শিরোনাম
রবিবার, ১২ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

মাদক অভিযান নিয়ে গড়িমসি করলেই ব্যবস্থা

কর্মকর্তাদের জন্য বিশেষ বার্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক

আবারও জোরদার হচ্ছে মাদকবিরোধী অভিযান। কর্মকর্তাদের তৎপরতা বাড়াতে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে দেওয়া হচ্ছে বিশেষ নির্দেশনা। মাদকবিরোধী অভিযানে গড়িমসি করলেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারী দেওয়া হয়েছে পুলিশ, র‌্যাব ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তরফ থেকে। শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত সারা দেশে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান চালানো হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে মাদকের সঙ্গে জড়িত ৩০০ জন। এর মধ্যে শুধু রাজধানী থেকেই গ্রেফতার হয়েছে ৫৯ জন। উদ্ধার হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার পিস ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক। ঈদ সামনে রেখে কোরবানির পশুর গাড়ি থেকে শুরু করে পণ্যবাহী যানবাহনে করে মাদক আনা হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে মাদক মজুদ করা হচ্ছে বস্তি, অভিজাত এলাকা ও বিহারি ক্যাম্পগুলোতে।

জানা গেছে, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। মাদকের সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছেন। মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান তীব্র করার নিদের্শনা জারি করেছেন। অভিযানের ক্ষেত্রে গড়িমসি করার সঙ্গে জড়িতদের হুঁশিয়ার করেছেন তিনি। র‌্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান লে. কর্নেল সারওয়ার-বিন-কাশেম বলেন, মাদকের আগ্রাসন কমিয়ে আনতে সব ধরনের চেষ্টাই করা হবে। বর্তমানে মোবাইলের মাধ্যমে মাদক বিক্রি হচ্ছে, আর মোবাইল নম্বরগুলোর নম্বর বা সিমকার্ড অধিকাংশই অন্যের নামে কেনা। দেখা যায়, যার মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে মাদকের ব্যবসা হচ্ছে, তিনি নিজেও জানেন না। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি আর ঈদের সুযোগ নিয়ে মাদক কারবারিরা চালকদের ম্যানেজ করে কোরবানির পশুবাহী যানবাহন ও পণ্যবাহী যানবাহনসহ নানাভাবে মাদকের চালান আনার পরিকল্পনা করছে বলে তাদের কাছে তথ্য আছে। আমরা বিষয়গুলো সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছি। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, কারাবন্দী শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনের সহযোগীরা সম্প্রতি মাদক ব্যবসায় তৎপর হয়ে উঠেছে। এরই মধ্যে বিষয়টি আঁচ করতে পেরেছেন বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার ইমনের সাতজন সহযোগী কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার সাহপাড়া এলাকার বাবু খন্দকারের বাড়িতে অবস্থান করে মাদক চালান নিতে ট্রলারে করে মেঘনা নদীতে যান। সেখানে রহস্যজনকভাবে ট্রলার ডুবে গেলে সজীব ও তানভীর হোসেন অনিক নিখোঁজ হন। মাঝিসহ ছয়জন সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হন।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরিচালক  (গোয়েন্দা ও অপারেশনস) পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) এস এম মাসুম রাব্বানী জানান, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যেও দেশে মাদক ঢুকছে। আর ঈদকে কাজে লাগিয়ে মাদক কারবারিরা কোরবানির পশুবাহী যানবাহন ও পণ্যবাহী যানবাহনে নতুন নতুন কৌশলে মাদক আনার পরিকল্পনা করছে বলে তাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য আছে। এ জন্য দেশের যেসব জায়গা থেকে অধিকহারে কোরবানির পশু আসে, সেখানে সোর্স নিয়োগের পাশাপাশি তাদের নিজস্ব গোয়েন্দাদের কাজে লাগানো হচ্ছে।

একাধিক সূত্র বলছে, বস্তির মাদক নিয়ন্ত্রণ করছে বস্তি নিয়ন্ত্রকারীদের একটি বড় অংশ। আর বিহারি ক্যাম্পে মাদক নিয়ন্ত্রণ করছে বহুল আলোচিত ইশতিয়াক। তিনি বোতল কুড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। বর্তমানে মাদক ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। বর্তমানে ক্যাম্পে বসবাস করেন না। তার নেতৃত্বে ঢাকার সব বিহারি ক্যাম্পগুলোতে চলছে মাদকের কারবার। সবচেয়ে বেশি মাদক বিশেষ করে ইয়াবার রমরমা বাণিজ্য এখন মোহাম্মদপুরের বিহারি ক্যাম্পের রাজু ও গাঁজা শাকিলের নেতৃত্বে পারভেজ ও মৃত বিহারি জিয়ার ছেলে পাগলা মনু মোহাম্মদপুরের বিহারি ক্যাম্পে ইয়াবা ব্যবসার সিংহভাগ নিয়ন্ত্রণ করছে। এদের সঙ্গে রয়েছে নারী সিন্ডিকেট। মোবাইল ফোনের হোয়াটস অ্যাপ, ভাইবার, ম্যাসেঞ্জার ও ইমুতে কথা বলার পর ইয়াবা নির্দিষ্ট জায়গায় পেঁৗঁছে দেওয়া হচ্ছে। এদের নানাভাবে সহায়তা করার অভিযোগ উঠেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক পদের একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম জানান, মাদকের সঙ্গে সে পুলিশ হোক আর যেই হোক, ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা গোয়েন্দা লাগিয়ে জড়িতদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের কাজ করছি। তথ্য-প্রমাণ পাওয়া মাত্রই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ডিএমপির তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশের মতো ঢাকায় চলছে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত চালানো অভিযানে মাদকসেবন ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত ৫৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের কাছে পাওয়া গেছে প্রায় দেড় হাজার পিস ইয়াবা, হেরোইন, গাঁজা ও ফেনসিডিলসহ নানা ধরনের মাদক। প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাদকের কারবার চলায় মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে বেগ পেতে হচ্ছে। এদিকে, র‌্যাব-২ এর মিডিয়া উইংয়ের সহকারী পরিচালক সিনিয়র এএসপি জাহিদ আহসান জানান, মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানে শনিবার ঢাকার আদাবর থেকে ১১ হাজার পিস ইয়াবাসহ হৃদয় হোসেন ও আনাস নামের দুই মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর