শুক্রবার, ১৭ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

বাণিজ্যে চ্যালেঞ্জ আছে, সম্ভাবনাও অনেক

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

বাণিজ্যে চ্যালেঞ্জ আছে, সম্ভাবনাও অনেক

টিপু মুনশি

করোনা সংকটে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লেও এর মধ্যে অনেক সম্ভাবনা দেখছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র, কানাডার মতো দেশগুলো চীন থেকে যে পরিমাণ গার্মেন্ট রপ্তানি কমিয়েছে, এর কিছুটা ভিয়েতনামে চলে গেছে। আমরা যদি এর কিছুটাও ধরতে পারি, তবে রপ্তানি আয়ে বড় ধরনের ধাক্কা দিতে পারব।’

মন্ত্রী বলেন, ‘তৈরি পোশাক আমাদের মেজর আইটেম হলেও সরকার শুধু এ খাত নিয়েই বসে নেই। করোনার কারণে অনেক নতুন নতুন পণ্য রপ্তানির সুযোগ তৈরি হয়েছে। পিপিই, মাস্ক রপ্তানি  হচ্ছে। দেশের আইসিটি, চামড়া, ওষুধসহ হালকা প্রকৌশল পণ্য রপ্তানিতে নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।’ ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলো যাতে ঘুরে দাঁড়াতে পারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সেসব খাতের জন্য প্রণোদনা, নগদ সহায়তা ছাড়াও নানা ধরনের নীতি-সহায়তা ঘোষণা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘রপ্তানিবৈচিত্র্যের দিকে লক্ষ রেখে হালকা প্রকৌশল পণ্যকে প্রোডাক্ট অব দ্য ইয়ার ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলাদেশের তৈরি বাইসাইকেল বিশ্বে অনেক জনপ্রিয়। করোনার মধ্যেও দেশের ওষুধশিল্পে ইতিবাচক রপ্তানি আয় হয়েছে। যেটা আমাদের বড় ঝামেলা ছিল, ট্যানারি নিয়ে, এ বছর ট্যানারিগুলো ফিরে আসছে। চট্টগ্রামের একটি ফ্যাক্টরি চামড়া রপ্তানির জন্য আন্তর্জাতিক সনদ পেয়েছে।’ টেলিফানে এই সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় টিপু মুনশি জানান, চামড়া খাত নিয়ে বুধবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার আলোচনা হয়েছে। সাভারে যেসব ট্যানারি গেছে, তাদের নিজস্ব উদ্যোগে ইটিপি (ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট) করার অনুমতি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এসব উদ্যোগের ফলে চামড়া খাতেও রপ্তানি বাড়বে বলে আশা করেন তিনি। টিপু মুনশি বলেন, নতুন নতুন পণ্যের পাশাপাশি রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য নতুন নতুন গন্তব্য খোঁজা হচ্ছে। চীনের বাণিজ্য সুবিধার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আমাদের ভালো সুযোগ রয়েছে চীনে রপ্তানির। এ ছাড়া প্রচলিত বাজার ইউরোপ-আমেরিকা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী ভারত, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা, এমনকি লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতেও বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে।’ বাংলাদেশের পণ্য বিশ্বব্যাপী ব্র্যান্ডিং করার পাশাপাশি নতুন বাজার অনুসন্ধানে কমার্শিয়াল কাউন্সিলরদের কাজে লাগানো হচ্ছে- এমনটি জানিয়ে টিপু মুনশি বলেন, ‘করোনা সংকটের মধ্যেও আমাদের মন্ত্রণালয়ের সচিব (বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিন) নিয়মিত অফিস করছেন এবং তার নেতৃত্বে একটি টিম দু-তিন মাস ধরে বিভিন্ন খাতে সংস্কার আনতে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে। বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত কমার্শিয়াল কাউন্সিলরদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের জন্য একটি কর্মপদ্ধতিও তৈরি করে দিয়েছেন তিনি। আমরা মনে করি, কমার্শিয়াল কাউন্সিলরদের দক্ষতা বাড়াতে পারলে আমাদের বাণিজ্যে সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।’ পরিবর্তিত বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে জানিয়ে টিপু মুনশি বলেন, ‘আমরা খুব দ্রুত ভুটানের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে যাচ্ছি। এটি আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য গেছে। সেটি হলেই আশা করছি চুক্তি সম্পন্ন করা যাবে।’ পার্শ্ববর্তী ভারত, নেপালসহ অন্য দেশগুলোর সঙ্গেও মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হতে পারে বলে জানান মন্ত্রী। ব্যবসায়ী থেকে মন্ত্রীর দায়িত্বে নিয়োজিত এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ‘আমরা বেকারত্বের কথা বলছি, শ্রমিক ছাঁটাইয়ের কথা বলছি, কিন্তু আমাদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর জন্যও উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হবে। আমরা রপ্তানি আয়ের যে টার্গেট দিয়েছি, সেটি অর্জন করতে হলেও উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হবে। সে জন্য আরও নতুন করে শ্রমিক নিয়োগ দিতে হবে। ফলে এ অবস্থা বেশি দিন থাকবে না। আমার বিশ্বাস কভিড-১৯ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য এগিয়ে যাবে। বড় ধরনের কোনো দুর্যোগ না হলে খুব দ্রুত দেশের বাণিজ্যিক পরিবেশে চাঙ্গা ভাব ফিরে আসবে।’ ‘চলমান পরিস্থিতিতে অনেকেই অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জের কথা বলছেন, তবে আমরা এর মধ্যেও অনেক সম্ভাবনা দেখছি’- বেশ দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর