শুক্রবার, ৩ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

বন্যায় ঝুঁকি দেখছি না ব্যাপক প্রস্তুতি আছে খাদ্য সংকট হবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক

বন্যায় ঝুঁকি দেখছি না ব্যাপক প্রস্তুতি আছে খাদ্য সংকট হবে না

ড. আবদুর রাজ্জাক

কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, আগাম বন্যায় চ্যালেঞ্জ থাকলেও তেমন ঝুঁকি দেখছি না। আমন উৎপাদনের ব্যাপক প্রস্তুতি আছে। খাদ্য সংকটের সম্ভাবনা নেই।

গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে কৃষিমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বন্যা মোকাবিলা এবং বন্যা-পরবর্তী কৃষি ও খাদ্য উৎপাদন প্রস্তুতির পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি সাক্ষাৎকারে বিস্তারিত তুলে ধরেন।

ড. আবদুর রাজ্জাক একজন কৃষিবিষয়ক বিশেষজ্ঞ। যুক্তরাষ্ট্রের পারডু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। আবদুর রাজ্জাক এর আগে খাদ্যমন্ত্রী হিসেবে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিও ছিলেন। দীর্ঘদিন তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কৃষিবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সভাপতিমন্ডলীর অন্যতম সদস্য তিনি।  ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তার নির্দেশ এক ইঞ্চি জমিও খালি রাখা যাবে না। আমরা সেভাবেই কাজ করছি। তিনি বলেন, বাড়ির অঙ্গিনায় সবজি চাষের একটা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী সবসময় দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। আর কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়ার ব্যাপারে তিনি সবসময় উদার। 

মন্ত্রী বলেন, এবারের বন্যা তুলনামূলকভাবে আগাম। এত দ্রুত এলাকা তলিয়ে যাবে তা আশা করিনি। পানি তিস্তায় চলে যাচ্ছে। আরও বন্যা হতে পারে। তবে আমাদের প্রস্তুতিও আছে। তিনি বলেন, এ মুহূর্তে আউশ একমাত্র ফসল। আর গ্রীষ্মকালীন শাক-সবজি সাধারণত উঁচু জমিতে করা হয়। আগে গ্রীষ্মকালে তেমন শাক-সবজি ছিল না। এখন সারা বছরই সবজি চাষ হয়। বন্যায় কিছু এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বড় রকমের কোনো ক্ষতি হবে না। তিনি বলেন, তিস্তা এলাকায় ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ ধান আছে। বন্যা হলেও আউশ ধান পানিতে টিকে থাকতে পারে। সুতরাং আউশ ধনের তেমন ক্ষতি হবে না। কৃষিমন্ত্রী বলেন, সামনে আমন ধান আছে। বন্যায় বীজতলা নষ্ট হয়েছে। তবে এটা কাটিয়ে উঠতে পারব। অতিরিক্ত বীজতলা করার আমাদের প্রস্তুতি আছে। তাই এখন পর্যন্ত তেমন ঝুঁকি দেখছি না। তিনি বলেন, এবার আমনের বীজের চাহিদা বেশি। বিএডিসির (বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন) আমন বীজ অস্বাভাবিকভাবে বেশি বিক্রি হয়েছে। এবার ধানের দাম বেশি থাকায় চাষিরা আমন উৎপাদনে উৎসাহিত হয়েছেন। অস্বাভাবিক কিছু না হলে এবার আমনের ফলন ভালো হবে। ড. আবদুর রাজ্জাক কিছুটা আশঙ্কার কথাও তুলে ধরে বলেন, আমনের একটা ঝুঁকি আছে। কার্তিক মাসে সাধারণত একটা খড়া হয়। এক্ষেত্রে ফলন অনেকটা কমে যায়। তবে প্রস্তুতিও নিচ্ছি। আমন উৎপাদনে প্রয়োজনে সেচের ব্যবস্থা করব। এক্ষেত্রে বিএডিসি কৃষকদের সেচ সুবিধায় ৫০ ভাগ প্রণোদনা দেবে। আবদুর রাজ্জাক বলেন, আগামী বছর আমরা রবি ফসল অর্থাৎ গম, ভূট্টা, আলু ও সরিষা উৎপাদন বাড়াতে পরিকল্পনা নিয়েছি। চাষযোগ্য জমি বাড়ানোর পাশাপাশি উৎপাদনশীলতাও বাড়ানোর প্রস্তুতি নিয়েছি। তিনি বলেন, দেশের দক্ষিণাঞ্চল লবণাক্ত এলাকা। সেখানে একমাত্র ফসল আমন। ওই এলাকায় ভূট্টা, তরমুজ ও আলু হয়। তাই আমনের পাশাপাশি এসব ফসল উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, আমাদের কৃষি বিজ্ঞানীরা লবণাক্তসহিষ্ণু ধান জাত উৎপাদন করায় সেসব অঞ্চলেও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ধান উৎপাদন হচ্ছে। সেচের জন্য খাল কাটার পরিকল্পনা আছে। বুধবার মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে একটা বৈঠক করেছি। উপকূলবর্তী এলাকা কীভাবে সেচের আওতায় আনা যায় সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে কথা বলেছি। পাশাপাশি উপকূলের কৃষকদের লবণাক্তসহিষ্ণু ধান উৎপাদনের কারিগরি সক্ষমতা অর্জনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দেশের ১০ লাখ হেক্টর কৃষি জমির মধ্যে এক-চতুর্থাংশ উপকূলবর্তী এলাকায়। সুতরাং এই বৃহৎ এলাকায় খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। ধান উৎপাদনে খরচ বেশি হওয়ায় রবি ফসল উৎপাদনে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমন ধান স্বল্প সময়ে ওঠে। তাই আমন ও বোরোর মাঝামাঝি সমতলে একাধিক ফসল উৎপাদনের চেষ্টা করছি। যাতে একই জমিতে তিনটি ফসল উৎপাদন হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর