বৃহস্পতিবার, ২৫ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

অব্যবস্থাপনা দুর্নীতিতে বেহাল স্বাস্থ্য খাত

রফিকুল ইসলাম রনি

অব্যবস্থাপনা দুর্নীতিতে বেহাল স্বাস্থ্য খাত

রাশেদ খান মেনন

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেছেন, অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কারণে স্বাস্থ্য খাতে বেহাল অবস্থা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের উদাসীনতায় দেশের মানুষকে এখন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। রাশেদ খান মেনন বলেন, আমাদের দেশে ৮ মার্চ করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর তিন মাস আগে ধরা পড়ে চীনের উহানে। অর্থাৎ আমাদের প্রস্তুতির যথেষ্ট সময় ছিল। কিন্তু স্বাস্থ্য বিভাগের চরম ব্যর্থতা-উদাসীনতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে জনগণকে মাশুল দিতে হচ্ছে। ‘উন্নত বিশ্বের চেয়ে করোনায় আমাদের দেশে মৃত্যুহার কম’-স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে সাবেক মন্ত্রী মেনন বলেন, মহামারীতে একজনের মৃত্যু যেমন-মৃত্যু, ঠিক তেমনি এক দিনে ৫৩ জনের মৃত্যুও মৃত্যু। মন্ত্রীর কাছে আমার প্রশ্ন, কতজনের মৃত্যু হলে আপনার মনঃপূত হবে। তিনি বলেন, আসলে মন্ত্রী, মন্ত্রণালয় ও অধিদফতর জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে মনে করেন। সে কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে শক্ত হাতে সামাল দিতে হবে। তা না করলে আমাদের জন্য ভয়াবহ বিপদ সামনে অপেক্ষা করছে।  রাশেদ খান মেনন বলেন, প্রথম তিন মাস আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগ বিষয়টি তো পাত্তাই দেয়নি। এর মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলল, টেস্ট টেস্ট এবং টেস্ট। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) বলল, ‘আমরা প্রস্তুত’। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বললেন, ‘আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি আছে।’ কোথায় গেল সেই প্রস্তুতি। এখন হাসপাতালে রোগী চিকিৎসা পায় না। কোনো রকমে ভর্তি হলেও প্রয়োজনী সেবা, অক্সিজেন নেই। ৪৩ জেলায় এখন পর্যন্ত পরীক্ষার ল্যাব বসানো হয়নি। অথচ তিন মাস সময় পেলেন, ৬৪ জেলায় ৬৪টি ল্যাব বসালেন না কেন? দেশের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার মেশিন ছিল, এগুলো কাজে লাগালেন না কেন? জেলা হাসপাতালে আইসিইউ নেই কেন। স্বাস্থ্য খাতের কেনাকাটায় ব্যাপক অনিয়মে ক্ষোভ প্রকাশ করে ক্ষমতাসীন দলের এক শরিক দলের এই নেতা বলেন, এন-৯৫ মাস্ক কেনাকাটায় ব্যাপক অনিয়ম হলো। ৭০০ টাকার ফেস মাস্ক কেনা হচ্ছে ৫ হাজার টাকায়। এ ছাড়া নানা কেনাকাটায় ব্যাপক অনিয়মের খবর পত্র-পত্রিকায় দেখতে পাচ্ছি। এগুলোর কোনো বিচার নেই। সবাই বহাল তবিয়তে আছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়-অধিদফতর কি জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে? স্বাস্থ্য অধিদফতরের সিন্ডিকেট এত শক্তিশালী? মেনন বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধ, জনগণের জীবনের সুরক্ষা, অর্থনৈতিক দুর্ভোগ লাঘব ও অর্থনৈতিক পুনর্বাসনে সব দলের অংশগ্রহণ, তত্ত্বাবধান ও সহায়তা নিশ্চিতকরণের প্রশাসনিক নির্দেশ প্রদান ও ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিয়েছিলাম। এতে ‘যথোপযুক্ত বিশেষজ্ঞ ব্যক্তির নেতৃত্বে চিকিৎসক, অ্যাপিডোমলজিস্ট, ভাইরোলজিস্ট, মাইক্রোবায়োলজিস্ট, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিনিধি, বিএমএ প্রতিনিধি ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে টাস্কফোর্স গঠনের আহ্বান জানানো হয়েছিল। এ টাস্কফোর্স সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে জবাবদিহি করবে বলে প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু কিছুই হয়নি। একটি জাতীয় কমিটি করা হয়েছে। সেখানে তারা কী কাজ করছেন কিছুই জানি না। করোনা পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে সাবেক মন্ত্রী মেনন বলেন, লকডাউন করা হলো। আবার খুলে দেওয়া হলো। এখন পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপের দিকে। জোনভিত্তিক লকডাউন শুরু করা হলো। এখন ঢাকা শহরে কোথায় কোথায় লকডাউন করা হবে তার কোনো সমন্বয় নেই। সবকিছু সমন্বয়হীন হয়ে পড়েছে। মানুষের জীবন নিয়ে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করার কোনো প্রয়োজন ছিল না। আগে মানুষের জীবন। জীবন বাঁচলে জীবিকা হবে। মূল কথা হচ্ছে, কারও কোনো জবাবদিহিতা না থাকায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এভাবে চলতে পারে না। এখনো সময় আছে বিভিন্ন বিষয়ে পারদর্শীদের নিয়ে জাতীয় টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করে পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। সবকিছু প্রধানমন্ত্রীকে শক্ত হাতে দেখতে হবে। অন্যদের দিয়ে কোনো কাজ হবে না।

সর্বশেষ খবর