শুক্রবার, ১৭ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

কে দোষী অধিদফতর না মন্ত্রণালয়

সাবেক সচিবের মৌখিক নির্দেশে চুক্তি : ডিজি ♦ আমি মৌখিক নির্দেশনা দিইনি : সাবেক স্বাস্থ্য সচিব ♦ স্বাস্থ্য অধিদফতরের বক্তব্য সন্তোষজনক নয় আবারও নোটিস : স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ♦ আমি কিছুই জানি না : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রাণঘাতী করোনাকালে রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে এখন দোষারোপ চলছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরে। এ নিয়ে যুক্তি-পাল্টা যুক্তি দিচ্ছে মন্ত্রণালয় ও অধিদফতর। স্বাস্থ্যমন্ত্রী রিজেন্টের সঙ্গে করা চুক্তি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেও তিনি কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিজি বলছেন, সাবেক স্বাস্থ্য সচিবের মৌখিক নির্দেশনাতেই সব হয়েছে। তবে সাবেক সচিব তা অস্বীকার করেছেন। এ ধরনের নির্দেশনা দেননি বলে তিনি জানিয়েছেন। বর্তমান স্বাস্থ্য সচিব বলছেন, মৌখিক নির্দেশনার ভিত্তি নেই। এ নিয়ে অধিদফতরকে শোকজ করা হয়। জবাবও দেন স্বাস্থ্য অধিদফতর ডিজি। তা সন্তোষজনক নয় জানিয়ে ক্ষুব্ধ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, করা হবে আবারও শোকজ।

জানা যায়, করোনা মহামারীর মধ্যেই স্বাস্থ্য বিভাগের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। করোনার নমুনা পরীক্ষায় জেকেজি ও রিজেন্ট হাসপাতালের প্রতারণার ঘটনা নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের শীর্ষ কর্মকর্তারা এখন মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন। নমুনা পরীক্ষা ও চিকিৎসা কার্যক্রমে ওই দুটি প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করা নিয়ে দুই পক্ষই পরস্পরকে দায়ী করেছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের আগ্রহেই এ কাজে বিতর্কিত ওই দুটি প্রতিষ্ঠানের যুক্ত হওয়া নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ ও প্রচার হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদফতর দাবি করে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের                 নির্দেশে রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করা হয়। অধিদফতরের এই বক্তব্যে ক্ষুব্ধ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পরদিন রবিবার ডিজিকে শোকজ করা হয়েছে। বুধবার রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ নিজ বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেন। সচিবালয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আবদুল মান্নানের কাছে লিখিত ব্যাখ্যা জমা দেন তিনি। সেখানে আবুল কালাম আজাদ বলেন, সেই চুক্তি করা হয়েছিল সাবেক স্বাস্থ্য সচিব আসাদুল ইসলামের মৌখিক নির্দেশে, যিনি বর্তমানে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু সাবেক সচিব আসাদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, তিনি কোনো মৌখিক নির্দেশ দেননি। এ ছাড়া বর্তমান সচিব আবদুল মান্নান গণমাধ্যমকে জানান, মৌখিক নির্দেশ গ্রহণযোগ্য নয়। জানা যায়, স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিজির শোকজের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তাকে শিগগিরই আবারও শোকজ নোটিস দেওয়া হবে। এর আগে রিজেন্ট হাসপাতালের প্রতারণার বিভিন্ন বিষয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই অধিদফতর রিজেন্টের সঙ্গে চুক্তি করে, যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১২ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের কাছে ব্যাখ্যা দাবি করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব শারমিন আকতার জাহান স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ’ বলতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক কী বোঝাতে চেয়েছেন, সে বিষয়ে তার কাছ থেকে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের পরস্পরবিরোধী এই অবস্থানের মধ্য দিয়ে করোনা চিকিৎসায় চরম সমন্বয়হীনতার চিত্রই ফুটে উঠেছে। এতে করোনা চিকিৎসায়ও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তারা বলেন, এ ছাড়া স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক মন্ত্রণালয়কে দায়ী করে এ ধরনের বার্তা পাঠাতে পারেন না। কারণ তিনি নিজেও মন্ত্রণালয়ের অধীনেই কাজ করেন। মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের মধ্যে সমন্বয়হীনতা থাকলে সেটি তারা নিজেদের ফোরামে আলোচনা করে নিতে পারতেন। গণমাধ্যমে ওই বার্তা পাঠানোর অর্থ হলো, মন্ত্রণালয় ও অধিদফতর কর্তৃপক্ষের কার্যক্রমে চরম বিশৃঙ্খলা চলছে। এদিকে রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের চুক্তির বিষয়ে কিছু জানতেন না বলে দাবি করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। সম্প্রতি সচিবালয়ে গণমাধ্যমের কাছে এ দাবি জানান তিনি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে অন্য একটি সভা শেষে সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন তিনি। এক প্রশ্নে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেওয়ার এখতিয়ার শুধু অধিদফতরের রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের এ ক্ষেত্রে কোনো দায়ভার নেই। ২১ মার্চ স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের কক্ষে রিজেন্ট হাসপাতালের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। এর মাধ্যমে রিজেন্ট হাসপাতালের দুটি শাখাকে (উত্তরা ও মিরপুর) কভিড চিকিৎসার দায়িত্ব প্রদান করা হয়। এখন জানা যাচ্ছে, হাসপাতালটির এ বিষয়ে তেমন সক্ষমতা ছিল না। সেখানে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা না করেই দেওয়া হতো সনদ।

সর্বশেষ খবর