শনিবার, ১৮ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনায় রাষ্ট্রপতির ভাই, যুগ্ম প্রধান ও দুই ডাক্তারের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক

মহামারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ছোট ভাই মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) তিনি মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। রাষ্ট্রপতির নয় ভাই-বোনের মধ্যে আবদুল হাই ছিলেন অষ্টম। তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ মন্ত্রিসভা সদস্যগণ, সংসদ সদস্য, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। অন্যদিকে গতকাল করোনায় মারা গেছেন পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের যোগাযোগ উইংয়ের যুগ্মপ্রধান মো. লুৎফর রহমান তরফদার, ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডা. কোহেল করিম ও কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এস এম নূর উদ্দিন আবু আল বাকী রুমি। বঙ্গভবন সূত্রে জানা যায়, আবদুল হাইয়ের শরীরে করোনার উপসর্গ দেখা দিলে গত ২ জুলাই নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে তার করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে। পরে ৫ জুলাই তাকে ঢাকা সিএমএইচের আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে আইসিইউতে রাখা হয়। সেখানেই শুক্রবার রাতে তার মৃত্যু হয়। ১৯৫৩ সালে জন্ম নেওয়া মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হক সরকারি কলেজের সাবেক সহকারী অধ্যাপক। তিনি পরিবার-পরিজন নিয়ে ঢাকায় থাকতেন। রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব পদে কাজ করতেন। আবদুল হাই মিঠামইন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার, বিআরডিবির সভাপতি, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ?‘প্রবাহ’-এর সভাপতিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

রাষ্ট্রপতির ভাই মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাইয়ের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি প্রয়াতের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান। এ ছাড়া তার মৃত্যুর খবরে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে বলে জানা গেছে।

রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাইকে রবিবার বাদ জোহর মিঠামইনে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে। রাষ্ট্রপতি রবিবার ছোট ভাইয়ের মরদেহ নিয়ে গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার কামালপুর যাবেন। ওই দিন বিকাল ৩টায় জানাজা শেষে তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাবা-মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হবে।

মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাইয়ের মৃত্যুতে আরও শোক জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে এম আবদুল  মোমেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান, ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম প্রমুখ। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল হাই ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব শফিকুল বাহার মজুমদার টিপুসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। 

যুগ্ম প্রধানের মৃত্যু : করোনায় আক্রান্ত হয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের যোগাযোগ উইংয়ের যুগ্ম প্রধান মো. লুৎফর রহমান তরফদার মারা গেছেন। ঢাকার আনোয়ার খান মডার্ন  মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সোয়া ১টার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্œা ইলাইহি রাজিউন)। সরকারের যুগ্ম প্রধান লুৎফর রহমান ৮৬ ব্যাচের ইকোনমিক ক্যাডারের কর্মকর্তা ছিলেন। সাবেক বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস ইকোনমিক অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি ছিলেন তিনি। মো. লুৎফর রহমান তরফদার করোনায় আক্রান্ত হয়ে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। ধীরে ধীরে তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছিল। নিয়মিত খাবারও খাচ্ছিলেন। বৃহস্পতিবার হঠাৎ করেই শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকায় ভেন্টিলেটরে  নেওয়া হয় তাকে। পরে রাত ১টার দিকে তিনি মারা যান।

দুই চিকিৎসকের মৃত্যু : করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডা. কোহেল করিম মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গতকাল বিকাল সোয়া ৩টায় পপুলার হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ডা. কোহেল করিম ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ২২তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। অন্যদিকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এস এম নুর উদ্দিন আবু আল বাকী রুমি (৪৮) করোনায় আক্রান্ত হয়ে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত তিনটায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে মারা যান। তার বাড়ি মেহেরপুরের দারিয়াপুর গ্রামে। গত ৩ জুলাই তার করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়। ওই রাতেই তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়।

সর্বশেষ খবর