শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২৫ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

বাঁশের আগায় বেঁধে এপার ওপার গরু

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাঁশের আগায় বেঁধে এপার ওপার গরু

বাঁশের আগায় গরু বেঁঁধে সীমান্তের এপার-ওপার নেওয়া হয় ছবি : ভিডিও-ফুটেজ

দেশের উত্তরবঙ্গের সীমান্তবর্তী গরুর হাটগুলোতে গেলেই চোখে পড়বে ভারতীয় গরু। ছোট-মাঝারি-বড়- সব সাইজের গরুই মিলবে সেখানে। ছোট আকারের অধিকাংশ গরুর শরীর ক্ষতবিক্ষত। ঘা শুকাতে হলুদ বেটে দেওয়া হয়েছে সেখানে। তারপরও জ্বলজ্বল করে গরুর গায়ের ক্ষত। কী কারণে এমন ক্ষতবিক্ষত গরু? এমন প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে জানা গেল চোরাচালানি চক্রের পাচারের ভিন্ন কৌশলের কথা। গরু বেপারিরা জানান, সীমান্তের কাঁটাতারের পাশে বড় আকারের কয়েকটি বাঁশ মাটি খুঁড়ে দাঁড় করানো হয়। অনেকটাই দেখতে রেললাইনের রেলক্রসিংয়ে ব্যবহার করা বড় লোহার দন্ডের মতো। তবে এটা চারদিকে ঘোরানোর ব্যবস্থাও রয়েছে। বাঁশের আগায় দুটি দড়ি বাঁধা হয়। একটি দড়ি গরুর গলায়, আরেকটি দড়ি গরুর পেছনে বাঁধা হয়। বাঁশের প্রায় মাঝামাঝি স্থানে একটি খুঁটি দেওয়া হয়। বাঁশের আরেক মাথায় কয়েকজন ধরে নিচু করলেই বাঁশের অপর প্রান্তে বাঁধা গরু ওপরের দিকে উঠে পড়ে। এরপর বাঁশটি ঘুরিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নেওয়া হয়। গরু নিচু করে নামিয়ে দড়ির বাঁধ খুলে নেয়। অনেক সময় দড়ি ছিঁড়ে কাঁটাতারের ওপরে আছড়ে পড়ে গরু। তাতে গরুর পিঠে হয় ক্ষতবিক্ষত। এভাবেই বছরের পর বছর বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় বাঁশের আগায় গরু বেঁধে আনা হচ্ছে এপার-ওপার। বাঁশের আড়ার সাহায্যে পার হওয়া এসব ছোট গরু খুলনা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, ফেনী, চট্টগ্রাম, ঢাকা, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহীসহ দেশের নানা স্থান থেকে পাইকারি ক্রেতারা ট্রাকভর্তি করে নিয়ে যান। চোরাই পথে গরু নিয়ে আসা বেপারিরা জানান, দুই দেশের বেপারিদের মধ্যে আগেই মোবাইলে কথোপকথন হয়। এর পর সূর্য ডোবার আগে সীমান্তের নির্জন এলাকা দিয়ে গরু পাচারের জন্য আনা হয় কাঁটাতারের কাছে। বৃষ্টির দিনে ছোট গরু পারাপারে সুবিধা। কারণ এ সময় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা ক্যাম্পে চলে যান। আর ঠিক তখনই শুরু হয় গরু পাচার। গরু পাচারে দুই দেশের সীমান্তে ঘোরাফেরা করে একাধিক চক্র। তবে রৌমারীর খাঁটিয়ামারী, বেহুলার চর, চান্দার চরে বাঁশের আড়ার সাহায্যে নামানো গরুর খাজনা দেওয়া হয় না। ১৬ থেকে ২০ কিলোমিটার পথ মাড়িয়ে এসব বাছুর স্থানীয় কোনো হাটে তোলা হয় করিডর ছাড়াই। চোরাচালানের আরও অভিনব পদ্ধতি আছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বলছে, অনেক সময় গরুর গলায় বোমা বেঁধেও পাচার করা হয়। এ ছাড়া কলাগাছের ভেলাতে গরু বেঁধে নদীর স্রোতে ভাসিয়ে পাচার করা হয় গরু। বিভিন্ন সময়ে কীভাবে চোরাচালান হয়, তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, এ কাজ করার জন্য সংঘবদ্ধ দুটি গ্রুপ আছে। একটা ভারতে, আরেকটা বাংলাদেশে। যারা ভারতের চোরাকারবারি তারা ওই দেশের পঞ্চায়েতকে ম্যানেজ করে। এরপর তারা সীমান্তরক্ষী বিএসএফকেও ম্যানেজ করে নেয়। বাংলাদেশেও ঠিক একই অবস্থা। এখানে যারা চোরাকারবারি করে তারা বিজিবিকে ম্যানেজ করে। অনেক সময় কাঁটাতার কেটে ফুটো করে ভিতর দিয়ে নিয়ে আসে গরু। অনেক সময় নদীতে ভাসিয়ে দেয়। বৈধ-অবৈধ পথে আসা গরুগুলো বাংলাদেশের ভিতরে হাটে বাজারে বেচাবিক্রি হয়। যদিও করোনাকাল ও সরকারের বিভিন্ন সময়ে সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ভারত থেকে বৈধ পথে গরু আমদানি বন্ধ। তবুও কোরবানির ঈদ সামনে রেখে চোরাকারবারিরা সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে- এমন শঙ্কা করছেন বিশ্লেøষকরা। মেজর (অব.) জিল্লুর রহমান বলেন, বর্ডার থেকে ঢাকা পর্যন্ত আসতে পদে পদে চেকপোস্টে এদের লাইনম্যান আছে। সে এগুলো ম্যানেজ করে, প্রত্যেকটা বক্সে টাকা দেওয়া লাগে। মাস্তানকে টাকা দেওয়া লাগে। এজন্য বর্ডারে বিজিবিকে আরও অ্যালার্ট হতে হবে। এগ্রেসিভ পেট্রলিং করতে হবে। এতে হয়তো কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, গরু চোরাচালান বন্ধ করা হলে যেমন দেশের গরুর চাহিদা বাড়বে, তেমনি সীমান্তে হত্যার সংখ্যাও কমবে।

সর্বশেষ খবর