শনিবার, ১১ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

ওয়ারী লকডাউনের পর ১০৫ টেস্টে ৪৮ পজিটিভ

মাহবুব মমতাজী

পুরান ঢাকার ওয়ারী লকডাউন এলাকায় গত এক সপ্তাহে নমুনা দিয়েছিলেন ১০৫ জন। এর মধ্যে ৪৮ জনই করোনা সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন; যা নমুনার প্রায় ৫০ শতাংশ। বৃহস্পতিবার দেওয়া ১০ জনের নমুনা পরীক্ষার ফল গতকাল জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচজনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এদিন করোনা পরীক্ষার জন্য ওয়ারী সরকারি বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অস্থায়ী বুথে আরও ১৫ জনের নমুনা নেওয়া হয়েছে। এদের ফল আজ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)-সংশ্লিষ্টরা। লকডাউনে প্রতিদিনই সংক্রমণের খবর পাওয়া যাচ্ছে, কড়াকড়ির অভাবে কার্যকর কোনো ফল মিলছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানান, ৪ জুলাই করোনা পরীক্ষায় নমুনা দিয়েছিলেন ১৬ জন, তার মধ্যে সাতজন করোনা পজিটিভ। ৫ জুলাই ১৯ জনের মধ্যে ১০ জন, ৬ জুলাই ১৬ জনের মধ্যে সাতজন, ৭ জুলাই ১৮ জনের মধ্যে সাতজন এবং ৮ জুলাই ২৬ জনে ১২ জন করোনা পজিটিভ। এখন নমুনা সংগ্রহের প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষের সংক্রমণ ধরা পড়ছে বলে জানিয়েছেন ডিএসসিসির অঞ্চল-৫-এর সমাজকল্যাণ দফতরের প্রশিক্ষক নূরুল ইসলাম। তিনি লকডাউন এলাকার কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বে রয়েছেন। তবে লকডাউনের আগে এ এলাকায় ৪৭ জন সংক্রমিত হয়েছিলেন। স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত ওয়ারীতে দিন দিন করোনা উপসর্গ নিয়ে নমুনা দিতে আসা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যাও। এমন পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ডিএসসিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, এলাকাটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। করোনা আক্রান্তের হার বৃদ্ধি এলাকায় লকডাউনের যৌক্তিকতাকে তুলে ধরছে। তাই লকডাউন আরও কঠোরভাবে পালন করা হবে।

গত ৪ জুলাই ভোর ৬টা থেকে ওয়ারীর টিপু সুলতান রোড, যোগীনগর রোড ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক (জয়কালী মন্দির থেকে বলধা গার্ডেন), লারমিনি স্ট্রিট, হেয়ার স্ট্রিট, ওয়্যার স্ট্রিট, র‌্যাংকিন স্ট্রিট ও নবাব স্ট্রিট এলাকায় লকডাউন শুরু হয়। এ এলাকায় লক্ষাধিক মানুষের বাস। করোনা প্রতিরোধে ২৫ জুলাই পর্যন্ত এখানে লকডাউন চলবে। ওয়ারী ডিএসসিসির ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন।

এসব এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন সড়কের মোড়ে বাঁশ দিয়ে বানানো হয়েছে ব্যারিকেড। মোড়ে মোড়ে টানানো হয়েছে ‘লকডাউন’ ব্যানার। গতকাল দেখা যায়, বিভিন্ন অজুহাতে বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করেন বাসিন্দারা। কোনো কিছুতেই তাদের থামানো যাচ্ছে না। কেউ বলছেন কর্মস্থল, কেউ বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়ার কথা। বাঁশের ব্যারিকেড ডিঙিয়ে চলে মালামাল পরিবহনও। এর সঙ্গে বাইরে যেতে আরও শত বাহানার মুখোমুখি হতে হচ্ছে সেখানকার দায়িত্বরত প্রায় ২০০ স্বেচ্ছাসেবীকে। আবার প্রবেশ ও বের হওয়ার পথেও মাঝে মাঝে ভিড় দেখা গেছে। ভিতরের অলিগলিতে আড্ডা দেন কেউ কেউ। কারও কারও মুখে ঠিকমতো মাস্কও নেই। স্বেচ্ছাসেবীরা চেষ্টা করেও হিমশিম খাচ্ছেন। অন্যান্য দিনের মতো ওয়ারীর সুমি’স হট কেক বেকারির সামনের গেটে কিছু সময় পরপর ভিড় করেন সাধারণরা। খাতায় নিজের নাম লিখে রেখে বের হওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বেচ্ছাসেবীরা বলছেন, তারা ডাক্তার, নার্স, ফার্মাসিস্ট ও রোগী ছাড়া কাউকে বের হতে দিচ্ছেন না। স্বেচ্ছাসেবীদের পক্ষ থেকে সচেতনতার পাশাপাশি বাসায় অবস্থানের জন্য বারবার মাইকে অনুরোধ করতে দেখা গেছে।

 

সর্বশেষ খবর