সোমবার, ২৯ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

সাত মাসের গর্ভবতী হাসপাতাল দুয়ারে ঘুরে ঘুরে মারাই গেলেন

কক্সবাজার প্রতিনিধি

পেটে ৭ মাসের বাচ্চা। হয়েছিল টনসিলের ব্যথা। ব্যথার তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসা চাইতে গিয়ে বিপদে পড়ে যান এ নারী। অহেতুক করোনারোগী সন্দেহ করে দুই হাসপাতাল তাকে টানা নয় ঘণ্টা ধরে ঘুরিয়েছে। কিন্তু তারপরও চিকিৎসাটা দেওয়া তো দূরের কথা, পাশেও যাননি কোনো ডাক্তার, নার্স। শেষ পর্যন্ত এ নারী বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

জানা গেছে, কক্সবাজারের চকরিয়ার বেতুয়াবাজার এলাকার  রাবেয়া (৩২) সাত মাসের গর্ভবতী ছিলেন। বেশ কিছুদিন আগে চকরিয়ায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে তার ঘরে পানি ওঠে। ওই সময় পানি সরানোসহ ঘরের কাজ করতে গিয়ে ঠা া লেগে যায় তার। এতে টনসিলের সমস্যায় ভুগতে শুরু করেন। গত শুক্রবার সকালে অবস্থার অবনতি হলে তাকে চকরিয়ার জমজম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ভর্তি করা হয় মেডিসিন ওয়ার্ডে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে গাইনি ওয়ার্ডে রেফার করেন। কিন্তু করোনারোগী সন্দেহে গাইনি ওয়ার্ডে থাকা ডা. নাসিমা ও ডা. ফয়েজ এ রোগীকে গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি নিতে রাজি হননি। পরে সেখান থেকে রাবেয়াকে নিয়ে যাওয়া হয় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে। জমজম থেকে তাকে গাইনি ওয়ার্ডে রেফার করা হলেও কক্সবাজার সদর হাসপাতালে রাবেয়াকে ভর্তি করে রাখা হয় করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে। এখানে এসে রাবেয়ার অবস্থার আরও অবনতি হয়। তাকে গাইনি ওয়ার্ডে স্থানান্তর করতে চাইলে হাসপাতাল থেকে পরিবারের সদস্যদের বলা হয়, ‘এখানে চিকিৎসা হবে না, রোগীকে চট্টগ্রাম নিয়ে যান।’

কক্সবাজার সদর হাসপাতালেও চিকিৎসা না পেয়ে রাবেয়ার পরিবারের সদস্যরা ডুলাহাজারা মালুমঘাট খ্রিস্টান মিশনারি হাসপাতালে যোগাযোগ করেন। তারা রাবেয়াকে গাইনি চিকিৎসা দিতে রাজি হয়। কিন্তু সেই চিকিৎসা পাওয়ার আগেই কক্সবাজার সদর হাসপাতাল থেকে মালুমঘাট নেওয়ার পথে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে পেটে সাত মাসের অনাগত বাচ্চা নিয়ে রাবেয়া মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মহিউদ্দীন বলেন, ‘আমি এই বিষয়ে কিছুই জানি না। এমন হওয়ার কথা নয়। রোগীর পরিবারের সদস্যরা যোগাযোগ করলে আমি এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেব।’

সর্বশেষ খবর