রবিবার, ১৯ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

মশিয়ালীতে গুলিবর্ষণের স্থানে নিহতদের দাফন

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

খুলনার খানজাহান আলী থানার মশিয়ালী গ্রামে গুলিবর্ষণের ঘটনায় নিহত তিনজনের লাশ দাফন করা হয়েছে। গ্রামের যে স্থানে তাদের গুলি করা হয়েছিল, সেখানেই তাদের দাফন করেছে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী। তবে গণপিটুনিতে নিহত জিহাদ  শেখের লাশ এখনো গ্রামে নেওয়া হয়নি। হাসপাতালেও লাশ নিতে আসেনি তার স্বজনরা। পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কায় ময়নাতদন্তের পর লাশ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লাশঘরে রাখা হয়েছে। খুলনা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. খ ম শফিউজ্জামান এ তথ্য জানান। এদিকে হত্যাকান্ডের ঘটনায় জড়িত জাকারিয়া হোসেনের ভাই শেখ জাফরিনকে গতকাল বিকালে যশোরের বাঘারপাড়া থেকে আটক করেছে পুলিশ। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার খন্দকার লুৎফুল কবির এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ ছাড়া শুক্রবার গ্রেফতার হওয়া জাহাঙ্গীরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অপরদিকে মূল অভিযুক্ত জাকারিয়া হোসেনকে খানজাহান আলী থানা আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল এক বিবৃতিতে নগর আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ বলেছেন, মশিয়ালীতে সংঘটিত ঘটনা দলীয় কোনো বিষয় নয়। ঘটনাটি ব্যক্তিকেন্দ্রিক, যার দায়ভার ওইসব ব্যক্তির, দলের নয়। নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে জড়িতদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানান। জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে জাকারিয়া ও তার ভাইদের গুলিবর্ষণে নজরুল ফকির (৬৫), গোলাম রসুল (৩৫) ও সাইফুল ইসলাম (২৭) নিহত হন। এতে ক্ষিপ্ত এলাকাবাসী প্রতিপক্ষের জিহাদ নামের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করে। এ ছাড়া হত্যাকারী সন্দেহে কয়েকজনের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দা মুজিবর শেখ বলেন, শুক্রবার রাতে মশিয়ালী মাদ্রাসা চত্বরে জানাজা শেষে গুলিবর্ষণের ঘটনাস্থল জাকারিয়ার ভাই জাফরিন শেখের বাড়ির পাশে নজরুল ফকির, গোলাম রসুল ও সাইফুল ইসলামকে দাফন করা হয়। এই জায়গাটা মাদ্রাসার হলেও দীর্ঘদিন তা জাফরিনের দখলে ছিল। এ স্থানে স্মৃতি রক্ষায় মশিয়ালী আদর্শ যুব সংঘের অবকাঠামো তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এদিকে মশিয়ালীর ঘটনায় জড়িত নতুন কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার কানাই লাল সরকার জানান, আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত। তবে এ ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানিয়েছেন নগর আওয়ামী লীগ নেতারা। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, জাফরিনের কর্মকান্ডের কারণে আগেই তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আর মশিয়ালীতে সাধারণ মানুষকে গুলি করে হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় জাকারিয়াকে থানা আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ কোনো সন্ত্রাসী বা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডকে প্রশ্রয় দেয় না। সুতরাং জাকারিয়া, জাফরিন ও মিলটনের মতো চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। নেতৃবৃন্দ এ ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের আহ্বান জানান। বিবৃতিদাতারা হলেন- শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এমপি, নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সিটি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক, খুলনা-২ আসনের এমপি শেখ সালাহ্ উদ্দিন জুয়েল, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশীদ, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, নগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এম ডি এ বাবুল রানা, জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুজিত কুমার অধিকারী।

মামলা দায়ের : এদিকে হত্যাকান্ডের ঘটনায় বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা জাকারিয়া ও তার দুই ভাই জাফরিন এবং মিলটনসহ ২২ জনকে আসামি করে গতকাল রাতে খানজাহান আলী থানায় ট্রিপল হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার বাদী নিহত সাইফুল ইসলাম শেখের বাবা সাইদুল শেখ। মামলার এজাহারে ১৫/১৬ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর