শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২১ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

পাচারের টাকায় ব্যাংকের পরিচালক পাপুল

কুয়েতে আটকাদেশের মেয়াদ বাড়ল দুই সপ্তাহ

আলী রিয়াজ

কুয়েত থেকে পাচার করা টাকায় বাংলাদেশে ব্যাংকের মালিক হয়েছেন পাপুল। অর্থ পাচারের অভিনব পন্থা ব্যবহার করে ব্যাংকের পরিচালকরা বিদেশ থেকে টাকা না এনেই প্রবাসী বিনিয়োগ দেখিয়েছেন। স্থানীয়দের অর্থ পাচারে সহায়তা করে ব্যাংকের প্রবাসী উদ্যোক্তা হয়েছেন এই পাপুল। বাংলাদেশি নাগরিকের অর্থে ব্যাংকের শেয়ার কিনে প্রবাসী বিনিয়োগ দেখানো পাপুলের অর্থ পাচার তদন্ত করছে বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইনটেলিজেন্ট ইউনিট-বিএফআইইউ। ঋণ অনিয়মের সঙ্গে একই ধরনের অভিযোগে ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যানকে পদচ্যুত করা হয়। এ ছাড়া আরেক উদ্যোক্তা পরিচালকের বিরুদ্ধে ১৪৭ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ দুদক তদন্ত করেছিল। কুয়েতে এমপি পাপুল গ্রেফতার হওয়ার পর তাকে পরিচালকের পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে ব্যাংকের বর্তমান পর্ষদ। এদিকে কুয়েতের উচ্চ আদালত শহীদ ইসলাম পাপুলের আটকাদেশের মেয়াদ আরও দুই সপ্তাহ বৃদ্ধি করেছে। জানা গেছে, প্রবাসীদের জন্য বিশেষ কোটায় এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক-এনআরবিসি অনুমোদন পাওয়া প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম উদ্যোক্তার একজন পাপুল। সরকার প্রবাসীদের জন্য বিশেষ সুবিধা দিয়ে অনুমতি দেওয়ার পর শুরু থেকেই নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন ব্যাংকের একাধিক পরিচালক। এ অনিয়মের অন্যতম হোতা হয়ে ওঠেন পাপুল। ব্যাংক-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রবাসীদের উদ্যোগে গঠিত এনআরবিসি ব্যাংককে ২০১৩ সালে অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ফরাছত আলী ছিলেন ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান। ওই সময়ে তিনি বিভিন্ন দেশের বসবাসরত প্রবাসী ব্যবসায়ীদের ব্যাংকটির পরিচালক করেন। এর মধ্যে কুয়েত প্রবাসী শহীদ ইসলাম পাপুল ব্যাংকটির পরিচালক হন। পাপুল ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠার সময় স্পন্সর বা উদ্যোক্তা হিসেবে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের ২ কোটি শেয়ারের মালিকানা কেনেন। বর্তমানে তার শেয়ার রয়েছে প্রায় ২ কোটি ৩২ লাখ। এটি ব্যাংকটির মোট শেয়ারের সাড়ে ৪ শতাংশ। এ পরিমাণ শেয়ারের মূল্য ২ হাজার কোটি টাকার বেশি। স্পন্সর হিসেবে পাপুলের কোম্পানি দেখানো হয় মারাফি কুয়েতিয়া গ্রুপ। গ্রুপটির কুয়েতে প্রকৌশল, ঠিকাদারি, পরিবহন খাতের কাজ পরিচালনার কথা বলা হয়। নিজেকে কুয়েতের স্থায়ী নাগরিক হিসেবেও বর্ণনা করা হয় তার স্পন্সর মালিকানায়। পাপুল ২ হাজার কোটি টাকার শেয়ার কেনেন বাংলাদেশে অর্থ পাচারের অভিনব পন্থা ব্যবহার করে। বিএফআইইউর একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কুয়েত থেকে টাকা না এনে বাংলাদেশি বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা নিয়ে নিজের নামে শেয়ার কেনেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে অর্থ পরিশোধ করেন একাধিক দেশে। কুয়েত থেকে সে অর্থ বাংলাদেশি নাগরিকদের পরিশোধ করেন; যা দুবাই, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডে পরিশোধ করেন। বাংলাদেশ থেকে ব্যাংক ঋণ নিয়ে পালিয়ে যাওয়া ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করেন। তাদের সংশ্লিষ্ট দেশে অর্থ পরিশোধ করেন। বাংলাদেশের ঋণখেলাপিরা এখানে ব্যাংকের শেয়ার কিনে দেন পাপুলকে। পাপুল পরিশোধ করেন সেই খেলাপির পছন্দের দেশে। এভাবে প্রবাসী বিনিয়োগ দেখানো হয়েছে যা পুরোপুরি পাচার। কুয়েত থেকে এভাবে ভিন্ন দেশে অর্থ পাচারের অভিযোগও তদন্ত করা হচ্ছে। বিএফআইইউ তদন্ত করছে পাপুলের এভাবে অর্থ পাচারের ঘটনা। কুয়েতে গ্রেফতারের পর বিএফআইইউ পাপুল বা তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব তলব করে। বিএফআইইউ তার অর্থ পাচারের বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। আর দুর্নীতি দমন কমিশন এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকেও তার বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। এ ছাড়া ব্যাংকের পরিচালকের পদ থেকেও তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

এনআরবিসি ব্যাংকের আরেক পরিচালক প্রবাসী বিনিয়োগকারী হিসেবে লন্ডনের ব্যবসায়ীর একই ধরনের অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে ১৪৭ কোটি টাকা এভাবে পাচারে অভিযোগ দুদক তদন্ত করেছে। তবে অজ্ঞাত কারণে সে তদন্ত থেমে আছে। এ ছাড়া অনিয়ম, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অভিযোগ মাথায় নিয়ে ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদত্যাগ করেন। পরে পর্ষদের সব কমিটি নতুনভাবে গঠন করা হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার ফরাছত আলীকে সরিয়ে নতুন দায়িত্ব দেওয়া হয় তমাল এস এম পারভেজকে। সম্প্রতি ফরাছত আলীকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে দুই বছর যে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক পদ থেকে তাকে নিষিদ্ধ করে পদক্ষেপ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

কুয়েতে পাপুলের আটকাদেশের মেয়াদ বাড়ল : অর্থ ও মানব পাচারের অভিযোগে কুয়েতে আটক লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য কাজী শহীদ ইসলাম পাপুলের আটকাদেশ আরও দুই সপ্তাহ বাড়িয়েছে দেশটির উচ্চ আদালত। এ ছাড়া এমপি পাপুলকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি মেজর জেনারেল শেখ মাজেন আল জাররা আল সাবাহকে তিন সপ্তাহের আটকাদেশ দেয় দেশটির উচ্চ আদালত। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে কুয়েতের আরও দুই নাগরিককে আরও দুই সপ্তাহের আটকাদেশ দেয় আদালত।

সর্বশেষ খবর