শিরোনাম
বুধবার, ৮ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

সচল হচ্ছে না কক্সবাজার, বরিশাল ও রাজশাহী এয়ারপোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রয়োজনীয় চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীর অভাবে সচল হচ্ছে না কক্সবাজার, বরিশাল ও রাজশাহী বিমানবন্দর। ব্যাপক চাহিদা ও প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও এ তিনটি রুট বন্ধ হয়ে আছে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) বারবার এ বিষয়ে চিঠি ও অনুরোধ করলেও তা আমলে নিচ্ছে না স্বাস্থ্য অধিদফতর। এ অবস্থায় কবে এসব বিমানবন্দর চালু করা সম্ভব হবে তা বলতে পারছে না বেবিচক। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদফতরের উদাসীনতা, অবহেলা ও গাফিলতি রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

বেবিচক বলছে, এই তিনটি বিমানবন্দর চালু করা কঠিন কিছু নয়।  সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত দুই শিফটে মাত্র ৬ জন ডাক্তার ও ১২ জন স্বাস্থ্যকর্মী দরকার। কদিন আগে যশোর বিমানবন্দরে রোস্টার ভিত্তিতে তিনজন চিকিৎসক নিয়োগ দিয়েছে বেবিচক। একইভাবে চালু করা সম্ভব কক্সবাজার, বরিশাল ও রাজশাহী বিমানবন্দর।

সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি শেষে ১ জুন থেকে ঢাকা  থেকে চট্টগ্রাম, সিলেট, সৈয়দপুর ও যশোর রুটের ফ্লাইট চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। তবে উল্লিখিত তিন রুট সচল না হওয়ার বিষয়ে বেবিচক বলছে, ফ্লাইট চলাচলে আইকাও যেসব পূর্বশর্ত দিয়েছে, সেগুলো পূরণ করতে না পারায় এখনো কক্সবাজার বিমানবন্দরকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞদের মতে, এটা একটা ভাইটাল ইস্যু। এটাকে উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। ইচ্ছা করলেই স্বাস্থ্য বিভাগ এ সমস্যার সমাধান দিতে পারে। তারা সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ নিতে না পারায় বিমানবন্দরগুলোর এমন বেহাল দশা।

জানতে চাইলে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান বলেন, আইকাও ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী ন্যূনতম স্বাস্থ্য সুবিধা না থাকায় ৩টি বিমানবন্দর চালু করা যাচ্ছে না। আমরা বেবিচক  থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া সত্ত্বেও শুধু স্বাস্থ্য বিভাগের সাড়া না পাওয়ায় থমকে আছে সব। তিনি আরও বলেন, প্রতি শিফটে একজন করে দুই শিফটে ৩ বিমানবন্দরে ৬ জন ডাক্তার, ১২ জন নার্স হলেই চলে। আর স্ক্রিনিং সিস্টেম থাকতে হয়, যেটা হ্যান্ড থার্মোমিটার দিয়েই যাত্রীর তাপমাত্রা মাপা যায়। তবে থার্মাল স্ক্যানার হলে ভালো হয়। না থাকলে হ্যান্ড ইকুইপমেন্ট দিয়েও চলবে। আমরা থার্মাল স্ক্যানারসহ সব ধরনের সুবিধা অন্যত্র দিয়েছি। এ তিনটিতেও দিতে প্রস্তুত। কিন্তু কাজটা করতে হবে স্বাস্থ্য বিভাগকেই। স্থানীয় জেলা সিভিল সার্জনও করতে পারেন। এই বিষয়ে চিঠি পাঠালেও এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।

বিমানবন্দর ৩টি চালু না হওয়ায় বিমান এবং বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলোর ব্যবসাও হুমকির মুখে। চরম পরিস্থিতিতে পড়েছে এয়ারলাইনসগুলো। ইউএস বাংলার মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম বলেন, এই তিনটি বিমানবন্দর চালু হলে আমাদের অনেক উপকার হবে। এমনিতে আমরা লোকসানের মধ্যে আছি। আশা করি, দ্রুত সময়ের মধ্যে ফ্লাইট চালু হবে।

বেবিচক জানিয়েছে, আইকাওয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ফ্লাইট চলাচল শুরু করতে হলে বিমানবন্দরে পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা ও চিকিৎসক থাকতে হবে। যেন একজন রোগী প্লেনে অসুস্থ বোধ করলে বিমানবন্দরে  নেমে প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে পারেন। যেসব বিমানবন্দর চিকিৎসক ও চিকিৎসাব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে সেখানেই ফ্লাইট চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আজ পর্যন্ত কক্সবাজার থেকে চিকিৎসকের বিষয়ে কোনো আপডেট জানানো হয়নি। এমনকি স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে এখনো কোনো নির্দেশনা কক্সবাজারে  পৌঁছয়নি। একই অবস্থা রাজশাহী ও বরিশাল বিমানবন্দরের।

বেবিচকের সূত্র মতে, দেশ-বিদেশে করোনার কারণে যখন বিমানবন্দরে যাত্রীবাহী কমার্শিয়াল ফ্লাইট বন্ধ ছিল তখনো কক্সবাজারে দুটি বিশেষ ফ্লাইট অবতরণ করেছে। সেই সঙ্গে নিয়মিত চলছে কার্গো ফ্লাইট। এ কারণে বিভিন্ন সময় বিচ্ছিন্ন চিকিৎসক রাখা হয় বিমানবন্দরে। তবে বর্তমানে চিকিৎসক সংখ্যা শূন্য।

এ বিষয়ে কক্সবাজার বিমানবন্দরের একজন কর্মকর্তা বলেন, জেলার সিভিল সার্জন পাঁচজন চিকিৎসককে বিমানবন্দরে রোস্টারের মাধ্যমে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তাদের বিমানবন্দরের আইডি কার্ডও সরবরাহ করা হয়েছে। কাগজে-কলমে থাকলেও বাস্তবে কক্সবাজার বিমানবন্দরের চিকিৎসকের সংখ্যা শূন্য।

এ অবস্থায় কক্সবাজারে পর্যটন শিল্প হুমকির মুখে। এ পর্যন্ত মোট ১০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে কক্সবাজার। এই ধাক্কায় দেউলিয়াত্বের শঙ্কায় কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল, রেস্টুরেন্টসহ পর্যটন ব্যবসা।

সর্বশেষ খবর