শনিবার, ২৭ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

বিদ্যুৎ জ্বালানিতে নেওয়া হয়েছে একগুচ্ছ নতুন প্রকল্প

জিন্নাতুন নূর

বিদ্যুৎ জ্বালানিতে নেওয়া হয়েছে একগুচ্ছ নতুন প্রকল্প

নসরুল হামিদ

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের আধুনিকায়নে একগুচ্ছ নতুন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এসব প্রকল্পের মধ্যে আছে গ্যাসের বিভিন্ন বিতরণী সংস্থা, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স) এবং বিস্ফোরক অধিদফতরের আধুনিকায়ন। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে গতকাল এক সাক্ষাৎকারে এ তথ্য দানকালে বলেন, বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ই প্রথম এন্টারপ্রাইজ সফটওয়্যার ইমপ্লিমেন্টের দিকে গিয়েছে। এমনকি ভবিষ্যতে এ মন্ত্রণালয়কে আমরা পেপারলেস করার জন্য প্রকল্প নিয়েছি।

নসরুল  হামিদ বলেন, গ্যাসের বিভিন্ন বিতরণী সংস্থা তিতাস, কর্ণফুলী, জালালাবাদ ও বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির আধুনিকায়নের জন্য বড় প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ঢাকা ও তার আশপাশ এলাকায় গ্যাসের চাপ বৃদ্ধি, পুরনো পাইপ সরিয়ে তা অটোমেশন করা, নতুন পাইপ দেওয়া- এগুলোর জন্য এরই মধ্যে কনসালটেন্ট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পুরনো গ্যাস ক্ষেত্রে যেখানে চাপ কমে গেছে সেখানে চাপ বৃদ্ধির জন্য কমপ্রেসার দেওয়ার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, বিস্ফোরক অধিদফতরের লাইসেন্স ইস্যুর প্রক্রিয়ায় অটোমেশন করা হয়েছে। এ ছাড়া নতুন ভবনে আধুনিক ল্যাবরেটরি সুবিধা প্রদানসহ এই অধিদফতরটিকে ঢেলে সাজানোর জন্য প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। বাপেক্সকেও জনবল কাঠামো উন্নত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারা কীভাবে জনবল কাঠামো পুনর্গঠন করবে তা কনসালটেন্টের সহযোগিতা নিয়ে মন্ত্রণালয়কে জানাবে। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুতের মেগা প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি ভালো। তবে করোনার কারণে কাজের গতি কিছুটা কমে গেছে। ধীরগতিতে হলেও মাতারবাড়ী ও রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ চলছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শেষে আগামীতে আমরা এই মেগা প্রকল্পের কাজে যে বাধা এসেছে তা দ্রুত পুষিয়ে নেব। এই বড় প্রকল্পগুলোর কাজ ২০২৩ সালে সম্পন্ন হওয়ার কথা। গতি কিছুটা কমলেও আমরা আশা করছি কাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই শেষ হবে।

সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে কোনো অগ্রগতি হয়েছে কিনা এই প্রশ্নে নসরুল হামিদ বলেন, এ জন্য টেন্ডার হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে সাগরে যে মাল্টি ক্লায়েন্ট সার্ভে করার কথা ছিল তা কিছুটা পিছিয়ে গেছে। এতে এ কাজে আরও কিছুটা সময় লাগতে পারে। আমরা অনশোরে গ্যাস কূপ অনুসন্ধানের জন্য নতুন প্রকল্প নিয়েছি। স্থলভাগের ক্ষেত্রে শ্রীকাইলে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ভবিষ্যতে আরও বড়ভাবে সেখানে কাজ করার জন্য আমরা প্রকল্প নিয়েছি। তিনি আরও বলেন, আমরা আশা করছি এই করোনাকালেও গ্রিড সেক্টরে এ বছরই আমরা শতভাগ বিদ্যুতায়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করব। এরই মধ্যে আমাদের ৯৭ শতাংশ বিদ্যুতায়নের কাজ হয়ে গেছে। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল অফ-গ্রিড এলাকা অর্থাৎ চরাঞ্চলসহ শতভাগ বিদ্যুতায়নের কাজ এই বছর শেষ করব। বর্তমান পরিস্থিতির কারণে এই অফ-গ্রিড এলাকাগুলোর জন্য হয়তো শতভাগ বিদ্যুতায়নের কাজ শেষ হবে না। আবার কিছু নতুন চর সৃষ্টি হওয়ায় সেখানেও এখন বাড়িঘর তৈরি হয়েছে। এগুলো আমাদের মাস্টার প্ল্যানের বাইরে ছিল। এক্ষেত্রে এই এলাকাগুলোতে বিদ্যুৎ পৌঁছাতে আগামী বছর পুরোটাই লেগে যাবে। তবে আগের মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী আমরা আশা করছি চলতি বছরের ডিসেম্বরেই শতভাগ বিদ্যুতায়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।

নসরুল হামিদ বলেন, আমরা সৌর বিদ্যুতেও ভালো করছি। এরই মধ্যে দেশের ৫৮ লাখ বাড়িতে সোলার সিস্টেম বসানো হয়েছে। ৬২টি সোলার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে একটি শেষ এবং আরও দুটি প্রায় শেষের পথে। বড় আকারে সৌর পার্ক স্থাপনে সরকারি এক হাজার একর জমিতে প্রকল্প বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করছি। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, করোনার এই মহামারীর সময় আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ ছিল নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা। আর এই করোনাকালীন সময়ে আম্ফানের মতো একটি ঘূর্ণিঝড় দেশে এলো। কিন্তু আমরা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যেসব এলাকায় ঝড়ে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল তা মেরামত করতে পেরেছি। কভিড-১৯ চলাকালীন সব স্থানে বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্নতা ছিল। সারা দেশে আমাদের সঞ্চালন ব্যবস্থা সঠিক রেখেছি। একই সঙ্গে কাজের অগ্রগতি যেন ঠিক থাকে আমরা সেদিকেও লক্ষ্য রেখেছি। করোনা সংক্রমণের সময় আমরা তিন মাস বিদ্যুতের যারা আবাসিক গ্রাহক তাদের কাছ থেকে কোনো সারচার্জ নিইনি। তবে এ সময় বিদ্যুতের বিল দিতে গিয়ে অনেকে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। তাদের অতিরিক্ত বিল দিতে হয়েছে। এ সমস্যাগুলো সমাধান করার জন্য আমরা ইতিমধ্যে নির্দেশ দিয়েছি। কোনো গ্রাহকের যদি মনে হয় তার বিল অতিরিক্ত এসেছে তাহলে তিনি কেন্দ্রে ফোন করে বা মেসেজ পাঠিয়ে অভিযোগ করতে পারেন। তখন দায়িত্বপ্রাপ্তরা এসে তার মিটার দেখে সমস্যা সমাধান করে দেবেন। এরই মধ্যে যারা অভিযোগ করেছেন তাদের ৮০ শতাংশের বিল সমন্বয় করে দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে আমি সংশ্লিষ্ট ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিগুলোকে এ সমস্যা সমাধানের জন্য সাত দিন সময় দিয়েছি। তারা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে। আর যেসব কর্মকর্তার কারণে এ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। হঠাৎ করে অনেক গ্রাহকের এই অতিরিক্ত বিল দেওয়ার বিষয়টি অনাকাক্সিক্ষত। এ জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে আমরা দুঃখ প্রকাশ করেছি। তবে এ জন্য কারও ঘাবড়ানোর কিছু নেই। আমরা বিল সমন্বয় করে দেব। করোনার এই সময়ে মাঠ পর্যায়ের কাজে কিছু সমস্যা হওয়ায় এবং অটোমেশন না থাকায় এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যে আমাদের অটোমেশন চলছে। গত দুই বছরে প্রায় ৩০ লাখ বিদ্যুতের মিটার স্মার্ট প্রি-পেইড মিটারের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। এর বাইরে আরও এক কোটি মিটার স্মার্ট প্রি-পেইড মিটারের আওতায় চলে আসবে। এর ফলে বিল দিতে গিয়ে যে বিভিন্ন জটিলতা তৈরি হয় যেমন- বিল দিতে দেরি হওয়া বা বিল দিতে ব্যাংক যাওয়া এসব ঝামেলা আর থাকবে না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর