বৃহস্পতিবার, ২৫ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা
রাজশাহী

ক্লিনিকগুলো পকেট কাটছে রোগীর

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

নাটোরের লালপুর উপজেলার মধ্যবয়সী ওয়াসিম কায়সার দীর্ঘদিন থেকে পেটে পাথর নিয়ে ঘুরছেন। মার্চের শেষভাগে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় বিষয়টা ধরা পড়লে চিকিৎসক তাকে অপারেশনের পরামর্শ দেন। তবে এর মাঝে রাজশাহীর বেসরকারি সব হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসাসেবা প্রায় বন্ধ হয়ে আছে করোনা আতঙ্কে। ফলে তিনি চাইলেও চিকিৎসক দিয়ে অপারেশনটি করাতে না পারায় যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছেন।

ওয়াসিম জানান, তিনি দীর্ঘ দুই মাস থেকে রাজশাহীর বিভিন্ন ক্লিনিক ও হাসপাতালে যোগাযোগ করছেন। চিকিৎসা কেন্দ্রগুলো থেকে তাকে জানানো হয়েছে, সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক না থাকায় তারা তাকে প্রয়োজনীয় সেবা দিতে পারবেন না। চিকিৎসক কবে নাগাদ বসবেন তারও কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারেনি প্রতিষ্ঠানগুলো।

যখন ক্লিনিকগুলোর এমন অবস্থা তখন যারা ক্লিনিক খোলা রেখেছেন, তারা গলা কাটছেন রোগী ও স্বজনদের। আগের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি টাকা নিয়ে করছেন অপারেশন। বাধ্য হয়ে রোগীরা অতিরিক্ত টাকা দিয়েই চিকিৎসা নিচ্ছেন। চিকিৎসকরাও বাড়িয়েছেন তাদের ফি। শুধু ক্লিনিকগুলো বেশি অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে এমন নয়, আইসিইউ যে বেড আছে নগরীর সিডিএম হাসপাতালে তা প্রথমে করোনা রোগীদের জন্য সরকারের তালিকাভুক্ত হলেও পরে তা দিতে অস্বীকার করে প্রতিষ্ঠানটি। সরকারি তালিকায় সিডিএমের ৫টি আইসিইউ বেড থাকলেও বাস্তবে নেই। সেখানে যারা আইসিইউ সুবিধা নিচ্ছেন, তাদের গুনতে হচ্ছে মোটা অঙ্কের বিল। চিকিৎসাসেবার যখন এমন হাল, তখন রাজশাহীতে বেড়েছে কাশি ও জ¦রের জন্য ব্যবহৃত ওষুধের দাম। জ¦রের জন্য ব্যবহার করা নাপা, এইস ও এইস প্লাস প্রতি পাতায় আগের তুলনায় ৫-১০ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া কাশির সিরাপ এডোভাস ও তুশকার প্রতি ফাইলেও নেওয়া হচ্ছে ১০-১৫ টাকা বেশি। আর সিভিট মিলছে না ফার্মেসিগুলোয়। তবে ১ টাকা পিসের সিভিট বেশি দাম দিলে পাওয়া যাচ্ছে। রাজশাহীর লক্ষ্মীপুরের আলিম-লাম ফার্মেসির মালিক আবু সাইদ জুয়েল জানান, সিভিট কোম্পানি থেকেই সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। নাপা ও এইস প্লাস পাতায় ২-৩ টাকা বেড়েছে। তবে অন্য ওষুধের দাম ঠিকই আছে। বাংলাদেশ ফার্মেসির মালিক সজীব হোসেন জানান, আগের দামেই তারা ওষুধ বিক্রি করছেন। ডক্সিন ওষুধের চাহিদা বেড়েছে। ফাতেমা ড্রাগ হাউসের মোতাহারুল ইসলাম জানান, তারা এখনো আগের দামেই ওষুধ বিক্রি করছেন।

এক্মি ল্যাবরেটরি রাজশাহীর সিনিয়র এক্সিকিউটিভ আবদুল হালিম জানান, কোম্পানি থেকে ওষুধের কোনো দাম বাড়ানো হয়নি। তবে কোনো কোনো ফার্মেসি জ্বর ও কাশির ওষুধের দাম বেশি নিচ্ছে বলে শুনেছেন।

রাজশাহীর লক্ষ্মীপুর ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের প্রধান ফটকে দাঁড়াতেই নিরাপত্তাকর্মী তাপমাত্রা পরিমাপের যন্ত্র নিয়ে হাজির। কপালের কাছে ধরে তাপমাত্রা দেখে ভিতরে প্রবেশের অনুমতি দিলেন। ভিতরে ১০ পা এগোতেই দেখা গেল আল্ট্রাসনোগ্রাম রুমের সামনে একদল নারী ও পুরুষের গাদাগাদি অবস্থান। সেখানে স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই নেই। ভিতরে নিরাপত্তাকর্মী থাকলেও কেউ তাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে দূরত্ব বজায় রেখে চলা বা বসার পরামর্শ দিচ্ছেন না। একই অবস্থা পপুলার, ল্যাবএইড, আমানাসহ রাজশাহীর প্রতিষ্ঠিত ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিগুলোতেও। প্রতিষ্ঠানগুলো রোগী ও তাদের স্বজনদের কাছ থেকে কাউন্টারের মাধ্যমে টাকা নিয়ে সোজা রুম নম্বর দেখিয়ে দিয়েই খালাস! সব কটিতেই এখন চিকিৎসাসেবা পেতে দিতে হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ।

সুশাসন বিশ্লেষক সুব্রত পাল বলেন, ‘প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো দীর্ঘদিন চিকিৎসাসেবার নামে রোগীদের কাছ থেকে মুনাফা তুলছে। দেশের এ ক্রান্তিলগ্নে তাদের উচিত সবার স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের মাধ্যমে সরকারকে সহযোগিতা করা। চিকিৎসকের কাছে আগে যেখানে ১০০ রোগী আসতেন, এখন হয়তো কম আসছেন। তবে আসছেন তো। স্বাস্থ্যবিধি মেনে এদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে হবে। অতিরিক্ত অর্থ আদায় অমানবিক।’ রাজশাহীর প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মখলেসুর রহমান বলেন, ‘বেসরকারি খাতের চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোর খুবই দুর্দিন চলছে। এ মুহূর্তে রাজশাহীতে রোগীর সংখ্যা খুবই কম। ফলে সব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পক্ষে নিজেদের প্রতিষ্ঠান চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তবু সরকারের নির্দেশনামতো চালু রাখতে আমরা বাধ্য হচ্ছি।’

 

সর্বশেষ খবর