শুক্রবার, ১৭ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

দুদক জিজ্ঞাসাবাদ করবে স্বাস্থ্যের ডিজি ও সাহেদকে

আহমেদ আল আমীন

চিকিৎসার নামে ভয়াবহ প্রতারণা ও জালিয়াতির ঘটনায় হালের আলোচিত দুই চরিত্র স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) আবুল কালাম আজাদ ও রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা খাতের দুর্নীতির অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে দুদকের একটি টিম শিগগিরই তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে যাচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদের এই সম্ভাব্য তালিকায় স্বাস্থ্যের ডিজি ছাড়াও ছয়-সাতজন কর্মকর্তার নাম উঠে এসেছে। এ  লক্ষ্যে সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. আবু বকর সিদ্দিকের নেতৃত্বাধীন অনুসন্ধান টিম থেকে দুদকে তলব করে আগামী সপ্তাহেই তাদের কাছে পৃথক চিঠি পাঠানো হতে পারে বলে কমিশনের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।  

দুদক সূত্র জানিয়েছে, কমিশনের অনুসন্ধানে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গে রিজেন্ট হাসপাতালের যোগসাজশের একাধিক ক্লু পাওয়া যাচ্ছে। এর ভিত্তিতে প্রাথমিকভাবে অনুসন্ধান টিম মনে করছে, অধিদফতরের বিভিন্ন পর্যায়ের সহযোগিতা ছাড়া রিজেন্টের এক সাহেদের পক্ষে এককভাবে দুর্নীতির এতটা চূড়ায় যাওয়া সম্ভব নয়। তাই এ বিষয়ে আরও তথ্য সংগ্রহ ও প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ডিজি ও অতিরিক্ত মহাপরিচালকসহ স্বাস্থ্য অধিদফতরের কয়েকজনকে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তবে সাহেদ গ্রেফতার হওয়ায় তাকে জেলগেটে কিংবা দুদকে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদ করবে অনুসন্ধান টিম। 

দুদকের মুখপাত্র প্রণব কুমার ভট্টাচার্য বলেন, অভিযোগের অনুসন্ধান ও তদন্তের স্বার্থে যে কোনো সময় সংশ্লিষ্ট যে কাউকে ডাকা হতে পারে, কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। এটি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার দায়িত্ব ও এখতিয়ার।

জানা গেছে, অভিযোগের অনুসন্ধানে এরই মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরে ঝটিকা অভিযান চালিয়েছে দুদকের অনুসন্ধান টিম। বুধবার বিকালে এই অভিযান থেকে সাহেদের মালিকানাধীন রিজেন্ট হাসাপাতালের লাইসেন্সসহ একাধিক নথি জব্দ করা হয়েছে। অভিযানে নেতৃত্ব দেন অনুসন্ধান টিমের প্রধান মো. আবু বকর সিদ্দিক। তবে অভিযানের বিষয়ে তিনি কোনো তথ্য জানাতে রাজি হননি।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, অনুসন্ধানের সময় স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে রিজেন্ট হাসপাতালের কিছু নথি সংগ্রহ জব্দ করেছে দুদক। এ সময় রিজেন্ট হাসপাতালের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের একজন অতিরিক্ত মহাপরিচালকের সঙ্গে আলোচনা করে দুদক টিম। সূত্র আরও জানায়, প্রাথমিকভাবে নথিপত্র যাচাই-বাছাইয়ে কাগজপত্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। এছাড়া, লাইসেন্সের কপি থাকলেও নবায়নের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এছাড়া হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট অনেক বিভাগের অনুমোদনেরও কোনো কাগজ পাওয়া যায়নি।

এদিকে, রিজেন্ট গ্রুপের ৮ প্রতিষ্ঠান ও সাহেদের নিজের নামের ব্যাংক হিসাবের নথি তলব করে বুধবারই পদ্মা ও ডাচ-বাংলা ব্যাংকসহ চারটি ব্যাংকে চিঠি দিয়েছে দুদকের এই অনুসন্ধান টিম। চিঠিগুলো ওইসব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) কাছে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট তথ্য চাওয়া হয় বলে চিঠিগুলোতে উল্লেখ করা হয়। এসব ব্যাংকে সাহেদ ও তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর নামে হিসাব রয়েছে বলে দুদক সূত্র জানিয়েছে।

১৩ জুলাই সাহেদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের লক্ষ্যে সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. আবু বকর সিদ্দিকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি টিম গঠন করে দুদক। অনুসন্ধান টিমের অপর দুই সদস্য হলেন সংস্থাটির সহকারী পরিচালক মো. নেয়ামুল হাসান গাজী ও শেখ মো. গোলাম মাওলা।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদের বিরুদ্ধে মাইক্রোক্রেডিট ও এমএলএম ব্যবসার নামে জনসাধারণের সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের টাকা সংগ্রহ করে আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে বহুমাত্রিক জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে পরস্পর যোগসাজশে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, আয়কর ফাঁকি, ভুয়া নাম ও পরিচয়ে ব্যাংকঋণ নিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদক অনুসন্ধানে নেমেছে। তবে অনুসন্ধান শুরুর আগে কমিশনের সংশ্লিষ্ট অনুবিভাগগুলো বিভিন্ন ব্যক্তি, গণমাধ্যম, ভার্চুয়াল মাধ্যমসহ বিভিন্ন উৎস থেকে মো. সাহেদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো সংগ্রহ করেছে। দুদকের দৈনিক ও সাম্প্রতিক অভিযোগ সেল এসব তথ্য-উপাত্ত সংবলিত অভিযোগ কমিশনে উপস্থাপন করলে কমিশন এ বিষয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। কমিশনের বিশেষ তদন্ত অনুবিভাগের মাধ্যমে এই অভিযোগের অনুসন্ধান করা হচ্ছে।

 

চিকিৎসার নামে প্রতারণা ও জালিয়তির অভিযোগে ৬ জুলাই এক অভিযানে ঢাকায় রিজেন্টের দুটি হাসপাতাল বন্ধ করে র‌্যাব। এ ঘটনায় করা মামলায় বুধবার সকালে সাতক্ষীরার দেবহাটা সীমান্ত থেকে সাহেদকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

এর আগে করোনার চিকিৎসার দায়িত্ব দিয়ে ২১ মার্চ রাজধানীর মহাখালীতে রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। স্বাস্থ্য অধিদফতরে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং স্বাস্থ্যের ডিজি আবুল কালাম আজাদসহ একাধিক কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। রিজেন্ট হাসপাতালে র‌্যাবের অভিযানের পর এর প্রতারণা ও জালিয়তির বিষয়ে এখন অনেক তথ্য ও অভিযোগ বেরিয়ে আসছে। এখন জানা যাচ্ছে, করোনা চিকিৎসার মতো স্পর্শকাতর দায়িত্ব দেওয়া হলেও রিজেন্ট হাসপাতালের এ বিষয়ে তেমন সক্ষমতাই নেই। হাসপাতাল পরিচালনার অনুমতি বা লাইসেন্স নেই। নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা না করেই সেখানে সনদ দেওয়া হতো।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর