রবিবার, ১২ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

মাস্ক পরতে অনীহা!

জিন্নাতুন নূর

মাস্ক পরতে অনীহা!

সাধারণ মানুষের মধ্যে মাস্ক নিয়ে এখনো অসচেতনতা রয়েছে -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বাংলাদেশ করোনা সংক্রমণের বিপজ্জনক সময় পার করলেও ফেসিয়াল মাস্ক ব্যবহারের ক্ষেত্রে এখনো মানুষের মধ্যে রয়েছে অনীহা। দিন যতই যাচ্ছে ততই যেন মানুষ মাস্ক ব্যবহারের প্রতি উদাসীন হয়ে পড়ছে। দীর্ঘ লকডাউন শেষে জীবনযাত্রা অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসায় সড়কে মানুষের উপস্থিতি বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের অনেকের মুখে থাকছে না স্বাস্থ্য সুরক্ষার অতিপ্রয়োজনীয় সামগ্রীটি।

বিশেষ করে তরুণদের পাড়া-মহল্লায় জট বেঁধে আড্ডা দেওয়ার সময়, বিভিন্ন পাবলিক স্থানে, বাজারে এবং বিনোদন কেন্দ্রে একসঙ্গে মাস্ক ছাড়া চলাফেরা করতে দেখা যাচ্ছে। অথচ মাস্ক ছাড়া ঘর থেকে বের হলেই জরিমানার বিধান করা হয়েছে। মাস্ক পরে বের হওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমগুলোতেও বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্র বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, করোনা সংক্রমণ শুরুর প্রথম থেকে ট্রাফিক বিভাগ স্বাস্থ্য বিধি অনুসরণ করা ও মাস্ক ব্যবহারের ওপর জোর দিয়ে আসছে। সড়কের বড় বড় বিলবোর্ডে মাস্ক ব্যবহার সংক্রান্ত সচেতনমূলক বিজ্ঞাপন দিয়েছে ট্রাফিক বিভাগ। যাত্রীরা মাস্ক ব্যবহার করছে কিনা তা তদারকির জন্য গঠন করা হয়েছে মনিটরিং কমিটি। সরকার ঘরের বাইরে মাস্ক ব্যবহার না করলে ২০১৮ সালের সংক্রমণ আইনের ২৪(১,২), ২৫(১-এর ক,খ) এবং ২৫(২) ধারায় ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান করেছে। এই ধারা অনুযায়ী মাস্ক ব্যবহার না করলে শাস্তি সর্বোচ্চ ছয় মাসের জেল এবং এক লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড হতে পারে। জেলা প্রশাসকদের সতর্কতার সঙ্গে আইনের যথাযথ প্রয়োগের জন্য বলা হয়েছে। এ ছাড়া মাস্ক ব্যবহার ও স্বাস্থ্যবিধি মানাতে সারা দেশে এখন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম পুলিশ কমিশনার ট্রাফিক (উত্তর) মো. আবদুর রাজ্জাক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কঠোর আইন করে বা জরিমানা দিয়ে মানুষজনকে মাস্ক ব্যবহারে বাধ্য করা সম্ভব না বরং এ জন্য সচেতনতার বিকল্প নেই। কিন্তু মানুষের মধ্যে যদি মাস্ক পরার প্রবণতা না থাকে তাহলে আমরা কত আর জোর করে তাদের মাস্ক পরাব। ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখা যায়, অনেকে মাস্ক পরলেও তা সঠিকভাবে পরছেন না। নাকের নিচে থুতনিতে, গলায় বা কানে ঝুলিয়ে রাখছেন। কেউ আবার পকেটে বা ব্যাগে রেখে দিচ্ছেন। বিশেষ করে নিম্নআয়ের মানুষ, রিকশাচালক, বাসচালক, ট্রাকচালক, গার্মেন্টকর্মী, হকার, হোটেল-রেস্টুরেন্টের কর্মচারী, বাসা-বাড়ির কাজের বুয়া, কাঁচাবাজারের বিক্রেতা ও ভিক্ষুকদের মাস্ক পরতে দেখা যাচ্ছে না। পল্লবী আবাসিক এলাকার এক গৃহকর্মী সুলতানা বেগম জানান, যে বাসায় কাজ করেন সেখানে তাকে মাস্ক দিলেও তিনি তা ব্যবহার করেন না। কারণ জানতে চাইলে সুলতানা বলেন, ‘মাস্ক মুখে দিলে শরম লাগে। আশপাশে অন্য বুয়ারা আমারে দেইখা হাসে। মিরপুর মুসলিমবাজার এলাকার কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাজারের অধিকাংশ বিক্রেতার মুখের মাস্ক হয় থুতনিতে নয়তো কানে ঝুলছে। কেউ কেউ আবার মাস্কই পরেননি। মাস্ক না পরার কারণ জানতে চাইলে রাজু মিয়া নামের এক মাছ বিক্রেতা বলেন, ‘সারাক্ষণ মুখে মাস্ক পইরা থাকলে গরম লাগে, মাথা ঝিমঝিম করে, হাঁসফাঁস লাগে। আর মাস্ক থাকলে ক্রেতারা আমার কথা কম শুনে।’ মিরপুর ১২ নম্বরের কয়েকজন পোশাক শ্রমিকের মাস্ক না পরার কারণ জানতে চাইলে পপি আক্তার নামের এক শ্রমিক বলেন, শুরুতে কয়দিন পরলেও এখন আর মাস্ক পরতে ইচ্ছা করে না। আমার সঙ্গের অনেক শ্রমিকই এখন আর মাস্ক পরে না। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ যতদিন বাঁচাইবো ততদিনই বাঁচমু।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর