শনিবার, ১৮ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

ব্যক্তিগত সহকারীর হাতে ফাহিম খুন, নেপথ্যে ডলার চুরি

আজ লাশ পাওয়া গেলে কাল দাফন

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

ব্যক্তিগত সহকারীর হাতে ফাহিম খুন, নেপথ্যে ডলার চুরি

মেধাবী উদ্যোক্তা এবং স্বপ্নবাজ প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ফাহিম সালেহকে (৩৩) নির্মমভাবে হত্যায় জড়িত ব্যক্তি কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান টাইরেস ডেভোন হ্যাসপিল (২১)। সে ফাহিমের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে কাজ করত। ফাহিমের ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্ট থেকে লাখ ডলার চুরি করেছিল এই টাইরেস। বিষয়টি জেনেছিলেন ফাহিম। সেই অর্থ ফেরত দেওয়ার একটি সমঝোতা করে টাইরেস ফাহিমের ফার্ম ছেড়েছিল। তবে পরবর্তীতে টাইরেস চুরি করা অর্থ ফিরিয়ে দেওয়ার অঙ্গীকার পালন করেনি। তদন্ত কর্মকর্তারা উল্লেখ করেছেন, ফাহিমকে অনুসরণ করে নিনজা স্টাইলে কালো পোশাকে যে ব্যক্তি ওই ভবনের এলিভেটর দিয়ে ফাহিমের অ্যাপার্টমেন্টের সামনে পর্যন্ত গিয়েই আঘাত করেছে বলে সিসিটিভিতে দেখা গেছে, সেই ব্যক্তি অর্থাৎ ঘাতকটি হচ্ছে টাইরেস। আর্থিক ফায়দা হাসিলের জন্যই ফাহিমকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে তদন্ত কর্মকর্তারা মনে করছেন। তবে এমন নৃশংসতার নেপথ্যে কারও মদদ রয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এদিকে ফাহিমের লাশ আজকের মধ্যে পাওয়া গেলে কাল দাফন করা হবে।

নিউইয়র্ক সিটির লোয়ার ম্যানহাটানে অভিজাত শ্রেনির একটি ভবনের সপ্তম তলায় ২.২৫ মিলিয়ন ডলারে কেনা অ্যাপার্টমেন্টে ১৩ জুলাই খুন হন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত টেক-গুরু ফাহিম। তারপরই খুনের মোটিভ উদ্ঘাটন ও ঘাতককে গ্রেফতার করতে মাঠে নামে পুলিশ বাহিনী। ওই ভবনের সিসিটিভিতে দেখা গেছে, জগিং শেষে ভবনের নিচতলা থেকে ইলেভেটরে সপ্তম তলায় ওঠার সময় ফাহিমের পেছনেই কালো পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তি স্যুটকেস হাতে ছিলেন। এদিকে মেডিকেল এক্সামিনার অফিস থেকে বৃহস্পতিবার বলা হয়েছে, ফাহিমের বুকে, গলা ও ঘাড়ে বেশ কয়েকবার ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এভাবেই তাকে হত্যার পর বৈদ্যুতিক করাত দিয়ে দেহ খন্ড খন্ড করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ফাহিমের পালিত কুকুর ছিল অ্যাপার্টমেন্টে। তবে তাকে আলাদা রুমে আটক করা অবস্থায় পাওয়া গেছে। ফাহিমের খন্ডবিখন্ড দেহ পলিথিনের ব্যাগে ভরে রাখার দৃশ্য দেখে সেই কুকুরটি গগনবিদারী চিৎকার দেয় এবং পরক্ষণেই নীরব হয়ে যায় বলে ওই এলাকার এক ব্যক্তি জানান।

ফাহিমের বাবা সালেহ আহমেদ পকিস্পি থেকে নিউইয়র্ক সিটির ব্রঙ্কসে এসেছেন স্ত্রীসহ। ফাহিমের বড় বোন এঞ্জেলা দুবাই থেকে ছুটে এসেছেন ছোট ভাইয়ের এই দুঃসংবাদ জেনেই। আর তদন্ত প্রক্রিয়ায় বিস্তারিত সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করছেন ছোট বোন রিফায়েত রিপি। পুত্র এবং ভাইয়ের শোকে কাতর এই পরিবার ১৬ জুলাই গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ঘাতক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পেলেই ফাহিমের আত্মা শান্তি পাবে এবং আমরাও স্বস্তি পাব।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ফাহিম সম্পর্কে গণমাধ্যমে যা বলা হচ্ছে, তার চেয়ে অনেক বেশি গুণে গুণান্বিত ছিলেন তিনি। নিজের চেয়ে অন্যের কল্যাণের কথাই বেশি ভাবতেন। ২০১৩ সালে বাংলাদেশে যাওয়ার পর ফাহিমের সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের বাক-বিতন্ডা হয়। মা-বাবা বলেছিলেন, বাংলাদেশের আবহাওয়া এতটাই গরম এবং সামাজিক পরিবেশ এতটাই জটিল, ফাহিম হয়তো তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারবে না। এর প্রতিবাদ জানিয়ে ফাহিম বলেছিলেন, ‘শুধু শুধু তোমরা নিজের দেশ সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করছ। আমার কিন্তু সবকিছুই ভালো লাগে। আমি চাই বাংলাদেশের উদ্যমী যুবসমাজের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে।’

ফাহিমের জন্ম সৌদি আরবে এবং চার বছর বয়সে মা-বাবার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। ফাহিমের বাবা সালেহ আহমেদ চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। তিনি কয়েক বছর আগে আইবিএমের উপদেষ্টা-প্রকৌশলী হিসেবে অবসর নেন। একমাত্র ছেলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ সালেহ আহমেদ এখন বাকরুদ্ধ। সদা হাসিখুশি ফাহিম কেন এমন নৃশংসতার শিকার-এ প্রশ্ন পরিবারের।

এদিকে রাইড শেয়ারিং জগতে খ্যাতি অর্জনকারী ‘পাঠাও’ এবং ‘গোকাডা’র জনক ফাহিমের আত্মার শান্তি কামনায় যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন সিটিতে ফাহিমের ভক্ত-অনুরাগী এবং ঘনিষ্ঠজনরা ভার্চুয়াল দোয়া-মাহফিলে মিলিত হচ্ছেন। ফাহিমের লাশ আজকের মধ্যে পাওয়া গেলে কাল পকিস্পিতে মুসলিম গোরস্থানে দাফন করা হবে। করোনা পরিস্থিতির কারণে লোকসমাগম এড়িয়ে চলার চেষ্টা করা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর