রবিবার, ৫ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

ওয়ারীতে ২১ দিনের লকডাউন শুরু

নানা অজুহাতে বের হচ্ছেন কেউ কেউ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ওয়ারীতে ২১ দিনের লকডাউন শুরু

রাজধানীর ওয়ারীতে গতকাল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

এবার ২১ দিনের লকডাউন শুরু হলো পুরান ঢাকার ওয়ারী এলাকায়। গতকাল ভোর ৬টা থেকে লকডাউন কার্যকর করা হয়েছে। সকাল থেকেই এলাকাটির দুটি প্রবেশপথে ওয়ারী থানা পুলিশ এবং সিটি করপোরেশনের স্বেচ্ছাসেবকরা তদারকি করেন। যারা জরুরি সেবার আওতার মধ্যে রয়েছেন তাদেরই এলাকা থেকে বের হতে ও প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। এদিকে রেড জোনে থাকা ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কিছুটা বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। প্রথম দিনেই কঠোর অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরিচয়পত্র ছাড়া কাউকে ঢুকতে-বের হতে দেওয়া হয়নি। গৃহকর্মীরাও ভিতরে কাজে যাওয়ার অনুমতি পাননি। এর মধ্যেও নানা অজুহাতে অনেককেই লকডাউন এলাকা থেকে বের হতে দেখা গেছে।

সকাল ১০টার দিকে ডিএসসিসি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো. এমদাদুল হক ৮-১০টি গাড়ির বহর নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করেন। এলাকা পরিদর্শনে এসে তিনি জানান, লকডাউনের মধ্যে নাগরিক সেবা দিতে ওয়ারীতে ই-কমার্স রয়েছে, ভ্যান সার্ভিস রয়েছে। তারা বিভিন্ন খাবার-দাবার নিয়ে ভিতরে অবস্থান করছে। ওষুধের দোকানগুলো খোলা। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার লোকজন পরিষ্কার-পরিছন্নতার কাজ করছেন। লকডাউন এলাকায় দুজন চিকিৎসক রয়েছেন। তারা করোনায় আক্রান্ত রোগীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেছেন। করোনার উপসর্গ আছে এমন পাঁচজন ব্যক্তির নমুনাও সংগ্রহ করেছেন তারা। এ ছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য হাসপাতাল প্রস্তুত রয়েছে। এক লাখেরও বেশি মানুষের বাস ওয়ারীতে এখন পর্যন্ত ৪৬ জন করোনা পজিটিভ হয়েছেন। গতকাল সকাল ৬টা থেকে লকডাউন শুরু হলেও ওয়্যার স্ট্রিটে ১০টার পর থেকে লোকজন ওয়ারী থেকে বের হওয়ার জন্য রাস্তায় নামেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হট কেকের দোকানের সামনে ভিড়ও বাড়তে থাকে। অনেকে সেখানে থাকা বুথে নাম-ঠিকানা লিখে বিভিন্ন অজুহাতে বের হন। এ ছাড়া কোনো কোনো ব্যক্তিকে কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই বের হতে দেখা গেছে। দুপুর ১২টার দিকে লকডাউন এলাকা থেকে বের হন যোগীনগরের বাসিন্দা আবুল হোসেন। এ সময় বের হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি কোনো কথা বলতে চাননি। তবে বুথের খাতায় লিখেছেন, তিনি গুলিস্তান যাচ্ছেন। কিন্তু কেন যাচ্ছেন, কার কাছে যাচ্ছেন, এর কিছুই খাতায় উল্লেখ করেননি। লকডাউন কার্যকরের আগে বিভিন্ন প্রস্তুতি নেয় সিটি করপোরেশন। প্রতিটি রাস্তা ও গলির মুখ বাঁশ দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গত তিন দিন মাইকিং করে লকডাউনের প্রস্তুতি এলাকাবাসীর কাছে তুলে ধরা হয়। ওয়ারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে নমুনা সংগ্রহের জন্য বুথ স্থাপিত হয়েছে। বিভিন্ন সড়কের মোড়ে মোড়ে লকডাউন এলাকার নাম ও কট্রোল রুমের জরুরি ফোন নম্বর উল্লেখ করে ব্যানার টাঙানো হয়েছে। ওয়ারীর মোট ১৭টি প্রবেশপথের মধ্যে ১৫টিতে বাঁশের বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। খোলা আছে র‌্যাংকিন স্ট্রিট, টিপু সুলতান ক্রসিং এবং হট কেকের মোড়। প্রায় ২০০ স্বেচ্ছাসেবক এলাকার বাসিন্দাদের জরুরি সেবা দিতে প্রস্তুত। ডিএসসিসির ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের টিপু সুলতান রোড, জাহাঙ্গীর রোড, ঢাকা-সিলেট হাইওয়ে (জয়কালী মন্দির থেকে বলধা গার্ডেন) আউটার রোড এবং ইনার রোড হিসেবে লারমিনি রোড, হরে রোড, ওয়্যার রোড, র‌্যাংকিন স্ট্রিট এবং নওয়াব রোড এই রেড জোনের আওতায় পড়বে। এ অঞ্চলে ২১ দিন থাকবে সাধারণ ছুটি। সরকারি-বেসরকারি সব অফিস-কারখানা বন্ধ থাকবে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী যারা এ এলাকায় বসবাস করেন, তারাও থাকবেন ছুটির আওতায়। দোকানপাট, বিপণিবিতান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানও বন্ধ থাকবে, খোলা থাকবে শুধু ওষুধের দোকান।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর