বৃহস্পতিবার, ২ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

ময়ূরের মালিক-চালক লাপাত্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ময়ূরের মালিক-চালক লাপাত্তা

ঢাকায় বুড়িগঙ্গা নদীতে লঞ্চডুবির ঘটনার পর থেকে ঘাতক লঞ্চ ময়ূরের মালিক-চালক লাপাত্তা রয়েছেন। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী দোষীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিতের কথা বললেও এখনো দুর্ঘটনায় জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। এদিকে দ্বিতীয় দিনের মতো প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা নিয়েছে মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটি। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. রফিকুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে সাত সদস্য রয়েছেন ওই তদন্ত কমিটিতে।

গতকাল প্রত্যক্ষদর্শী, মারা যাওয়া ব্যক্তির পরিবারের সদস্য, মালিক-শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে কথা বলেন তদন্তকারীরা। তবে অভিযুক্ত মালিকপক্ষের সঙ্গে এখনো যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি বলে জানান তদন্ত কমিটির প্রধান। লঞ্চডুবিতে প্রাণহানির ঘটনায় এমভি ময়ূর-২ লঞ্চের মালিক ও মাস্টারসহ সাতজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৫-৬ জনের বিরুদ্ধে অবহেলাজনিত মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগ এনে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হননি। যদিও দুর্ঘটনার দিন সোমবারই ঘাতক লঞ্চটি জব্দ করা হয়েছে। তবে আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে নৌ পুলিশ। তদন্ত কমিটির প্রধান নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. রফিকুল ইসলাম খান জানান, ঘটনাস্থল তারা পরিদর্শন করেছেন। এ ছাড়া স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছেন। সাত দিনের মধ্যে এ তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার চেষ্টা করবেন। মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসককে তারা অনুরোধ করেছেন সাক্ষ্য নেওয়ার জন্য, প্রয়োজনে তারাও মুন্সীগঞ্জে গিয়ে সাক্ষ্য নেবেন, সেই প্রস্তুতিও তাদের আছে। এদিকে চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবির ঘটনায় তদন্ত কমিটি নির্দিষ্ট সময়ে প্রতিবেদন জমা দেবে উল্লেখ করে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, দোষীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। গতকাল দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরের কর্মীদের করোনা চিকিৎসার জন্য ৬০ শয্যার বিশেষায়িত ইউনিট ও নতুন হাসপাতাল ভবনের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা জানান। বুড়িগঙ্গায় মুন্সীগঞ্জ থেকে আসা মর্নিং বার্ড নামে একটি লঞ্চডুবির ঘটনা তদন্তে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় গঠিত উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটির আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়। তদন্ত শেষে পুরো বিষয়টি স্পষ্ট হবে বলে মনে করছেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, লঞ্চ দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটনের পাশাপাশি লঞ্চ পরিচালনাকারীদের দায়িত্বে অবহেলার বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে। গত ২৯ জুন সকাল সাড়ে ৯টায় চাঁদপুরগামী ‘এমভি ময়ূর-২’ লঞ্চের ধাক্কায় শ্যামবাজার এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীতে ডুবে যায় মুন্সীগঞ্জের কাঠপট্টি থেকে অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে ঢাকার সদরঘাটের দিকে আসা যাত্রীবাহী লঞ্চ ‘এমভি মর্নিং বার্ড’। ওইদিন ৩২ জনের লাশ উদ্ধার হলেও মঙ্গলবার আরও দুজনের লাশ পাওয়া যায়। ফলে এ দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৪ জনে। বিআইডাব্লিউটিএ সূত্র বলছে, ময়ূর-২ এবং মর্নিং বার্ড উভয় লঞ্চেরই রেজিস্ট্রেশন ও ফিটনেস সার্টিফিকেট রয়েছে। তবে ঘটনার সময় ময়ূর-২ যারা চালাচ্ছিলেন, সেই মাস্টার, সারেং, সুকানি ও সুপারভাইজারদের লঞ্চ পরিচালনায় দক্ষতা ছিল কিনা অথবা এক্ষেত্রে তাদের কোনো অবহেলা ও গাফিলতি ছিল কিনা, এসব বিষয়েও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর