শুক্রবার, ২৬ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

শেষ পর্যায়ের ট্রায়াল চলছে ভ্যাকসিনের

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

যুক্তরাজ্যের খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির বিশেষজ্ঞদের উদ্ভাবিত করোনা ভ্যাকসিন হিউম্যান ট্রায়াল চূড়ান্ত ধাপে পৌঁছেছে। যুক্তরাজ্যে পরবর্তী ধাপে ১০ হাজার ২৬০ শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ওপর এ ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে। এর বাইরে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ব্রাজিলেও এ ট্রায়াল সম্পন্ন হবে। করোনাভাইরাস থেকে এ ভ্যাকসিন মানুষকে কতটা ভালোভাবে সুরক্ষা দিতে পারে সেটা যাচাই করতেই দফায় দফায় এ ট্রায়ালের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী অক্টোবরে বাজারজাত  করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে। অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন গ্রুপের প্রধান অধ্যাপক অ্যান্ড্রু পোলার্ড এক বিবৃতিতে  জানান, ক্লিনিক্যাল স্টাডিজ খুব ভালো চলছে। আমরা এখন ভ্যাকসিনটি কত বয়সের প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে রোগ প্রতিরোধের প্রক্রিয়া চালিত করতে পারে তা মূল্যায়ন করে দেখছি। এ ছাড়া এটি ব্যাপক জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দিতে সক্ষম কিনা তা-ও পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, ২০২০ সালের শেষ নাগাদ ভ্যাকসিনটির উন্নয়ন কাজ বা বাজারজাতের প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে। অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত এ ভ্যাকসিন বাজারজাত করতে কাজ করে যাচ্ছে ব্রিটিশ ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান আস্ট্রাজেনেকা। আস্ট্রাজেনেকার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পাস্কাল সরিউট জানিয়েছেন, তাদের এ ভ্যাকসিন প্রায় এক বছরের জন্য এ ভাইরাস থেকে মানুষকে সুরক্ষা দেবে। তিনি বলেন, আগামী আগস্ট বা সেপ্টেম্বর নাগাদ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফল পাওয়া যাবে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী অক্টোবর নাগাদ এই টিকা সরবরাহ করা সম্ভব হবে। আস্ট্রাজেনেকার এ টিকার ৪০ কোটি ডোজ প্রি-অর্ডার করতে ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে প্রাথমিক চুক্তিতে উপনীত হয়েছে ইউরোপের চার দেশ। দেশগুলো হচ্ছে জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি ও নেদারল্যান্ডস। চার দেশের জোট ইনক্লুসিভ ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্সের (আইভিএ) সঙ্গে চুক্তিতে উপনীত হয়েছে আস্ট্রাজেনেকা। চুক্তি অনুযায়ী, এ টিকা ইউরোপে সরবরাহের কাজে সহায়তা দেবে আইভিএ। এর  বাইরে ইতিমধ্যে যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও চুক্তি হয়েছে আস্ট্রানজেনেকার।

ট্রায়াল শুরু হলো ইম্পেরিয়াল কলেজের ভ্যাকসিনেরও : অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের গবেষকদের সম্ভাব্য ভ্যাকসিনেরও মানুষের শরীরে প্রয়োগ করা শুরু হয়েছে। প্রথম এক স্বেচ্ছাসেবীর শরীরে প্রয়োগ করা হয়েছে ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের সম্ভাব্য টিকাটি। পরীক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেবেন ৩০০ স্বাস্থ্যবান স্বেচ্ছাসেবী। গবেষকরা বলছেন, যদি সম্ভাব্য ভ্যাকসিনটি নিরাপদ বলে প্রমাণিত হয় এবং স্বেচ্ছাসেবীদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার প্রত্যাশিত সাড়া পাওয়া যায়, তাহলে চলতি বছরের শেষ নাগাদ আরও বড় পরিসরে পরীক্ষা শুরু হবে। ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন গত মঙ্গলবার বলেছে,  ক্যাথি (৩৯) প্রথম ইম্পেরিয়াল ভ্যাকসিন পরীক্ষায় স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন। তার শারীরিক অবস্থা সর্বশেষ পর্যবেক্ষণ পর্যন্ত ভালো ছিল। প্রথম ধাপের ৩০০ জনকে ভ্যাকসিন দেওয়ার পর অক্টোবর নাগাদ আরও ৬ হাজার মানুষের ওপর ভ্যাকসিন পরীক্ষার পরিকল্পনা করেছেন গবেষকরা। ইম্পেরিয়াল কলেজের গবেষক দল আশা করছে, আগামী বছরের শুরুতে যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে তারা ভ্যাকসিন সরবরাহ করতে পারবেন। অনেক প্রচলিত ভ্যাকসিন মূলত দুর্বল বা জিনগত পরিবর্তন করা ভাইরাসের অংশ থেকে তৈরি করা হয়। তবে ইম্পেরিয়ালের ভ্যাকসিনটি নতুন পদ্ধতিতে তৈরি। এতে জেনেটিক কোডের সিনথেটিক তন্তু বা আরএনএ ব্যবহার করা হয়েছে, যা মূলত ভাইরাসের নকল হিসেবে কাজ করে। এটি পেশিতে ইনজেকশন আকারে পুশ করা হলে আরএনএ নিজেকে বর্ধিত করে এর কপি তৈরি করে এবং শরীরের কোষগুলোকে স্পাইক প্রোটিন তৈরিতে নির্দেশ দেয়। এতে দেহের প্রতিরোধী ব্যবস্থা করোনাভাইরাসকে চিনতে পারে এবং এর বিরুদ্ধে লড়ে কভিড-১৯ প্রতিরোধ করতে পারে।

সর্বশেষ খবর