বুধবার, ২২ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

শিগগিরই চার্জশিট সাবরিনা আরিফের বিরুদ্ধে

নিজস্ব প্রতিবেদক

শিগগিরই চার্জশিট সাবরিনা আরিফের বিরুদ্ধে

জেকেজি চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরীকে রিমান্ডে এনে দুই দফা জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারণার পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ মিলেছে। থানা পুলিশের পর তার স্বামী আরিফ চৌধুরীকেও দ্বিতীয় দফা রিমান্ডে এনে সেসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। শিগগিরই এ দম্পতির বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তারা জানান, সাবরিনার কাছ থেকে যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে। রিমান্ডে তার স্বামীর সঙ্গে তাকে বিভিন্ন সময় মুখোমুখি করা হয়েছে। অপরাধের সঙ্গে উভয়ের যথেষ্ট সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। দুজনই অভিযুক্ত হিসেবে প্রমাণিত হয়েছেন।

তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আরিফ ও সাবরিনার মোবাইল ফোন ঘেঁটে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। যদিও তারা আগেই তাদের মোবাইল ফোন থেকে বিভিন্ন অ্যাপস ডিলিট (মোছা) করে দেন। এরপর প্রযুক্তির সহায়তায় সেগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, অনেক প্রভাবশালীর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তাদের। তাদের ধারণা ছিল, বিপদে পড়লে ওই ব্যক্তিরা তাদের পাশে দাঁড়াবেন। এসব ব্যক্তির প্রভাব খাটিয়েই আরিফ স্বাস্থ্য অধিদফতরের লোকজনকে তটস্থ করে রাখতেন। এ কারণে জেকেজির জন্য পিপিই, গ্লাভসসহ মেডিকেল সরঞ্জামও প্রয়োজনের তুলনায় বেশি নিতে পেরেছিলেন। পরে এসব মালামাল তিতুমীর কলেজ থেকে উদ্ধার করা হয়। ফেসবুক মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর ও চিকিৎসকদের একটি সংগঠনের প্রভাবশালী কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন সাবরিনা। নিজের গ্ল্যামার আর ফেসভ্যালুকে পুঁজি করে এসব ব্যক্তির সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলেছিলেন সাবরিনা। এ ধরনের অন্তত ১০ জনের নামের তালিকা এখন তাদের হাতে। এদের অনেকেই আবার সাবরিনার প্রতারণার বিষয়টি জেনে গেলে তাদেরও ম্যানেজ করা হয়। কাউকে টাকা দিয়ে আবার কাউকে মুখের কথায় বশ করেন সাবরিনা। কয়েকজনের কাছে সাবরিনার বিপুল পরিমাণ টাকাও জমা রয়েছে বলে তারা জানতে পেরেছেন। সাবরিনা ও আরিফের দেওয়া তথ্যের সূত্র ধরে ওই সব ব্যক্তির ওপর নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। আর যেখানে করোনার নমুনা পরীক্ষার নামে ভুয়া রিপোর্ট তৈরি করা হতো, সেসব ল্যাপটপ জব্দ করা হয়েছে। তারা কাদের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন, তাদের নথি এবং এগুলোর মধ্যে কোন কোন নমুনা স্বাস্থ্য অধিদফতরে পাঠানো হয়েছিল, আর কোনগুলো পাঠানো হয়নি সেসব তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা। যাদের যাদের নমুনা পরীক্ষা না করেই মনগড়া রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে, সেসব ভুক্তভোগীরও একটি তালিকা করা হয়েছে। তৈরি করা ভুয়া রিপোর্টের ফরম্যাট ও গ্রাফিকস ডিজাইন জেকেজির সাবেক কর্মী হুমায়ুন কবিরের হাতে বানানো বলেও স্বীকারোক্তি নেওয়া হয়েছে। কার কার কাছ থেকে নমুনা পরীক্ষার নামে কত করে টাকা নেওয়া হয়েছে সেই হিসাবের খাতাও এখন গোয়েন্দাদের হাতে। প্রতারণার টাকা কোথায় রাখা হয়েছে এবং কোন ক্ষেত্রে ব্যয় করা হয়েছে সেই বিল-ভাউচারও সংগ্রহ করেছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। জেকেজির স্বাস্থ্যকর্মীদের দেওয়া প্রশিক্ষণে পাঁচ প্রশ্নের উত্তর নিয়েই কীভাবে করোনার রিপোর্ট তৈরি করতে হয় সাবরিনার সেই কৌশলের তথ্যও জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে। প্রতারণার বিষয়গুলো কারা কারা জানতেন তাদেরও নাম-পরিচয় রেকর্ড করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম-কমিশনার মাহবুব আলম জানান, সাবরিনা ও আরিফকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জেকেজির ভয়াবহ প্রতারণার যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়ায় তাদের অভিযুক্ত করে দ্রুত আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়া হবে।

১৫ হাজার ৪৬০টি ভুয়া কভিড-১৯ রিপোর্ট দেওয়ার অভিযোগে ২৩ জুন প্রধান নির্বাহী আরিফুল হক  চৌধুরীসহ জেকেজির ছয় কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর একই অভিযোগে ১২ জুলাই প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও আরিফের স্ত্রী ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরীকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। পরদিন তাকে ঢাকার আদালতে হাজির করে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। ১৭ জুলাই দ্বিতীয় দফায় তাকে দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১৫ জুলাই তার স্বামী আরিফকে চার দিনের রিমান্ডে আনা হয়। তাকে প্রথম দফায় ২৪ জুন চার দিনের রিমান্ডে নিয়েছিল তেজগাঁও থানা পুলিশ। ডিবি পুলিশের রিমান্ড শেষে সাবরিনা ও আরিফ দুজনই এখন কারাগারে।

সর্বশেষ খবর