বুধবার, ২২ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

হাসপাতালবিমুখ রোগীরা

করোনাভাইরাস আক্রান্ত কিংবা সাধারণ রোগী কেউই যাচ্ছে না হাসপাতালে

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনাভাইরাস মহামারীতে দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা ও প্রতারণায় হাসপাতালবিমুখ হচ্ছে রোগীরা। করোনা আক্রান্ত রোগীরা বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সাধারণ রোগীরাও যাচ্ছেন না হাসপাতালে। আউটডোর, প্যাথলজি রোগী শূন্য হয়ে পড়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশীদ ই মাহবুব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করোনাভাইরাস মহামারীতে স্বাস্থ্য খাতের ভঙ্গুর চিত্র উঠে এসেছে। যাদের সার্বিক সমন্বয় করে চিকিৎসার মান এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল তারা তদবিরে ব্যস্ত। এই করোনা মহামারীর সময়ে স্বাস্থ্য খাতে দুর্বৃত্তায়ন চলছে। এ জন্য আস্থা হারাচ্ছে রোগীরা। তিনি আরও বলেন, করোনা চিকিৎসায় সরকার বেসরকারি হাসপাতালকে এগিয়ে আসার কথা বলেছে। রোগী হাসপাতালে যাবে চিকিৎসাসেবা নিতে। হাসপাতালের অনুমোদন আছে কিনা সেটা রোগীর জানার বিষয় নয়। এ বিষয়ে তদারকি করবে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও মন্ত্রণালয়। কিন্তু তাদের এই ব্যবস্থাপনায় সমন্বয় নেই। কড়া নজরদারির কোনো ব্যবস্থা নেই। এসব অব্যবস্থাপনা দুর্নীতির সুযোগ নিয়ে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করছে প্রতারক চক্র। করোনা চিকিৎসায় শুরু থেকেই সরকারি হাসপাতালে অব্যবস্থাপনার ঘটনা ঘটে। এরপর বেসরকারি হাসপাতালকে করোনা আক্রান্ত রোগী ভর্তির অনুমতি দেওয়া হয়। হাসপাতালে সাধারণ রোগী, করোনা রোগীদের জন্য জোন আলাদা না করেই একসঙ্গেই চলতে থাকে চিকিৎসা। এতে করে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে আক্রান্ত হতে থাকেন সাধারণ রোগীরা। ফলে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া হাসপাতালের চৌকাঠে যাচ্ছেন না রোগীরা। ঢাকা শিশু হাসপাতালের অধ্যাপক শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মো. হানিফ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, একের পর এক প্রতারণায় রোগীরা আস্থা হারিয়ে ফেলছে। করোনা আক্রান্ত কিংবা সাধারণ রোগীরা হাসপাতাল বিমুখ হয়ে পড়েছে। সরকারি হাসপাতালে অব্যবস্থাপনা, বেসরকারি হাসপাতালে প্রতারণা। মানুষ চিকিৎসার জন্য যাবে কোথায়। প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কিংবা প্রশাসনিক কর্মকর্তা কেউই দেশে চিকিৎসা নেন না। যে কোনো অসুবিধাতে তারা বিদেশে চিকিৎসার জন্য যান। বিপাকে পড়ে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষ। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, দেশে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ১০ হাজার ৫১০ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১ লাখ ১৫ হাজার ৩৯৯ জন। আক্রান্ত রোগীদের অধিকাংশই বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেইফটি, রাইটস অ্যান্ড রেসপনসিবিলিটিস (এফডিএসআর) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আবুল হাসনাৎ মিল্টন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কভিড-১৯ রোগের চিকিৎসা নিয়ে শুরু থেকেই অব্যবস্থাপনা দেখা যাচ্ছে। এখন করোনা আক্রান্ত কিংবা সাধারণ রোগী কেউই চিকিৎসা পাচ্ছেন না। এর পরিণতিতে সমগ্র চিকিৎসাসেবা ব্যবস্থায় আস্থার সংকটে ভুগছে। দেশে করোনা সংক্রমণের সম্ভাব্য পরিস্থিতি অনুধাবনে ব্যর্থ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর। এনিয়ে তাদের কোনো প্রস্তুতিই ছিল না। তড়িঘড়ি করে পরিস্থিতি সামলাতে গিয়ে নন-কভিড রোগীদের চিকিৎসাসেবাও ব্যাহত হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর