শনিবার, ১১ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিকের ছড়াছড়ি

১৭ হাজার ২০০ টির মধ্যে প্রায় ১২ হাজারেরই লাইসেন্স মেয়াদোত্তীর্ণ দেখার কেউ নেই

সাঈদুর রহমান রিমন

সারা দেশে চিকিৎসাসেবার নামে রমরমা ব্যবসা কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠছে লক্ষাধিক প্রতিষ্ঠান। এর সিংহভাগই অবৈধ। আবাসিক বাড়িঘর, হাটবাজার, অলিগলিতে রয়েছে কথিত হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ছড়াছড়ি।

সরকারি লাইসেন্স নিয়ে শুরু করা ১৭ হাজার ২০০ হাসপাতাল-ক্লিনিকের মধ্যে প্রায় ১২ হাজার সম্পূর্ণ অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সের মেয়াদ তিন-চার বছর আগেই শেষ হয়েছে, কেউ তা নবায়ন পর্যন্ত করেনি। তবু সেসব হাসপাতাল, ক্লিনিক চলছে প্রকাশ্যে, সবার চোখের সামনে। তাদের চিকিৎসা বাণিজ্যও চলছে পাল্লা দিয়েই। স্বাস্থ্য অধিদফতরের কোনো নিবন্ধন না নিয়ে কোথাও কোথাও শুধু ট্রেড লাইসেন্স দিয়েও অসাধু ব্যবসায়ীরা চিকিৎসা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ লাইসেন্সের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরে আবেদন পাঠিয়েই যত্রতত্র ব্যাঙের ছাতার মতো হাসপাতাল, ক্লিনিক, নার্সিং হোম খুলে বসেছেন। কেউ বা পরিচালনা করছেন রোগ নির্ণয়কারী ডায়াগনস্টিক সেন্টার। অবৈধ ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাসপাতাল শাখা বরাবরই উদাসীন। ফলে রিজেন্ট হাসপাতালের মতো হাজারো প্রতিষ্ঠান সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েই বছরের পর বছর ধরে সচল থাকে, জড়িত হয় নানা অপকর্মে। সাইনবোর্ড-সর্বস্ব এসব প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসাসেবার নামে হরদম চলে গলা কাটা বাণিজ্য।

সর্বত্রই সরকারি হাসপাতালের কাছাকাছি গড়ে ওঠা দালালনির্ভর এসব ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে নিরীহ মানুষ। অনুসন্ধানে জানা যায়, একশ্রেণির দালাল ও সরকারি হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে সিন্ডিকেট করেই এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন। বিভিন্ন সময় র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত এসব অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ভুয়া ডাক্তারের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়, আটক করে জেলে পাঠায় এবং জরিমানার দন্ডও জারি করে। অভিযুক্ত ক্লিনিকগুলো সিলগালাও করে দেওয়া হয়। কিন্তু নানা কৌশলে প্রতিষ্ঠানগুলো সচলই থাকে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক বিভাগ সূত্র জানান, শুধু রাজধানীসহ আশপাশের এলাকাতেই অবৈধভাবে ২০ সহস্রাধিক চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে মাত্র সাড়ে ৩ হাজার প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরে প্রাথমিক আবেদনপত্র পাঠিয়েই খালাস, কোনো যোগাযোগ পর্যন্ত করেনি। তারা পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে একটি ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করেই হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবসা ফেঁদে বসেছে। প্রতি অর্থবছর বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের নিবন্ধন নবায়ন করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর দাবি, হাসপাতাল শাখা মাসোহারা লেনদেনের ভিত্তিতেই নিবন্ধন না করা শত শত হাসপাতাল ও ক্লিনিককে বছরের পর বছর অবৈধ বাণিজ্য চালাতে সহায়তা করছে। কিন্তু মোবাইল কোর্টের অভিযান কিংবা রোগী মৃত্যুর ঘটনায় বড় ধরনের হইচই ঘটলেই ‘হাসপাতালের নবায়ন নেই’ বলে নিজেদের দায় এড়িয়ে যায়। তখন সাময়িক সময়ের জন্য হাসপাতাল, ক্লিনিক বন্ধের নোটিস পাঠানোর মধ্যেই তাদের দায়িত্ব শেষ করে। সেই বন্ধের নোটিস কেউ মানল কিনা তা তদারক পর্যন্ত করে না। সরকারি নির্দেশনা অমান্যকারীদের নিয়ন্ত্রণে অধিদফতরের কোনো মনিটরিং সেল পর্যন্ত নেই বলেও অভিযোগ উঠেছে। মুগদা জেনারেল হাসপাতালের রোগীদের ভাগিয়ে নিয়ে ক্লিনিক বাণিজ্য ফেঁদে বসেছেন মুগদার এক রাজনৈতিক নেতা। শুধু মুগদা নয়, সারা দেশের সরকারি হাসপাতাল থেকে সিন্ডিকেট করে রোগী ভাগিয়ে চলছে এসব ভুয়া ক্লিনিক।

সর্বশেষ খবর