শিরোনাম
রবিবার, ৫ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

বিদ্যুৎ বিল কারসাজিতে জড়িতরা চিহ্নিত

২৮৭ জনকে শাস্তির সুপারিশ ডিপিডিসির ৪ জন বরখাস্ত

জিন্নাতুন নূর

দেশের বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো নির্ধারিত এক সপ্তাহের মধ্যে বিদ্যুতের ভুতুড়ে বিল সমন্বয় করতে ব্যর্থ হয়েছে। এজন্য দায়ী চারটি বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার ২৮৭ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে বিদ্যুতের গঠিত টাস্কফোর্স। এর আগে গত ২৫ জুন বিদ্যুৎ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে গঠিত টাস্কফোর্সকে সাত দিনের মধ্যে ভুতুড়ে বিলের ব্যাপারে সমাধান দিতে না পারলে বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শাস্তি দেওয়ার কথা বলে। আজ দুপুরে এ বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানাবেন।

জানা যায়, টাস্কফোর্স ঢাকা দক্ষিণ এলাকার বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) প্রকৌশলীসহ মোট চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত করার সুপারিশ করেছে। এ ছাড়া ৩৬ জন প্রকৌশলীকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া এবং ১৩ মিটার রিডার সুপারভাইজারকে বরখাস্ত করার সুপারিশ করেছে। ঢাকা উত্তরের বিতরণ সংস্থা ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) দুজন মিটার রিডারকে বরখাস্তের সুপারিশ করেছে। রাজশাহী ও রংপুরের ১৬ জেলায় বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) দুজন মিটার রিডারকে বরখাস্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। আর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার বিতরণ সংস্থা ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ২৩০ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কারণ দর্শাও, বরখাস্তসহ বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) ৮০টি সমিতির কারা কারা ভুতুড়ে বিলের জন্য দায়ী এ ব্যাপারে এখনো কোনো তথ্য দেয়নি আরইবি। কোনো তথ্য দেয়নি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডও (পিডিবি)।

ডিপিডিসির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিলের জন্য দায়ী হওয়ায় এরই মধ্যে ডিপিডিসির একজন নির্বাহী প্রকৌশলী, একজন উপবিভাগীয় প্রকৌশলী, সহকারী প্রকৌশলী এবং একজন ডাটা এন্ট্রি  কো-অর্ডিনেটরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া এনওসি (স্থানীয় কার্যালয়) এর ৩৬জন নির্বাহী প্রকৌশলীকেও কারণ দর্শানোর জন্য নোটিস দেওয়া হয়েছে। তাদের কারণ দর্শানোর জন্য ১০ দিন সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে ডিপিডিসির কিছু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আছে যারা আউটসোর্সিং কাজ করত তাদের মধ্যে ১৩ জন মিটার রিডার এবং একজন সুপারভাইজারের নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। যেহেতু এই মিটার রিডাররা সঠিকভাবে মিটার রিড করার দায়িত্ব পালন করেননি এজন্য তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর বাইরে ডিপিডিসির কিছু কর্মকর্তাকেও বদলি করা হয়েছে। ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) এ টি এম হারুন অর রশিদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের অভ্যন্তরীণ যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল তার প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে প্রতিবেদনে প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী আমাদের ম্যানেজমেন্ট থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে ডেসকোর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বলেন, অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিলের জন্য দায়ী হওয়ায় ডেসকোর মোট সাতজন মিটার রিডার এবং একজন ডাটা এন্ট্রি কো-অর্ডিনেটরসহ আটজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এদের মধ্যে একজন ডাটা এন্ট্রি  অপারেটর পোস্টিং দিতে গিয়ে ভুল করেন। আর সাতজন মিটার রিডার ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবেই হোক ভুল রিডিং নিয়ে আসেন। দায়ী আটজনের মধ্যে দুজনকে এরই মধ্যে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আর বাকি ছয়জনকে সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠানো হয়েছে। এরপর তাদের দেওয়া জবাব সন্তোষজনক না হলে তাদেরও চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।

ডেসকোর প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম মহিউদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের মোট ১০ লাখ গ্রাহকের মধ্যে ৯৭২ জন গ্রাহক অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল নিয়ে অভিযোগ করেছেন। আমরা যাচাই-বাছাই করে কেন বিল বেশি এসেছে জানার চেষ্টা করেছি। দেখেছি, ৮৬ শতাংশ লোক বিদ্যুৎ বিল এরই মধ্যে পরিশোধ করে দিয়েছেন। কিছু গ্রাহক স্লাব সুবিধা পাননি আর এই সংখ্যা ৪০ থেকে ৫০টি হবে। এজন্য এই সমস্যা হয়েছিল কিন্তু আমরা সেই সুবিধাও এখন অন্তর্ভুক্ত করে দিয়েছি। আমাদের মূল সমস্যা হয়েছে এপ্রিল ও মে এই দুই মাসের বিল নিয়ে। ডেসকোর পক্ষ থেকে পরবর্তীতে এই ৯৭২ জন গ্রাহকের ঘরে ঘরে গিয়ে অতিরিক্ত বিল আসার কারণ যাচাই করা হয়।

বিদ্যুৎ বিভাগের গঠিত তদন্ত কমিটির এক সদস্য জানান, আরইবি ও পিডিবির তদন্ত কমিটি এখনো কাজ করছে।  রবিবার সবার বিষয়ে সব কিছু স্পষ্ট করে বলা যাবে বলে তিনি জানান। বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে গ্রাহকরা গত দুই মাস ধরে অতিরিক্ত বিলের অভিযোগ করে আসছিল। এই বিষয়টিতে খোদ বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে গত ২৫ জুন অতিরিক্ত বিলের কারণ উদঘাটনে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিদ্যুৎ বিভাগ। এই কমিটিকে সাত দিন সময় দিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিল তদন্তে গঠিত টাস্কফোর্সের কাছে এরই মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা হয়েছে। প্রতিবেদনগুলো একত্রিত করে যে মূল প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে তা নিয়ে আজ বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সংবাদ সম্মেলন করে সাংবাদিকদের বিস্তারিত জানাবেন। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিদ্যুতের বিল দিতে গিয়ে সম্প্রতি অনেকে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। তাদের অতিরিক্ত বিল দিতে হয়েছে। আমি সংশ্লিষ্ট ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিগুলোকে এই সমস্যা সমাধানের জন্য সাত দিন সময় বেঁধে দিয়েছি। তারা এ ব্যাপারে ব্যবস্থাও নিয়েছেন। আর যেসব কর্মকর্তার কারণে এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যও নির্দেশ দিয়েছি।

সর্বশেষ খবর