শিরোনাম
বুধবার, ১৫ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

সাহেদকে খুঁজছে পুলিশ, নথি তলব দুদকের

নিজস্ব প্রতিবেদক

চিকিৎসার নামে প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে পলাতক রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে সংশ্লিষ্ট নথিপত্র চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরসহ নয়টি প্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। এদিকে প্রতারক সাহেদকে ধরার জন্য র‌্যাব ও পুলিশ ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে বেশ কয়েকটি স্থানে অভিযান চালিয়েছে বলে জানা গেছে। গতকাল অনুসন্ধান কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক মো. আবু বকর সিদ্দিকের স্বাক্ষরে এসব চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে কমিশনের মুখপাত্র প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য জানিয়েছেন। প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে সাহেদ কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন উল্লেখ করে এসব চিঠি পাঠানো হয়েছে। সাহেদের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানের প্রয়োজনে দুদক সংশ্লিষ্ট নথিপত্র চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনসহ নয়টি প্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠিয়েছে। দুদকের চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউ প্রধান, যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদফতর, উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের উত্তরা শাখার ব্যবস্থাপক, দি ঢাকা মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ ব্যাংকের বিমানবন্দর শাখার ব্যবস্থাপক, জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান এবং এনবিআরের কর অঞ্চল-৯-এর উপ-কর কমিশনারের কাছেও সাহেদের বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো চিঠিতে অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখার নিবন্ধন ইস্যু ও নবায়নের সত্যায়িত কপি, কভিড-১৯ পরীক্ষা নিয়ে হাসপাতাল দুটির সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের চুক্তিসংক্রান্ত নথিপত্রসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য নথিপত্রের সত্যায়িত কপি পাঠানোর জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। এর আগে সোমবার মো. সাহেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে তিন সদস্যের একটি টিম গঠন করে দুদক। সংস্থাটির উপপরিচালক মো. আবু বকর সিদ্দিকের নেতৃত্বে টিমের অন্য দুই সদস্য হলেন কমিশনের সহকারী পরিচালক মো. নেয়ামুল হাসান গাজী ও শেখ মো. গোলাম মাওলা। দুদকসূত্র জানিয়েছেন, রিজেন্ট হাসপাতালের স্বত্বাধিকারী ও রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদের বিরুদ্ধে মাইক্রোক্রেডিট ও এমএলএম ব্যবসার নামে জনসাধারণের সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের টাকা সংগ্রহ করে আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে বহুমাত্রিক জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে পরস্পর যোগসাজশে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, আয়কর ফাঁকি, ভুয়া নাম ও পরিচয়ে ব্যাংক ঋণ নিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদক অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দুদক সূত্রমতে, অনুসন্ধান শুরুর আগে কমিশনের সংশ্লিষ্ট অনুবিভাগগুলো বিভিন্ন ব্যক্তি, গণমাধ্যম, ভার্চুয়াল মাধ্যমসহ বিভিন্ন উৎস থেকে সাহেদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো সংগ্রহ করেছে। দুদকের দৈনিক ও সাম্প্রতিক অভিযোগ সেল এসব তথ্য-উপাত্তসংবলিত অভিযোগ কমিশনে উপস্থাপন করলে কমিশন অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। কমিশনের বিশেষ তদন্ত অনুবিভাগের মাধ্যমে এ অভিযোগের অনুসন্ধান করা হচ্ছে। রিজেন্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও প্রতারণার অভিযোগে ৬ জুলাই র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র‌্যাবের একটি দল উত্তরায় অবস্থিত হাসপাতালের একটি শাখায় অভিযান চালায়। সেখানে করোনাভাইরাসের পরীক্ষা ছাড়াই ভুয়া সনদ দেওয়াসহ নানা ধরনের অনিয়মের প্রমাণ পায় র‌্যাব। পরে অনিয়মের অভিযোগে রিজেন্টের দুটি হাসপাতাল সিলগালা করে র‌্যাব। এ ঘটনায় র‌্যাবের মামলায় হাসপাতালের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী গ্রেফতার হলেও সাহেদ এখনো পলাতক। তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

রিজেন্টের এমডি গ্রেফতার : রিজেন্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাসুদ পারভেজকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। গতকাল বিকালে গাজীপুরের কাপাসিয়া থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ। 

জানা যায়, রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদের প্রতারণা কাজে অন্যতম সহযোগী এবং র‌্যাবের করা মামলার ২ নম্বর আসামি মাসুদ পারভেজ। এর আগে গত ৮ জুলাই রাতে রাজধানীর নাখালপাড়া থেকে সাহেদের প্রধান সহযোগী তারেক শিবলীকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। সরকারের সঙ্গে চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে টাকার বিনিময়ে করোনাভাইরাস শনাক্তের নমুনা সংগ্রহ করা এবং ভুয়া সনদ দেওয়ার অভিযোগে গত ৬ জুলাই র‌্যাব রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালায়। পরদিন উত্তরা পশ্চিম থানায় র‌্যাব বাদী হয়ে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিমকে এক নম্বর আসামি করে মামলা করে। সাহেদ এখনো পলাতক বলে জানিয়েছে র‌্যাব। এদিকে রিমান্ডে থাকা আট আসামির সাতজনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর কারাগারে পাঠিনোর আদেশ দিয়েছে আদালত।

 

সর্বশেষ খবর