সোমবার, ৬ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল

এক দিনে আরও ৫৫ জনসহ ২ হাজার ছাড়ল

বিশেষ প্রতিনিধি

দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৫৫ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ২ হাজার ৫২ জনে। দেশে করোনা শনাক্তের ১২০তম দিনে ২ হাজার ছাড়িয়ে গেল মৃতের সংখ্যা। গত এক দিনে নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ৭৩৮ জনের শরীরে। এ নিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত মোট শনাক্ত হয়েছেন ১ লাখ ৬২ হাজার ৪১৭ জন। আইইডিসিআরের অনুমিত হিসাবে গত ২৪ ঘণ্টায় বাসা ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ১ হাজার ৯০৪ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তাতে সুস্থ রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল মোট ৭২ হাজার ৬২৫ জনে। দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী প্রথম শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ, তার ১০ দিনের মাথায় ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর খবর আসে। প্রায় এক মাস পর ২০ এপ্রিল মৃতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছিল। গত ২৫ মে মৃতের সংখ্যা ৫০০ ছাড়ায়। ১০ জুন মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়ায়। দেড় হাজার ছাড়িয়েছিল ২২ জুন। প্রথম মৃত্যুর ৮৫ দিন পর ৫ জুলাই মৃতের সংখ্যা ২ হাজারের ঘর ছাড়িয়ে গেল। এই হিসেবে মৃতের সংখ্যা ৫০০ ছাড়াতে সময় লেগেছিল দুই মাস সাত দিন। পরের ৫০০ জনের মৃত্যু ঘটে ১৬ দিনের মধ্যে। তার পরের ৫০০ জনের মৃত্যু ঘটে ১২ দিনে। মৃতের তালিকায় আরও ৫০০ জন যোগ হতে সময় লাগল ১৪ দিন। গতকাল করোনা পরিস্থিতি নিয়ে সবশেষ তথ্য জানাতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত অনলাইন বুলেটিনে হাজির হন অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা। তিনি জানান, গত এক দিনে যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে ৩৭ জন পুরুষ এবং ১৮ জন নারী। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৪১ জনের এবং বাড়িতে থাকা অবস্থায় ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৯ জন ঢাকা বিভাগের, ১৩ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, আটজন রংপুর বিভাগের, ছয়জন খুলনা বিভাগের, পাঁচজন বরিশাল বিভাগের, দুজন সিলেট বিভাগের, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের একজন করে বাসিন্দা ছিলেন। মারা যাওয়া এই ৫৫ জনের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ১২ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ৯ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ১৭ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১৩ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে তিনজন এবং শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে একজন রয়েছেন। দেশে এ পর্যন্ত যে ২০৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে ১ হাজার ৬২৪ পুরুষ, ৪২৮ জন নারী। ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, সারা দেশে ৭৩টি ল্যাব চালু হলেও গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৮টি পরীক্ষাগার থেকে নমুনা সংগ্রহের তথ্য পাওয়া গেছে। নমুনা পরীক্ষায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে সাভারের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি ও ঢাকার সিআরএল ডায়াগনস্টিক সেন্টার। ৬৮টি পরীক্ষাগারে গত এক দিনে ১৩ হাজার ৯৮৮টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে, এ পর্যন্ত দেশে পরীক্ষা হয়েছে ৮ লাখ ৪৬ হাজার ৬২টি নমুনা। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৪৪ দশমিক ৭২ শতাংশ, মৃত্যু হার ১ দশমিক ২৬ শতাংশ। এখন পর্যন্ত মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে পুরুষ ১ হাজার ৬২৪ জন, যা শতকরা ৭৯ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং নারী ৪২৮ জন, যা শতকরা ২০ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এদিকে সারা দেশের কোথায় কোথায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হলো তার সর্বশেষ খবর জানিয়েছেন আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা- দিনাজপুর : জেলায় যোগেশ চন্দ্র রায় নামে একজন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতসহ ৪১ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৭৩৮ জনে। এর মধ্যে পুরুষ ৫৩৬ জন, নারী ১৭২ জন ও শিশু ৩০ জন রয়েছে। এ ছাড়াও গত ২৪ ঘণ্টায় ৯ জন সুস্থসহ এ পর্যন্ত জেলায় সুস্থ হয়েছেন ৩৮৪ জন। দিনাজপুর সিভিল সার্জন ডা. মো. আবদুল কুদ্দুছ জানান, আক্রান্ত রোগীর মধ্যে দিনাজপুর সদরে ছয়জন, কাহারোলে ৯ জন, নবাবগঞ্জে আটজন, ফুলবাড়ীতে চারজন, ঘোড়াঘাট পাঁচজন, পার্বতীপুরে তিনজন, হাকিমপুরে দুজন, বিরলে একজন, বীরগঞ্জে একজন, চিরিরবন্দরে একজন এবং খানসামায় মৃত একজন। খানসামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বরত চিকিৎসক শামসুদ্দোহা মুকুল জানান, খানসামার গোহালডিহি ইউপির পূর্ব হাসিমপুর গ্রামের যোগেশ চন্দ্র (৭০) কিছু দিন ধরে জ্বর-শ্বাসকষ্টসহ করোনা উপসর্গ নিয়ে অসুস্থ ছিলেন। এর মধ্যে ২ জুলাই তিনি মারা যান। বিষয়টি গোপন করে তড়িঘড়ি করে শ্মশানে তাকে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ সেখানে গিয়ে তার নমুনা সংগ্রহ করে। এরপর তাকে দাহ করা হয়। মৃতের ওই নমুনার রিপোর্ট শনিবার রাতে পজিটিভ আসে। বগুড়া : জেলায় নতুন করে আরও ৬১ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ ছাড়া করোনায় আক্রান্ত হয়ে আরও একজন মৃত্যুবরণ করায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬১ জনে। গাজীপুর : জেলায় নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন আরও ৯২ জন। এ নিয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৩ হাজার ৭১৩ জনে। গাজীপুর সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজীপুরে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৯২ জনের মধ্যে গাজীপুর সদরে ৩৩ জন, কালিয়াকৈরে ১৫ জন, কালীগঞ্জ উপজেলায় তিনজন, কাপাসিয়া উপজেলায় ১১ জন এবং শ্রীপুর উপজেলায় ৩০ জন রয়েছেন। নোয়াখালী : জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ২৫ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ২ হাজার ২৬৪ জন। তার মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৪৯ জনের। ব্রাহ্মণবাড়িয়া : জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ১২ ঘণ্টার মধ্যেই গতকাল সকালে সন্ধ্যা রানী (৭০) নামে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই বৃদ্ধার মৃত্যু হয়। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি গোপন রেখে স্বজনরা চিকিৎসাসেবা দিতে ওই নারীকে হাসপাতালে আনেন। তিনি জেলার নবীনগর উপজেলার শ্যামগ্রামের মৃত শচীন্দ্র সরকারের স্ত্রী। এ ছাড়া নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন আরও ৫৮ জন। এ নিয়ে জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ১৭৮ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছেন ২০ জন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর