বৃহস্পতিবার, ২ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

জুনেও রেমিট্যান্সের রেকর্ড

আলী রিয়াজ

করোনা প্রাদুর্ভাবে দেশের সব খাতে নিম্নগতি থাকলেও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স রেকর্ড ছুঁয়েছে। মে মাসের পর জুনেও রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। গত এক মাসে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ১৫৬ কোটি ডলারের বেশি; যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রেমিট্যান্সে উল্লম্ফন হয়েছে। অর্থবছর শেষে ১৮০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে মোট রেমিট্যান্স; যা গত পাঁচ অর্থবছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। সরকার আগের অর্থবছরে রেমিট্যান্সের ওপর দেওয়া ২ শতাংশ প্রণোদনা এবারের বাজেটেও বহাল রেখেছে। এ ছাড়া মহামারীর কারণে হুন্ডি বন্ধ হয়েছে। অবৈধ পথে অর্থ লেনদেনের সুযোগ সীমিত হওয়ায় প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ভরসা রাখছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকসূত্রে জানা গেছে, বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার এক মাসের মধ্যে ১ লাখের বেশি বাংলাদেশি কর্মসংস্থান হারিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন। চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৬ মার্চ সময়সীমার মধ্যে দেশে ফিরেছেন প্রায় ২ লাখ বেকার প্রবাসী। অর্থনৈতিক মন্দার কারণে সৌদি আরব, কুয়েত, ওমান, বাহরাইন ও মালদ্বীপে বেকার হয়ে পড়েছেন বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি। সেই সঙ্গে করোনার কারণে ইউরোপের দেশগুলোতেও কর্মসংস্থান হারিয়েছেন অনেক বাংলাদেশি। তবে চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই বিদেশ থেকে পাঠানো প্রবাসীদের রেমিট্যান্স ছিল ঊর্ধ্বমুখী। চলতি বছরের শুরুতে জানুয়ারি মাসে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ১৬৩ কোটি মার্কিন ডলার; বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৩ হাজার ৫৫১ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের শুরুতে জুলাইয়ে ছিল ১৬০ কোটি ডলার, আগস্টে ১৪৫ কোটি ডলার, সেপ্টেম্বরে ১৪৮ কোটি ডলার, নভেম্বরে ১৫৬ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে ১৭০ কোটি ডলার। অর্থাৎ প্রথম সাত মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ৭৮০ কোটি মার্কিন ডলার; যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা। করোনাভাইরাসের প্রভাবে ফেব্রুয়ারিতে কমতে শুরু করে রেমিট্যান্স পাঠানো। সে মাসে রেমিট্যান্স আসে ১৪৫ কোটি ডলার। মার্চে তা কমে দাঁড়ায় ১১৫ কোটি মার্কিন ডলারে। এপ্রিলে নেমে এসেছে ১০০ কোটি ডলারের নিচে; যা গত তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। তবে এর পরই রেমিট্যান্স প্রবাহ ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ওঠে। প্রবাসীরা বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন দেশে। চলতি বছরের মে মাসে রেমিট্যান্স আসে ১৫০ কোটি মার্কিন ডলার। জুনে যা হয়েছে ১৫৬ কোটি ডলার। পুরো অর্থবছরে হিসাবে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ১৮০০ কোটি ডলারের বেশি। বাংলাদেশ মুদ্রায় যা প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা; যা গত পাঁচ অর্থবছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আগের অর্থবছরে যা ছিল ১৬৪১ কোটি মার্কিন ডলার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এসেছে প্রায় ১৫০০ কোটি ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ছিল ১২৭৬ কোটি ডলার। রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে সরকার যে প্রণোদনা দিয়েছে তাতে অনেক উপকার হয়েছে সবার। এ সংকটের সময় প্রবাসীরা আমাদের বাঁচিয়ে দিয়েছেন। আর্থিক লেনদেনে অবৈধ চ্যানেল ঝুঁকিপূর্ণ। এটাও একটি কারণ রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতে। এ কারণে বাজারে ডলার সংকটও কেটে গেছে।

সর্বশেষ খবর