বুধবার, ২২ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনাকালেও থামেনি রূপপুরে কর্মযজ্ঞ

জিন্নাতুন নূর

করোনাকালেও থামেনি রূপপুরে কর্মযজ্ঞ

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্পের কাজ বাধাগ্রস্ত হলেও মহামারীতে থামেনি সবচেয়ে ব্যয়বহুল রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ। এমনকি এই বিদ্যুৎ প্রকল্প সাইটে চলমান নির্মাণ কাজের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রাশিয়াতেও এগিয়ে চলছে প্রকল্পটির প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি তৈরির কাজ। ১ লক্ষাধিক কোটি টাকারও বেশি অর্থে নির্মাণাধীন এ প্রকল্পের ৩০ শতাংশ কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে বলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে নিশ্চিত করেছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা। আশা করা হচ্ছে ২০২৩ সালের  প্রথম ভাগেই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রথম ইউনিটের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে পরীক্ষামূলকভাবে সরবরাহ করা হবে। আবার একই বছরের শেষ ভাগে দ্বিতীয় ইউনিটের ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হবে। রুশ সরকারের কারিগরি ও আর্থিক সহযোগিতায় নির্মাণাধীন রূপপুর প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর গত ১১ জুলাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণকাজের সর্বশেষ অবস্থা পরিদর্শন করেন। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে সব কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। পিক আওয়ারে গত সপ্তাহে সাড়ে ৮ থেকে ১০ হাজারের মতো জনবল এ প্রকল্পে কাজ করেছে। আমরা এখন সরকার ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রকল্প এলাকায় কাজ করছি। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। আবার ঠিকাদারের ব্যয়ও চুক্তি অনুযায়ী ঠিক থাকবে, অর্থাৎ প্রকল্প ব্যয় আপাতত বাড়ার কোনো আশঙ্কা নেই। প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা জানান, সর্বশেষ গত সপ্তাহে টেকনিক্যাল কন্ট্রোল প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে রাশিয়ার ভলগাদন্সকে ‘এইএম টেকনোলজি’ ‘এটোমান’ কারখানায় প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের জন্য প্রস্তুতকৃত রিয়্যাক্টর প্রেসার ভেসেল এবং একটি বাষ্প জেনারেটরের হাইড্রোলিক টেস্ট শেষ হয়েছে। এটি প্রকল্পটি নির্মাণের গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ। এ ছাড়া প্রথম ইউনিটের চারটি স্ট্রিম জেনারেটরের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় ইউনিটটির স্ট্রিম জেনারেটরের ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী অক্টোবরের মধ্যে এর শিপমেন্ট হবে। ইতিমধ্যে ইউনিট-১-এর প্রেসারাইজারের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে এবং তা বাংলাদেশে শিপমেন্টের উদ্দেশ্যে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর বাইরে আগের নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী এ বছর প্রকল্পের অন্য যেসব যন্ত্রপাতির আসার কথা ছিল সেগুলোও সময়মতো পৌঁছে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ মাসের মধ্যে প্রকল্পটির প্রথম ইউনিটের রিঅ্যাক্টরের কনস্ট্রাকশনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভৌত অবকাঠামোর ইনার কনটেনমেন্টের (+৩৪ দশমিক ৫ মিটার) নির্মাণকাজ শেষ হবে। এ ছাড়া ‘এইএম   টেকনোলজি’ ‘প্রেত্রাজাভোদস্ক’ কারখানায় প্রথম ইউনিটের জন্য চারটি কুল্যান্ট পাম্পের সংযোজন এবং ওয়েল্ডিং শেষ হয়েছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান। বর্তমানে প্রকল্প এলাকায় সামাজিক সুরক্ষা মেনে, শরীরের তাপমাত্রা মনিটরিং করে এবং কারও উপসর্গ দেখা দেওয়া মাত্র আইসোলেশনে পাঠানোসহ যাবতীয় সুরক্ষাব্যবস্থা মেনে কাজ করা হচ্ছে। করোনা সংক্রমণের পরও দেশের বাইরে থেকে এ প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ জনবলের আসা বন্ধ হয়নি। বিদেশি নাগরিকের মধ্যে অধিকাংশই রাশিয়া থেকে এসেছেন। এ ছাড়া ভারত ও জার্মানি থেকে কিছু সাব-কন্ট্রাক্টর এসেছেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, মহামারীর মধ্যেও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্পকাজ পুরোদমে চলছে। আর প্রকল্পকাজ পুরোদমে চলায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে বলেও আশা করছেন বিজ্ঞান সচিব। রূপপুর প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি তৈরিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান এটমসট্রয়এক্সপোর্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট সের্গেই লাসটচকিন সম্প্রতি জানান, স্বাস্থ্য ও মহামারী নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিধি কঠোরভাবে অনুসরণ করে প্রকল্পের কাজ পরিচালিত হচ্ছে। সাইটে প্রবেশের প্রতিটি প্রবেশদ্বার ছাড়াও অফিস বিল্ডিং ও ক্যান্টিনে প্রবেশকালেও দূর থেকে প্রতিটি লোকের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হচ্ছে। সব কক্ষ ও যানবাহনগুলোয় পরিচালিত হচ্ছে বিশেষ পরিচ্ছন্নতা ও জীবাণুনাশক কার্যক্রম। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দেওয়া হয়েছে মাস্ক, গ্লাভস, স্যানিটাইজার। এ ছাড়া চিকিৎসকরা সরাসরি নির্মাণ এলাকায় কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন।

সর্বশেষ খবর