শনিবার, ৪ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

এমপি পাপুলের ঘুষ নিয়ে কুয়েতি রাজনীতিক ও কর্মকর্তা গ্রেফতার

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

অর্থ ও মানব পাচারের অভিযোগে কুয়েতে গ্রেফতার এমপি শহীদ ইসলাম পাপুলের মদদদাতাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে কুয়েতের বিচার বিভাগ। এ ঘটনায় সর্বশেষ আরও দুজনের গ্রেফতারের খবর দিয়েছে দেশটির গণমাধ্যম। গ্রেফতার হওয়াদের একজন কুয়েতের শ্রম বিভাগের এক পরিচালক এবং অন্যজন একজন রাজনীতিবিদ, যিনি গত পার্লামেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। ওই দুজনকে ২১ দিনের আটকাদেশ দিয়ে কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পাবলিক প্রসিকিউটরদের বরাতে আরবি দৈনিক আল-রাই এসব তথ্য জানিয়েছে। আরবি পত্রিকা আল-কাবাস জানিয়েছে, কুয়েতের যে দুই এমপির বিরুদ্ধে পাপুলকে বেআইনি কাজে সহযোগিতা এবং অর্থ পাচারে জড়িত থাকার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হয়েছে, তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে ‘সংসদীয় ইমিউনিটি’ প্রত্যাহার করা হয়েছে। সালাহ খুরশিদ ও সাদুন হাম্মাদ নামের ওই দুই এমপির বিরুদ্ধে গত ২৭ জুন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ এনেছিল পাবলিক প্রসিকিউটরের অফিস। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি করতে পার্লামেন্ট সদস্য হিসেবে যে দায়মুক্তি তারা পান, তা প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়েছিল সে সময়। এই আবেদন অনুমোদন করেছে কুয়েতের সংসদীয় বিচার বিষয়ক কমিটি। এ সিদ্ধান্তের ফলে কুয়েতের পাবলিক প্রসিকিউশন এখন তাদের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করতে পারবে। লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য পাপুলকে গত ৬ জুন রাতে কুয়েতের মুশরিফ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পাচারের শিকার পাঁচ বাংলাদেশির অভিযোগের ভিত্তিতে পাপুলের বিরুদ্ধে মানব পাচার, অর্থ পাচার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগ এনেছে কুয়েতি প্রসিকিউশন। ১৭ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর এখন তাকে রাখা হয়েছে কুয়েতের কেন্দ্রীয় কারাগারে। এমপি পাপুল কুয়েতি কর্মকর্তাদের কীভাবে কত টাকা ঘুষ দিয়েছেন, সে বিষয়ে রিমান্ডে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন তিনি, যা প্রসিকিউটরদের বরাতে প্রকাশ করছে স্থানীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। এর মধ্যে নাগরিকত্ব, পাসপোর্ট ও বসবাসের অনুমতি বিষয়ক দফতরের অ্যাসিসট্যান্ট আন্ডার সেক্রেটারি মেজর জেনারেল মাজেন আল-জারাহকে বরখাস্ত করেছে কুয়েত সরকার। এমপি পাপুল ঘুষ দিয়েছিল তাকে। এ ছাড়া প্রসিকিউশনের আবেদনে কুয়েতের জনশক্তি কর্তৃপক্ষের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে এবং দেশটির শীর্ষস্থানীয় এক হোম ডেকর কোম্পানির মালিক এক নারী ব্যবসায়ীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। পাপুলের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণকারী হিসেবে চিহ্নিত কুয়েতি কর্মকর্তাদের একজন ওই নারী ব্যবসায়ীর ভাই। ওই কর্মকর্তাসহ তিনজনকে এর আগে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন দেশটির সরকারি কৌঁসুলিরা। আগামী ৬ জুলাই এমপি পাপুলের বিরুদ্ধে কুয়েতে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠনের কথা রয়েছে। এর আগ পর্যন্ত পাপুলকে কারাগারেই থাকতে হবে। আরবি পত্রিকা আল কাবাসের বরাতে গলফ নিউজ গত সপ্তাহে জানায়, কুয়েতের বিভিন্ন সরকারি দফতর সাম্প্রতিক সময়ে পাপুলের কোম্পানির সঙ্গে অন্তত চারটি চুক্তি নবায়ন করেছে, যেগুলোর মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। এর মধ্যে দুটি চুক্তির মেয়াদ শেষ হয় গত দুই মাসের মধ্যে। এরপর করোনাভাইরাস মহামারীর যুক্তি দিয়ে সেগুলো নবায়ন করা হয়। এক মিলিয়ন কুয়েতি দিনার বা ৩.২৫ মিলিয়ন ডলারের ওই চার চুক্তির বেশিরভাগই করা হয়েছে পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগের বিষয়ে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর