিক ব্যবস্থাপনা পরিচালনা এবং প্রধানমন্ত্রীকে নিয়মিত রিপোর্ট প্রদান করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ১ লাখ কোটি টাকা প্রণোদনা ঘোষণা আর করোনা মোকাবিলায় বাজেটে ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব, এডিবির প্রকল্প বাদ রেখে হিসাব করলে বাজেট দেখে মনে হয় দেশে ও দুনিয়ায় করোনা বলে কিছু নেই। বাজেটে বরাদ্দ খাতের অগ্রাধিকার সঠিকভাবে নির্ণয় করা হলেও গতবারের তুলনায় বৃদ্ধির পরিমাণ ও হার খুবই গতানুগতিক, ছকে বাঁধা নিয়মমাফিক বৃদ্ধি। তিনি সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা গড়ে তোলা, সর্বজনীন সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য ছকের বাইরে গিয়ে বাজেটে স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি জানান।

তিনি বলেন, করোনার অভিঘাতে নতুন করে যারা কর্মহীন হয়ে গ্রামে ফিরবে, যে প্রবাসীরা দেশে ফিরবে, শ্রমবাজারে নতুন করে যে ২৬ লাখ যুবক প্রবেশ করবে, তাদের কর্মসংস্থান ও সামাজিক সুরক্ষার জন্য বিশেষ বরাদ্দ দিতে হবে। কৃষি, মৎস্য, পোলট্রি, প্রাণিসম্পদ খাত সংকটে অর্থনীতিকে যে শক্তি দেয়, সেই কৃষি ও কৃষির উপ-খাত কৃষক ও খামারিদের সরাসরি আর্থিক সহায়তা দিতে হবে। তিনি শিক্ষা ও গবেষণা খাতেও বরাদ্দ বৃদ্ধির প্রস্তাব দেন। তিনি  বলেন, ‘বাজেট বাস্তবায়নে আয় ও অর্থসংস্থান নিয়ে এখন চিন্তা করার সময় নয়। ঋণ করতে যখন হচ্ছেই তখন একটু বেশি ঋণ করলে ক্ষতি নেই। ঋণ করে আমরা ঘি খাচ্ছি না। বিদেশে, সেকেন্ড হোমে, বেগমপল্লীতে পাচারও করছি না।’ তিনি বলেন, তারেক-কোকোর বিদেশে পাচার করা টাকা সরকার ফেরত আনতে পারলে বেগমপল্লী, সেকেন্ড হোমওয়ালাদের পাচার করা টাকাও ফেরত এনে বাজেটে ব্যয় করতে পারবে।

তিনি আয়করের জাল বৃদ্ধি, সবাইকে আয়কর প্রদানে উৎসাহিত করার পাশাপাশি ক্ষুদ্র করদাতাদের পেছনে ধাওয়া না করে এক কোটি টাকা ব্যক্তিগত আয়কর দিতে পারে কিন্তু আয়কর দেন না এমন কয়েক লাখ কর ফাঁকিবাজকে ধরার জন্য শক্ত জাল পাতার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা, কৃষি, খাদ্য উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তা, শিক্ষা ও গবেষণা খাতে ব্যয়কে ব্যয় হিসাবে হিসাব না করে বিনিয়োগ হিসাবে বিবেচনা করতে হবে। এসব খাতে বিনিয়োগ বাড়লে এসব খাত মূলধন ফেরত দেওয়াসহ বহুগুণ লাভ জাতিকে ফিরিয়ে দেবে। তিনি মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব এবং সংবাদপত্রের ব্যবহারের জন্য নিউজপ্রিন্ট আমদানির ওপর শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব প্রত্যাহার করার দাবি জানান।

ইনু বলেন, করোনা ধনী-গরিব সবাইকে সমান করে দিয়েছে। করোনা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, সংবিধানে বর্ণিত রাষ্ট্রীয় মূলনীতি সমাজতন্ত্রের পথে হাঁটতে হবে। সমাজতন্ত্রের আলোকে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা, সর্বজনীন সামাজিক সুরক্ষা, সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। ইনু তার বক্তৃতার শুরুতে করোনায় আত্মোৎসর্গকারী প্রথম সারির যোদ্ধা চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্য, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য, সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। তিনি করোনা আক্রান্ত সবার সুস্থতা কামনা করেন। তিনি আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা ও দলটির সভানেত্রীসহ নেতা-কর্মীদের শুভেচ্ছা জানান।

 

সর্বশেষ খবর