শনিবার, ২৭ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গের আশঙ্কা

বিশ্ব পরিস্থিতি

প্রতিদিন ডেস্ক

ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গের আশঙ্কা

ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় তরঙ্গ আসার সংকেত দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বলা হচ্ছে, এশিয়াও এই দ্বিতীয় তরঙ্গের আওতায় রয়েছে। এদিকে বিশ্বব্যাপী করোনার প্রথম তরঙ্গে ৬ মাসেই মারা গেছেন অন্তত ৪ লাখ ৯৩ হাজার মানুষ। আক্রান্তের সংখ্যা ৯৮ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে সরকারি তথ্যানুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রেই আক্রান্তের সংখ্যা হয়েছে ২৫ লাখ ৪ হাজার ৬৭৬। তবে দেশটির সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) বলছে, আমেরিকায় আক্রান্তের আসল সংখ্যা ১০ গুণেরও বেশি।

ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্যানুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে করোনায় নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার। আর মৃত্যু ছিল ৫ হাজার ১৮০। এদিন সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ছিল ব্রাজিলে ১ হাজার ১৮০ জন। এর পরের তালিকায় ছিল মেক্সিকোতে ৯৪৭ জন, যুক্তরাষ্ট্রে ৬৪৯ জন, ভারতে ৪০১ জন, পেরুতে ১৭৫ জন, চিলিতে ১৭২ জন, যুক্তরাজ্যে ১৪৯ জন, পাকিস্তানে ১৪৮ জন এবং রাশিয়ায় ৮২ জন।

নতুন তরঙ্গ আসছে ইউরোপ-আমেরিকায় : করোনার আরেক দফা নতুন তরঙ্গ আসছে আমেরিকা-ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে। সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক ড. হ্যান্স হেনরি ক্লুগে বলেন, ইউরোপের ১১টি দেশে এরই মধ্যে সংক্রমণ এমনভাবে বেড়ে গেছে         যে ‘অত্যন্ত উল্লেখযোগ্যভাবে’ এ রোগের পুনরুত্থান দেখা যাচ্ছে।  দেশগুলো হচ্ছে সুইডেন, ইউক্রেন, আলবেনিয়া, আরমেনিয়া, আজারবাইজান, বসনিয়া-হারজেগোভিনা, কাজাখস্তান, কসোভো, কিরগিজস্তান, নর্থ ম্যাসিডোনিয়া ও মলদোভা। ক্লুগে সতর্ক করেছেন, এসব দেশে করোনা পরীক্ষা যদি বাড়ানো না হয় তাহলে ইউরোপের স্বাস্থ্যব্যবস্থা আবারও খাদের কিনারে চলে যাবে। খবরে বলা হচ্ছে, এরই মধ্যে গোটা বিশ্ব এখন করোনার দ্বিতীয় পর্যায় মোকাবিলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এখনো অনেক  দেশ প্রথম দফার করোনা সংক্রমণকেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। এই অবস্থায় দ্বিতীয় দফায় ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আতঙ্ক বেড়েছে চীন, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে শুরু করে ইউরোপের নানা দেশে। এই অবস্থায় করোনা ‘ফেজ টু’র  মোকাবিলা করার জন্য ব্রিটেনকে প্রস্তুত হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। ব্রিটেনের র?য়্যাল কলেজ অব সার্জেনস এবং রয়্যাল কলেজ অব ফিজিশিয়ানের দুই সভাপতিই জানিয়েছেন, বর্তমানে দ্বিতীয় দফার করোনা সংক্রমণই সব থেকে বেশি চিন্তার বিষয়। খুব শিগগিরই তার  মোকাবিলার জন্য দেশকে প্রস্তুত হতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করে বলেছে, এখনো অনেক দেশে সংক্রমণের সূচক চূড়ান্ত জায়গায় পৌঁছায়নি। কাজেই সেসব দেশে আগামী কয়েকদিনে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সংস্থার প্রধান টেডরস আধানম গেব্রেসাস আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, আগামী সপ্তাহে করোনা সংক্রমণ ১ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। সব থেকে খারাপ জায়গায় রয়েছে আমেরিকা। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সেখানে পরিস্থিতির  কোনো পরিবর্তন হয়নি। গোটা দেশে একদিনে ৩৪ হাজার ৭০০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। উপসাগরীয়  দেশগুলোতে এরই মধ্যে সংক্রমিতের সংখ্যা ৪ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণ শুরু হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সেদেশে নতুন করে ৫ হাজার ৬৮৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১১ হাজার ৭৯৬। অস্ট্রেলিয়াতেও দ্বিতীয় পর্যায়ে সংক্রমণ শুরু হয়ে গেছে বলে বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারতের পর সব থেকে সংকটে রয়েছে পাকিস্তান। আমেরিকায় আক্রান্ত ১০ গুণ বেশি : আমেরিকায় সরকারি হিসাবে যে পরিমাণ মানুষ করোনাভাইরাস কভিড-১৯  রোগে আক্রান্ত হয়েছেন, বাস্তবে তার চেয়ে ১০ গুণ বেশি আক্রান্ত হতে পারে বলে দেশটির সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) জানিয়েছে। সিডিসির পরিচালক ড. রবার্ট রেডফিল্ড গতকাল এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের অনুমান, একজন রোগী শনাক্ত হয়ে থাকলে আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা আসলে ১০ জন।’ এ হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা এরই মধ্যে ২ কোটি ৪০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। রেডফিল্ড বলেন, ‘যাদের করোনার লক্ষণ আছে তাদের পরীক্ষায় বিধিনিষেধ আছে। আবার যাদের লক্ষণ দেখা দেয়নি তাদেও তো পরীক্ষাই করা হচ্ছে না। এ কারণেই প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।’ এদিকে ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটন পূর্বাভাস দিয়েছে, আগামী অক্টোবর নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে মারা  যেতে পারেন এক লাখ ৮০ হাজার মানুষ। তবে মার্কিনিদের যদি শতকরা ৯৫ ভাগ মাস্ক পরেন তাহলে এই সংখ্যা কমে এক লাখ ৪৬ হাজার হতে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর